অভ্যুত্থানের আগে সেনাবাহিনী জোরপূর্বক পদত্যাগ করাতে চেয়েছিল: মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপ্রধান
মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপতি মঙ্গলবার সাক্ষ্য দিয়েছেন, সামরিক বাহিনী গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের কয়েক ঘণ্টা আগে তাকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করার চেষ্টা করেছিল; তাকে সতর্ক করে দিয়েছিল, তিনি যদি ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান তাহলে তার গুরুতর ক্ষতি হতে পারে। সাবেক রাষ্ট্রপতি উইন মিন্ট তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে এইসব কথা বলেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই সাক্ষ্যই উইন মিন্টের প্রকাশ্যে আসা প্রথম বক্তব্য। মিয়ানমারের চলতি বছরের ১ ফ্রেব্রুয়ারির ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভ্যুত্থান বলে আখ্যা দিলেও, দেশটির ক্ষমতায় থাকা সামরিক দল এ অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি দেশে কোনো অভ্যুত্থান ঘটেনি; বরং একজন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি আইনগতভাবেই রাষ্ট্রক্ষমতা সামরিক জেনারেলদের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন। তবে, এখন ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপতি উইন মিন্টের বক্তব্য সামরিক বাহিনীর এই দাবিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের নির্বাচিত বেসামরিক নেত্রী অং সান সু চি সহ উইন মিন্টের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগে মামলা দায়ের হয়।
সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান উইন মিন্ট রাজধানী নাইপিদোর আদালতকে বলেন, ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা গত ১ ফেব্রুয়ারি তার কাছে এসেছিলেন এবং অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তাকে পদত্যাগ করতে বলেছিলেন।
তার সাক্ষ্য উদ্ধৃত করে সাংবাদিকদের পাঠানো এক ইংরেজী বার্তায় তার আইনজীবী খিন মাউং জাও বলেন, "রাষ্ট্রপতি তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন তিনি সুস্থ আছেন। কর্মকর্তারা তাকে সতর্ক করেছিলেন, যদি তিনি অস্বীকৃতি জানান তাহলে তার অনেক ক্ষতি হবে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি তাদের বলেছিলেন, তিনি মারা গেলেও সম্মতি দেবেন না।"
এ বিষয়ে দেশটির ক্ষমতাসীন সামরিক দলের মন্তব্য জানতে বর্তমান সরকারের একজন মুখপাত্রকে ফোন করা হলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি।
এদিকে, উইন মিন্ট এবং সু চি উভয়েই তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা একাধিক অভিযোগ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের উভয়ের আইনজীবী জানিয়েছেন, সু চি মঙ্গলবারের সাক্ষ্য জনসম্মুখে প্রকাশের পরামর্শ দিয়েছেন।
গত বছর নির্বাচনে সু চি'র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)-এর পুনরায় জয়লাভের তিন মাসের মধ্যে নতুন সরকার গঠনের কথা থাকলেও তাতে বাধা দেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ১ ফেব্রুয়ারি উইন মিন্ট এবং সু চি-কে গৃহবন্দি করে রেখে সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয়। আর তারপর থেকেই দেশটিতে শুরু হয় সহিংসতা এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়।
সামরিক জেনারেলদের দাবি, নির্বাচনে জালিয়াতির মাধ্যমে জয়লাভ করেছিলেন সু চি, যা দেশের ন্যায়বিচার ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছিল। এই অভিযোগেই বর্তমান জান্তা সরকার এনএলডি-কে ক্ষমতাচ্যুত করে।
এরপর, সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং উপরাষ্ট্রপতি মিন্ট সুয়ে, ১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং জরুরি অবস্থার তত্ত্বাবধানে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন সেনাবাহিনীর হাতে।
তবে, মিন্ট সুয়ে কীভাবে উইন মিন্টের কাছ থেকে রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করেছিলেন তা প্রকাশ্যে আনেনি সামরিক জান্তা সরকার।
- সূত্র- সিএনএন