একরাতেই কেটে ফেলা হলো ২০০ গাছ
সিলেটে সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণের জন্য একরাতেই কেটে ফেলা হয়েছে ২০০ গাছ। গাছ কাটার জন্য বনবিভাগের অনুমতিও নেওয়া হয়নি।
সিলেট নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার এই গাছগুলো কেটেছে খোদ সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।
গত সোমবার রাতে সিসিকের কর্মীরা উপশহরের সড়কের পাশের দুই শতাধিক গাছ কেটে ফেলে। মঙ্গলবার বিকেলে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, করাত দিয়ে আরো কিছু গাছ কাটছেন শ্রমিকরা। আর কেটে ফেলা গাছগুলো টুকরো করে সড়কের পাশে রাখা হয়েছে।
কেটে ফেলা গাছগুলো ইতোমধ্যে বিক্রিও করে ফেলা হয়েছে বলে জানা গেছে। ট্রাকে করে সেগুলো সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাতে গাছ কেটে অধিকাংশ বিক্রি করে ট্রাকে করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় একটি চক্র গাছ কেনাবেচায় কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে। খবর পেয়ে বনবিভাগের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত করে কেনাবেচার সত্যতা পেয়েছে।
সিসিকের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরে ১৫ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেন নির্মাণ ও রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। শাহজালাল উপশহর এলাকার সি ব্লকের ২১, ৩৭ ও ৩৮ নম্বর রাস্তায় সম্প্রতি ড্রেন ও রাস্তা বড় করার কাজ শুরু হয়। ওই এলাকার রাস্তার দুই পাশে রেইনট্রিসহ নানা প্রজাতির এসব গাছ ১৯৯০ সালের দিকে লাগানো হয়েছিল।
বনবিভাগের বিধিমালায় আছে, ব্যক্তি মালিকানাধীন অথবা সরকারি জমি থেকে গাছ কাটার আগে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয়। এরপর তদন্ত করে গাছ টাকার যৌক্তিকতা পাওয়া গেলে গাছের দরদাম নির্ধারণ ও পরবর্তীতে আরও গাছ লাগানোর শর্তে গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়া বনবিভাগের মাধ্যমে করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জানা যায়, ড্রেন নির্মাণে উপশহর এলাকার কিছু গাছ কাটার জন্য বনবিভাগের কাছে আবেদন করে সিসিক। তবে বনবিভাগ এখনও গাছ কাটার অনুমতি দেয়নি। অনুমতি পাওয়ার আগেই কেটে ফেলা হয়েছে ২০০ গাছ।
বনবিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, "উপশহরে রাস্তার দুই পাশে ড্রেন নির্মাণ করতে কিছু গাছ কাটার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে ১৭ অক্টোবর বন বিভাগকে একটি চিঠি দেয় সিটি করপোরেশন। পরদিন আমরা সেখানে গিয়ে দেখি গাছ কাটা হয়ে গেছে। ঠিক কী পরিমাণ গাছ কাটা হয়েছে এবং কাটা গাছগুলো কোথায় নেওয়া হয়েছে, তা আমরা খোঁজ নিচ্ছি"।
শ্রমিকরা না বুঝেই গাছ কেটে ফেলেছে জানিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, "ওইখানে ড্রেন নির্মাণ ও সড়ক সম্প্রসারণ হবে। এজন্য কিছু গাছ কাটা প্রয়োজন। গাছ কাটার জন্য আমরা বনবিভাগকে চিঠিও দিয়েছি। তবে অনুমতি পাওয়ার আগেই সিটি করপোরেশনের কিছু লোক গাছ কেটে ফেলেছেন। এ ব্যাপারে দায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো"।
সিটি করপোরেশন গাছ রক্ষায় 'খুবই আন্তরিক' দাবি করে তিনি বলেন, "উপশহরে গাছ কাটার বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে। আর যাতে অকারণে কোনো গাছ কাটা না হয়, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়াব"।
বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার পাওয়া স্থানীয় বাসিন্দা আফতাব চৌধুরী বলেন, "এই গাছগুলোর অধিকাংশ আমার হাতে লাগানো। কোনো বাছবিচার ছাড়াই নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। যেখানে ৫০টির মতো গাছ কাটা প্রয়োজন সেখানে দুইশটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এই দুইশ গাছ একেকটি এক লাখ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার মতো। আমি সিটি করপোরেশনকে বিষয়টি জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি"।