২০২৩ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ করবে সরকার
২০২৩ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ করতে চায় সরকার। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অনুযায়ী দেশের দ্বিতীয় এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে ব্যয় হবে ৩৭০৭ কোটি টাকা (৪৩৫ মিলিয়ন ডলার)।
সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করা সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ স্থাপনের কাজ দ্রুত করতে জি টু জি পদ্ধতিতে রাশিয়ার মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হলেও এখনো সেটির সক্ষমতার দুই-তৃতীয়াংশ কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।
২০১৯ সালে এই স্যাটেলাইটের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে বিএসসিএল; তবু চাহিদা সত্ত্বেও বিদেশ কিংবা কোম্পানিগুলোর কাছে কোনো ব্যান্ডউইথ ইজারা দিতে পারেনি এজেন্সিটি। এ অবস্থাতেই দ্বিতীয় স্যাটেলাইট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ইতোমধ্যে সমীক্ষা কাজ শেষ হওয়ায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাব (পিডিপিপি) নীতিগত অনুমোদনের জন্য গত ৪ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সম্মতি আদায়ের পর উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে আলোচনা কার্যক্রম শুরু করতে পিডিপিপি পাঠানো হবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি)।
ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জাব্বার টিবিএসকে বলেন, 'বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ অনুমোদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এ কার্যক্রম শেষ হলে এর বাস্তবায়ন কাজও শুরু হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'এর আগে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১-এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে কোনো দেশের চেয়ে আমরা ভালো করছি। এখন দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান এটি ব্যবহার করছে। ব্যবহার বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও প্রচারণা কার্যক্রম চলছে। দ্রুত এর শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।'
'এ ধারাবাহিকতায় দেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের শতভাগ ব্যবহার করাও সহজ হবে এবং বাণিজ্যিক সফলতাও আসবে,' যোগ করেন মন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইটের অভিজাত ক্লাবে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এতে ব্যয় হয়েছি ২৯০২ কোটি টাকা।
এদিকে, গত ৮ জুন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে বিএসসিএলের এক সভায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২-এর ওপর প্রজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারসহ বিএসসিএলের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এই সভায় বঙ্গবন্ধু স্যাটলাইট এর ধরন বা প্রকৃতি নির্ধারণের জন্য নিয়োগ করা আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস এলএলসি (পিডব্লিউসি) বেশ কয়েকটি অপশন উপস্থাপন করেন।
এর মধ্য থেকে 'ডেভেলপ স্যাটেলাইট সিস্টেমস প্রোভাইডিং বোথ অপটিক্যাল অ্যান্ড সার ক্যাপাবিলিটিস (১৫ অপটিক্যাল অ্যান্ড ১ সার স্যাটেলাইটস)' অপশনটি চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়।
বাণিজ্যিকভাবে এই অপশন কম লাভজনক হলেও দীর্ঘ মেয়াদে দেশের চাহিদা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিবেচনায় একে চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানান বিএসসিএল কর্মকর্তারা।
ওই সভায় রাশিয়া থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকিউর করার ক্ষেত্রে বিলম্ব পরিহার করতে বাস্তবায়নকালে ক্লোজ মনিটরিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
বিএসসিএলের এক উচ্চপদস্থ কর্তকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ স্থাপন প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পরিকল্পনা কমিশনের সম্মতি নিয়ে প্রকল্প প্রস্তাব ইআরডিতে পাঠানো হবে। ইআডি অর্থায়নের প্রক্রিয়া শেষ করবে। এরপর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
ইআরডি সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে 'দ্য রাশিয়া-বাংলাদেশ ইন্টার-গভর্নমেন্টাল কমিশন অন ট্রেড ইকোনোমিক, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন কমিশনে'র বৈঠকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করে রাশিয়া। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওই দ্বিপাক্ষিক সভায় বাংলাদেশ পক্ষে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ। রাশিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির কৃষি উপমন্ত্রী ইলিয়া ভি. শেস্তাকভ।
তবে রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে অগ্রগতি হয় খুব ধীরগতিতে। এ কারণে রাশিয়া ছাড়াও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণে আলোচনা হতে পারে বলে জানান ইআরডির কর্মকর্তারা।
ইআরডি'র যুগ্ম সচিব (ইউরোপ) মির্জা আশফাকুর রহমান জানান, 'দ্য রাশিয়া-বাংলাদেশ ইন্টার-গভর্নমেন্টাল কমিশন অন ট্রেড ইকোনোমিক, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন কমিশন' সভা চলতি বছরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সভায় এই বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।