ব্যবসা বহুমুখীকরণে আরও শক্তিশালী হয়েছে তারা
দীর্ঘদিন ধরে একই খাতে ব্যবসা করে আসা ব্যবসায়ীদের সামনে এখন একটাই সমীকরণ—ব্যবসা বহুমুখীকরণ করা অথবা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া। এই সমীকরণ সামনে রেখে, ব্যবসায়িক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা গত চার দশকে আবাসন, হাসপাতাল, সিরামিক টাইলস, এমনকি বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতেও ব্যবসা বহুমুখীকরণ করেছেন।
এ ধরনের কৌশলগত ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত সময়ের সাথে তাদের বড় ও শক্তিশালী হতে সাহায্য করেছে।
রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় নেমেছে এনভয় গ্রুপ। এ ব্যবসায় আসার কারণ জানিয়ে গ্রুপটির চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেছেন: 'আরএমজির বাইরে নতুন ব্যবসায় আসার কারণ হলো, একটা ব্যবসা ঝামেলায় পড়লে অন্য ব্যবসা থেকে যেন সাপোর্ট পাই।'
পোশাক নির্মাতা ডিবিএল গ্রুপ এসেছে ওষুধ ব্যবসায়। গ্রুপটির ভাইস চেয়ারম্যান এমএ রহিম ফিরোজের মতে, ব্যবসার সম্প্রসারণ ধরে রাখার একটি মাধ্যম হলো বৈচিত্র্য।
মোহাম্মদী গ্রুপ বলছে, সময়ের প্রয়োজনেই তারা তথ্যপ্রযুক্তি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে পা রেখেছে।
তবে শান্তা গ্রুপের ব্যাপারটা আলাদা। পোশাক ব্যবসা যথেষ্ট হয়েছে ভেবে গ্রুপটি এই খাত থেকে সরে গেছে। শান্তা গ্রুপ এখন মনে করছে যে, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আরও অনেক কাজ করার আছে।
এই লেখা তৈরি পোশাকের এমন কিছু বড় নামের গল্প নিয়ে যারা অন্যান্য ব্যবসাতেও নিজেদের ছাপ ফেলেছে।
পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের তথ্য অনুসারে, এই খাত থেকে প্রায় ১০০টি কোম্পানি অন্য খাতে ব্যবসা বাড়িয়ে ব্যবসা বহুমুখীকরণ করেছে। তাদের কেউ কেউ ঈর্ষণীয় সাফল্যও অর্জন করেছে।
এনভয় গ্রুপ
দেশের বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারকগুলোর একটি এনভয় গ্রুপ। ১৯৮৪ সালে ছোট একটা কারখানা নিয়ে যাত্রা শুরু করে গ্রুপটি। সে সময় ওই কারখানা থেকে মাসে ৭ লাখ টাকার ব্যবসা হতো।
এখন এনভয় গ্রুপের কারখানার সংখ্যা ১৫টি। কোম্পানিটি এখন দেশের অন্যতম বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক।
গত তিন দশকে প্রধানত তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল উৎপাদন এবং সম্প্রতি টেক্সটাইল বিভাগের মাধ্যমে নাটকীয়ভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে এনভয় গ্রুপ।
এনভয় টেক্সটাইলস বিশ্বের প্রথম প্লাটিনাম সনদপ্রাপ্ত ডেনিম টেক্সটাইল মিল।
গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ছাড়াও গ্রুপটি ওয়াশিং প্লান্ট, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকিং, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকিং অটোমেশন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ট্রেডিং, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং, তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত এবং ভোগ্যপণ্যসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করে ব্যবসায় বৈচিত্র্য এনেছে।
বর্তমানে এনভয় গ্রুপের প্রায় ৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রায় ২১ হাজার কর্মী নিয়ে গ্রুপটির বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার।
এনভয় গ্রুপ ও শেলটেক গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'আরএমজির বাইরে আমাদের নতুন ব্যবসা শুরু করার কারণ হলো, একটা ব্যবসা ঝামেলায় পড়লে অন্য ব্যবসা থেকে যেন সাপোর্ট পাই।'
এনভয়ের পোশাক উৎপাদন ইউনিট চালুর চার বছর পর, ১৯৮৮ সালে ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের জন্য মানসম্মত বাড়ি তৈরির লক্ষ্যে গ্রুপটি শেলটেক (প্রাইভেট) লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত করে। এরপর গত ৩৩ বছরে শেলটেক রাজধানীতে ৩ হাজার ৮০০টি আবাসিক ও বাণিজ্যিক ইউনিট নির্মাণ করেছে।
শেলটেক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এনভয় গ্রুপের পরিচালক তানভীর আহমেদ বলেন, 'শেলটেক এখন একটা স্বতন্ত্র গ্রুপ। গ্রুপটির ১৭টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। স্থানীয়ভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক বিক্রি প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।'
তিনি আরও বলেন, শেলটেক গ্রুপ মূলত সেবা খাতে মনোনিবেশ করেছে। গ্রুপটিতে প্রায় ২ হাজার কর্মী রয়েছে।
শেলটেক গ্রুপের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল নির্মাণ, সিরামিক টাইলস উৎপাদন, অ্যাব্রেসিভ পেপার উৎপাদন, নগর অঞ্চল পরিকল্পনা ও স্টক ব্রোকারেজ।
কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, শেলটেক এখন প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির সিরামিক ফ্লোর টাইলস এবং ওয়াল টাইলস শিল্পের অন্যতম বৃহৎ নির্মাতা।
বেঙ্গল মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিও শেলটেক অ্যান্ড এনভয় গ্রুপের সাথে যুক্ত। রপ্তানিমুখী বিশ্বমানের মাংস শিল্প বেঙ্গল মিট প্রসেসিং দেশেও মাংস সরবরাহ করে থাকে।
স্কয়ার হাসপাতালের পরিচালক, এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক এবং সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, আমরা বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বেসকারি স্বাস্থ্যসেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্কয়ার হসপিটালস লিমিটেডের গর্বিত অংশীদার।
হা-মীম গ্রুপ
পোশাক প্রস্তুতকারক হা-মীম গ্রুপ ১৯৮০-র দশকের গোড়ার দিকে যাত্রা শুরু করে। কোম্পানির প্রধান এ কে আজাদ ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে ব্যবসা বহুমুখীকরণ শুরু করেন।
তিনি প্রিন্টিং, এমব্রয়ডারি, ওয়াশিং, লেবেল, পলি ও প্যাকেজিং, কার্টন, বেল্ট ও টেপ, শিপিং, টিভি চ্যানেল, সংবাদপত্র, চা বাগান ইত্যাদি খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন।
হা-মীম গ্রুপে ৬০ হাজারের বেশি কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। গ্রুপটির পত্রিকা দৈনিক সমকাল ও টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল২৪ দেশে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
তবে ব্যবসা বহুমুখীকরণের পরও পোশাক ও বস্ত্র খাতই এখনও হা-মীম গ্রুপের প্রধান ব্যবসা।
ডিবিএল গ্রুপ
দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড (ডিবিএল) দেশের অন্যতম বৃহৎ পোশাক রপ্তানিকারক। ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠার পর কোম্পানিটি তাদের ব্যবসা টেক্সটাইল, টেক্সটাইল প্রিন্টিং, ওয়াশিং, গার্মেন্টস আনুষঙ্গিক, প্যাকেজিং, সিরামিক টাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, ড্রেজিং, সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন (ভিএলএসআই), আইসিটি এবং টেলিযোগাযোগসহ অন্যান্য খাতে সম্প্রসারণ করে বৈচিত্র্য এনেছে।
দুই দশক আগে মাত্র ৩০০ কর্মী যাত্রা শুরু করা কোম্পানিটির বর্তমান কর্মীসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডিবিএল গ্রুপের টার্নওভার ছিল প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার।
তবে তৈরি পোশাকই এখনও গ্রুপটির প্রধান ব্যবসা। হা-মীম গ্রুপের প্রায় ৩০ হাজার কর্মচারী পোশাক খাতে এবং বাকিরা টেক্সটাইলসহ অন্যান্য শিল্পে কর্মরত আছে।
বিখ্যাত জার্মান ব্র্যান্ড পুমার পণ্য বাংলাদেশে বাজারজাত করছে ডিবিএল গ্রুপ। বনানীর পর গত সপ্তাহে ধানমন্ডিতে পুমার দ্বিতীয় আউটলেট খোলা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বিপিএলে একটি দলের স্পন্সরর ডিবিএল গ্রুপ।
গ্রুপটি ডিবিএল ফার্মাসিউটিক্যালস নামে ওষুধ ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে, যা আগামী নভেম্বর থেকে বিপণন শুরু করবে। সিরামিক, টেলিকমিউনিকেশন, গার্মেন্টসের আনুষঙ্গিক উপকরণ এবং টেক্সটাইলে বিনিয়োগ করেও গ্রুপটি সফল হয়েছে।
ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম ফিরোজ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ব্যবসাগুলোকে টেকসই করার জন্যই বহুমুখীকরণ করা উচিত। পোশাক ব্যবসা তো আর সবসময়ই ভালো যাবে না। হাতে দ্বিতীয় বিকল্প রাখার প্রয়োজন আছে।'
টিম গ্রুপ
একটিমাত্র পোশাক কারখানা নিয়ে ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে টিম গ্রুপ। এখন গ্রুপটির ১২টি ইউনিটে ১৮ হাজারের বেশি কর্মচারী রয়েছে।
গ্রুপটি সোর্সিং, ওষুধ, আইটি, রিয়েল এস্টেট এবং স্থানীয় খুচরা ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা বহুমুখীকরণ করেছে।
দেশের সবচেয়ে বড় বায়িং হাউস টিম সোর্সিংয়ের শতভাগ মালিকানা টিম গ্রুপের। বায়িং হাউসটি ১০০-র বেশি পোশাক কারখানার সাথে ব্যবসা করে।
প্রতিষ্ঠার মাত্র চার বছরের মধ্যেই বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে টিম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
টিম গ্রুপের আইটি প্রতিষ্ঠান ইন্টেলিয়ার লিমিটেড ক্লাউড ইন্টিগ্রেশন, মাইগ্রেশন এবং ইআরপি পরিষেবাসহ সফ্টওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সলিউশন দিয়ে থাকে। অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব স্থাপত্য নকশার জন্য টিম ডেভেলপারস লিমিটেড রিয়েল এস্টেট শিল্পে আলাদা স্থান করে নিয়েছে।
গ্রুপটি 'টুয়েলভ' নামে একটি স্থানীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডও তৈরি করেছে। ২০১২ সালে যাত্রা শুরুর পর টুয়েলভ অল্পদিনের মধ্যে সারা বাংলাদেশে কার্যক্রম প্রসারিত করে।
সারা বাংলাদেশে ২৭টি স্থানে টুয়েলভের দোকান রয়েছে। ফিজিক্যাল দোকান ছাড়াও টুয়েলভ ই-কমার্স সাইট ও ফেসবুকভিত্তিক দোকানের মাধ্যমে সব বয়সের মানুষের কাছে পোশাক বিক্রি করে থাকে।
গত বছর টিম গ্রুপের টার্নওভার ছিল ৩৬০ মিলিয়ন ডলার। গ্রুপটি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলারের টার্নওভারে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করছে। ২০২২ সালের শেষ দিকে জিরো ডিসচার্জ ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ একটি নতুন ডেনিম পোশাক কারখানাও চালু করবে গ্রুপটি।
টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, 'আমার ব্যবসার মডেল খুবই সহজ-সরল। আমি আমার কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিই এবং তাদের ক্ষমতায়ন করার চেষ্টা করি। একবার তাদের ক্ষমতায়ন হয়ে গেলে তারাই ব্যবসা পরিচালনায় নেতৃত্ব দেয়।'
তিনি আরও বলেন যে, ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবসা গড়ে তোলার জন্যই তারা ব্যবসায় বৈচিত্র্য বাড়াচ্ছেন।
প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেড
প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেড দেশের সবচেয়ে বড় ডেনিম পোশাক রপ্তানিকারক। তাদের পাঁচটি ইউনিট থেকে বছরে ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। বিশ্বব্যাপী ক্যাজুয়াল পোশাকের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে কোম্পানিটি সম্প্রতি একটি নিট কম্পোজিট কারখানা চালু করেছে।
এছাড়াও গ্রুপটি চট্টগ্রামে ম্যারিয়টের সঙ্গে একটি পাঁচ-তারকা হোটেল চালু করার অপেক্ষায় রয়েছে।
১৯৮৪ সালে একটি পোশাক কারখানা এবং মাত্র ২০০ জন কর্মচারী নিয়ে যাত্রা শুরু করে গ্রুপটি। বর্তমানে এর কর্মীসংখ্যা ৩১ হাজার।
প্যাসিফিক জিন্সের দুটি প্রতিষ্ঠান—ইউনিভার্সাল জিন্স লিমিটেড ও প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেড—গত কয়েক বছর ধরে রপ্তানিতে জাতীয় স্বর্ণ ও রৌপ্য ট্রফি জিতে আসছে।
প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেন, ব্যবসা বহুমুখীকরণের মাধ্যমে তারা তাদের রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে চান। তিনি জানান, 'বাংলাদেশ যেহেতু ক্যাজুয়াল পোশাকের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে, তাই আমরা একটি নিট ইউনিটে বিনিয়োগ করেছি।'
মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ চট্টগ্রামে তাদের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে বলে জানান তানভীর।
মোহাম্মদী গ্রুপ
বাংলাদেশের পোশাক খাতের শৈশবকালে, ১৯৮৬ সালে পোশাক ব্যবসা শুরু করে মোহাম্মদী গ্রুপ। তিন উদ্যোক্তা আনিসুল হক, হাবিব রহমান ও ফারুক-আল-নাসির দেশ গার্মেন্টসের চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজেরাই পোশাক রপ্তানি শুরু করেন। বর্তমানে মোহাম্মদী গ্রুপের মালিক প্রয়াত আনিসুল হকের পরিবার।
কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা আনিসুল হক বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) নেতৃত্ব দেওয়ার পর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হন। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি মারা যান। বর্তমানে তার স্ত্রী ও সন্তানরা তার ব্যবসা দেখাশোনা করছেন।
১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে গ্রুপটি ব্যবসা বহুমুখীকরণ শুরু করে। এরপরের কয়েক বছরে মোহাম্মদী গ্রুপ ব্যবসা বহুমুখীকরণ করে রিয়েল এস্টেট, বিদ্যুৎ উৎপাদন, তথ্যপ্রযুক্তি, মিডিয়া এবং বিনোদন অঙ্গনে সাফল্য অর্জন পেয়েছে। কোম্পানিটির সাম্প্রতিকতম উদ্যোগ নাগরিক টেলিভিশন ২০১৮ সালের মার্চে চালু হয়েছে।
মোহাম্মদী গ্রুপ যাত্রা শুরু করেছিল মাত্র ৫২ জন কর্মী নিয়ে। বর্তমানে গ্রুপটিতে ১০ হাজার কর্মী রয়েছে।
টেকনোভিস্তা নামে একটি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসার মাধ্যমে কোম্পানিটি প্রথম পোশাক খাতের বাইরে ব্যবসা বহুমুখীকরণ আরম্ভ করে। এরপর অন্যান্য খাতে সম্প্রসারণ হয়। গ্রুপটি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। মোহাম্মদী গ্রুপের বর্তমানে ২১টি খাতে বিনিয়োগ রয়েছে।
মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাভিদুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, '১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ওপর থেকে যখন কোটা ব্যবস্থা তুলে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়, তখনই আমার বাবা [আনিসুল হক] ভাবলেন কী করা যায়। তার মনে হলো, সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখা ঠিক হবে না। তখনই আইটি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা বহুমুখীকরণ শুরু হয়। এর পরে ক্রমান্বয়ে আবাসন এবং বিদ্যুতে বিনিয়োগ হয়।'
নাভিদুল হক বলেন, '২০০৮-০৮ সালে দেশে যখন বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল, তখন আমরা বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন অনেকেই এই খাতে বিনিয়োগ করেছেন। ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এর বাইরে আমাদের নতুন কোনো খাতে বিনিয়োগ করার প্রয়োজন নেই। ইতিমধ্যে যেসব খাতে বিনিয়োগ করেছি, সেগুলোতেই আমরা সুস্থ ব্যবসা করতে চাই।'
শান্তা হোল্ডিংস লিমিটেড
১৯৮৬ সালে শান্তা গার্মেন্টস নিয়ে ব্যবসা শুরু করার পর গ্রুপটি ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে ব্যবসা বহুমুখীকরণ আরম্ভ করে। গ্রুপটির প্রধান খন্দকার মনির উদ্দিন আবাসন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করেছেন। একে একে সবগুলো গার্মেন্ট ইউনিট বিক্রি করে দেওয়ায় এই গ্রুপের এখন কোনো পোশাক কারখানা নেই।
ট্রপিকা গ্রুপ ও সেপাল গ্রুপের সঙ্গে একীভূত হয়ে শান্তা গ্রুপ এসটিএস গ্রুপ গঠন করেছে। এই গ্রুপটির এভারকেয়ার হাসপাতাল (অ্যাপোলো হসপিটালস ঢাকা), ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা (আইএসডি) এবং দিল্লি পাবলিক স্কুলের মালিক।
সেপাল গ্রুপ বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির মালিকানাধীন আরএমজির সঙ্গেও ব্যবসা শুরু করেছে।
শান্তা হোল্ডিংস লিমিটেডের অধীনে জিডিএস কেমিক্যাল বাংলাদেশ লিমিটেড, শান্তা সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের মতো কোম্পানি রয়েছে। ঢাকা ব্যাংকেও বিনিয়োগ রয়েছে খন্দকার মনির উদ্দিনের।
খন্দকার মনির, তার ছেলে এবং মেয়ে ব্যবসাগুলোর দেখাশোনা করেন।
শান্তা হোল্ডিংস লিমিটেডের পরিচালক সাইফ খন্দকার বলেন, 'আমরা আরএমজি দিয়ে অনেক অর্জন করেছি। কিন্তু এটা বেশি চাপের। আর আমার বাবা সবসময় মানসম্মত জীবনযাপনের সাথে সম্পর্কিত এমন ব্যবসায় যুক্ত থাকতে চেয়েছেন। এজন্য তিনি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আবাসনের দিকে মন দিয়েছেন। বাংলাদেশে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য তিনি প্রথমবারের মতো দেশে একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল [বর্তমানে এভারকেয়ার] নির্মাণ করেন।'
সাইফ খন্দকার আরও বলেন, 'শিক্ষা এবং রিয়েল এস্টেটের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। শান্তা হোল্ডিংস লিমিটেড ইতিমধ্যে ৩০টি প্রকল্প হস্তান্তর করেছে, আরও ২৫টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। আমরা ভবিষ্যতে আমাদের ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত করব।'