সবাই চলে গেছে, আপনি বাকি...কী করবেন?
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির সময়টায় চাকরির বাজারে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সংকটকালীন সময়ে অসংখ্য মানুষ চাকরি হারিয়েছেন, কেউবা কর্মস্থল পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন কিংবা স্বেচ্ছায় নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। এক জরিপে দেখা গেছে, চলতি বছরে সারা বিশ্বে ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষ তাদের বর্তমান চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। মহামারির প্রকোপ কিছুটা কমে আসায়, নতুন পরিবেশে, নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার লক্ষ্যেও এই সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন তারা। কিন্তু যেসব কর্মী বহুদিন যাবত একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন, যারা সহসাই কর্মস্থল বদলাতে আগ্রহী নন, তাদের অবস্থাটা কেমন দাঁড়াবে?
দীর্ঘদিনের সহকর্মীদের হারানোর পর, নতুন কর্মীদের ভিড়ে আপনার নিজেকে অচেনা লাগতে শুরু করে। ওই মুহূর্তে মনে হতে পারে, আপনাকে আসলে সৃজনশীল, কৌশলী বা ঝুঁকি নিতে আগ্রহী কোনো কর্মী হিসেবে ধরা হচ্ছে না; স্রেফ পুরনো কর্মী হিসেবে আপনি ওই প্রতিষ্ঠানে টিকে আছেন। তাছাড়া, আপনার প্রতিষ্ঠানটি যদি নতুন কর্মীদের নিয়ে অত্যধিক ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন নিজের মধ্যে হীনম্মন্যতাবোধও চলে আসতে পারে। একটি টিমে অনেক নতুন কর্মী যোগ দেওয়ার পর, অবধারিতভাবে কাজের পরিবেশও বদলে যায়।
তাই, হুট করেই যদি এমন একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, যেখানে আপনিই টিমের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সদস্য; তখন নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে নিচের চারটি কৌশল অবলম্বন করতে পারেন।
পরিবর্তন মেনে নেওয়ার জন্য নিজেকে সময় দিন
যখন দেখবেন সহকর্মীরা চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন; তখন আপনারও নতুন সুযোগ খোঁজার কথা মনে হতে পারে। সহকর্মীরা চলে গেলে নিজেকে সামাজিকভাবেও বিচ্ছিন্ন মনে হতে পারে। আপনি নিজেও কেন তখন চাকরি ছাড়লেন না, ভবিষ্যতে তা নিয়ে মনের মধ্যে অনুতাপ জাগতে পারে। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যুক্তি দিয়ে সবকিছু চিন্তা করুন আপনার পেশাগত জীবনের লক্ষ্য কী এবং কোন বিষয়গুলো সেখানে গুরুত্ব পাচ্ছে।
এবার নিজের যোগ্যতা ও কর্মস্থলে বর্তমান পদমর্যাদার বিষয়টি চিন্তা করুন। এর পেছনে আপনার আরও শ্রম দেওয়া প্রয়োজন কিনা ভাবুন। একই সময়ে আপনার নিজস্ব মূল্যবোধের সাথে কাজের জায়গা খাপ খাওয়াতে পারছেন কিনা, সেটিও বিবেচনা করতে হবে। যদি মনে হয়, আরেকটু চেষ্টা করলেই আপনার মধ্যে আরও অভিযোজন ক্ষমতা চলে আসবে, তাহলে বর্তমান কর্মস্থলের উপরেই ভরসা করতে পারেন।
প্রধান যে বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, তা হলো, কাজে নামার আগে নিজের অন্তর্দৃষ্টি ও পর্বেক্ষণ ক্ষমতা ব্যবহার করা। তাহলেই আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন, নিয়োগকর্তা আপনার প্রতিভাকে গুরুত্ব দিতে এবং ক্যারিয়ারকে সুযোগ দিতে আগ্রহী কিনা।
নতুনভাবে পরিচিত হন
নতুন নিয়োগ দেওয়া কর্মীদের অবশ্যই প্রতিটি টিমের অন্যান্যদের সাথে এবং কাজের পরিবেশ-সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে। তারা একে অপরের সাথে আইডিয়া আদান-প্রদান করতে চাইবে। তাহলে আপনিই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন? এই সময়টায় আপনিও নতুনদের সাথে পরিচিত হতে শুরু করলে, একসঙ্গে বিভিন্ন কৌশল উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে, যা আপনাকে আরও অগ্রসর করে তুলবে এবং প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি করবে।
শিক্ষক এবং ছাত্র, দুটোই হন
নিজে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি, নতুন সহকর্মীদেরকে কাজ বুঝিয়ে দিতে সাহায্য করুন। এতে করে আপনার মধ্যে নেতৃত্বদানের মনোভাব গড়ে উঠবে এবং অফিসের কাজে ছন্দ ফিরে আসবে। একই সাথে আপনিও নতুন সহকর্মীদের কাছ থেকে শিখতে পারেন, তাদের অভিজ্ঞতা শুনতে পারেন। তবে প্রতিষ্ঠানের একজন বিজ্ঞ তত্ত্বাবধায়ক এবং শিক্ষানবিশের ভূমিকা একই সাথে পালনের সময়, সচেতনভাবে প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখবেন, আপনি আলোচনার দরজা খোলা রাখলে, নতুন সহকর্মীদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠবেই।
আত্মতুষ্টি নয়, কর্মদক্ষতায় মনোযোগ দিন
পরিবর্তনকে আলিঙ্গন করতে উপরের কৌশলগুলো অবলম্বন করার পরেও, আপনার মধ্যে অসন্তুষ্টি থাকতে পারে। মনে হতে পারে, আপনি তাদের সমকক্ষ নন। এই সন্দেহ যে সবসময় অমূলক, তা কিন্তু নয়।
দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার কিছু অসুবিধাও রয়েছে; বিশেষত, আপনার মধ্যে যদি বিরক্তি চলে আসে বা কাজের অনুপ্রেরণা হারিয়ে ফেলেন। অনেক সময় প্রতিষ্ঠানগুলো পুরনোদের চাইতে নতুন প্রতিভাবান কর্মীদের বেশি বেতন দেয়। আবার একই চাকরিতে বহুদিন কাজ করতে থাকলে আপনি হয়তো পদমর্যাদায় উপরে উঠতেই পারেন না। তাই বর্তমান কর্মস্থলেই যদি উন্নতির সুযোগ থাকে, তাহলে কখনোই ঝোঁকের বশে তা ছেড়ে যাবেন না।
পরিবর্তনশীল পরিবেশের মধ্যেই মানিয়ে নিন
কাজের লক্ষ্য, গতিশীলতা, কৌশল উদ্ভাবন ও তা কাজে লাগানো এবং সবার সাথে মিথস্ক্রিয়া করা- সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়। সময়ের সাথে সাথে একটি প্রতিষ্ঠানের কাজের গতি বদলে যায়, তাদের নীতি-নির্ধারণে পরিবর্তন আসে, আরও আধুনিক হয়ে ওঠে প্রতিষ্ঠানটি। তাই বর্তমানের প্রতিযোগিতামূলক সমাজে টিকে থাকতে চাইলে নিজের মধ্যেও একই গতিশীলতা নিয়ে আসা আবশ্যক। উল্লিখিত কৌশলগুলো অবলম্বন করলে কর্মস্থলে নিজেকে আরও দক্ষ ও উপযোগী করে তোলা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব।
- সূত্র: হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ