ভ্যাকসিন না নেওয়া ব্যক্তিরা প্রতি ১৬ মাস অন্তর পুনরায় করোনা সংক্রমিত হতে পারেন: যুক্তরাজ্যের গবেষকদল
যেসকল ব্যক্তি কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন নেন নি, তাদের প্রতি ১৬ মাস অন্তর এই ভাইরাসে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইংল্যান্ডের নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য।
দেশটিতে সংক্রমণ বাড়ার পাশাপাশি দ্বিতীয়, এমনকি তৃতীয়বারের মতো কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে।
আসন্ন শীতে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করছেন বিজ্ঞানীরা। ফলে, চাপের মুখে পড়বে ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস)। এ অবস্থায় কিশোর-কিশোরীদেরকে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজের পাশাপাশি সকল স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য ভ্যাকসিন কার্যক্রম বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন অনেকেই।
লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইরোলজির সহযোগী অধ্যাপক স্টিফেন গ্রিফিন বলেন, "যদি উচ্চমাত্রার বিস্তার এবং ঘন ঘন ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা হয় (যেমন স্কুল), তাহলে ভ্যাকসিনের ডবল ডোজ নেওয়া ব্যক্তিরাও করোনায় সংক্রমিত হবেন।"
গত বছরের এই সময় অনুমান করা হয়েছিল, পুনরায় সংক্রমণ ঘটলেও সেটি তুলনামূলকভাবে অস্বাভাবিক। সেসময় বিশ্বব্যাপী মাত্র কয়েকজন ব্যক্তি পুনরায় করোনা সংক্রমিত হন। তবে, এখন জানা গেছে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সময়ের সাথে কমতে শুরু করে। ডেনমার্কের একটি গবেষণায় বলা হয়, ৬৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে অন্তত ছয় মাস সুরক্ষিত থাকার হার ৮০ শতাংশ। কিন্তু, ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য এই হার মাত্র ৪৭ শতাংশ।
এই অবস্থায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে। ৬ অক্টোবর ওএনএস এর প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোভিড-১৯ ধরা পড়ে ২০ হাজার ২৬২ জন ব্রিটিশ নাগরিকের। তাদের মধ্যে ২৯৬ জন পুনরায় এই রোগে আক্রান্ত হন। প্রথমবার আক্রান্ত হওয়ার ১২০ দিন বা তার কিছু বেশি সময় পর আক্রান্ত হতে দেখা গেছে এসকল ব্যক্তিদের। কিন্তু, এ বছরের মে থেকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়েছে। তখন থেকে এ পর্যন্ত পুনরায় সংক্রমণের হার বেড়েছে ৩৫০ শতাংশ।
করোনা মোকাবেলায় দিশেহারা দেশটির বিভিন্ন রাজ্য। ওকলাহোমাতে বসবাসরত ৩.৯ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে পুনরায় করোনা সংক্রমিত হয় ৫ হাজার ২২৯ জন।
এদিকে, ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর মতে, প্রথমবার কোভিড সংক্রমিত হওয়ার ৯০ বা তার বেশিদিন পর পুনরায় সংক্রমণ ঘটতে পারে।
সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্যের সহযোগী অধ্যাপক নিসরিন আলওয়ান বলেন, "আমরা এখনও পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকির কারণগুলো সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানি না। কিন্তু আমরা যে ধারণা করেছিলাম তরুণদেরকে ভ্যাকসিন দেওয়া হলে মহামারিটি থেমে যাবে, সেটি এখন অসম্ভব মনে হচ্ছে।"
দ্বিতীয়বার সংক্রমণের কারণ খুঁজতে সার্স-কোভ-২ ছাড়াও অন্যান্য করোনাভাইরাসের ইমিউনোলজিকাল ডেটা বিশ্লেষণ করেছেন প্রফেসর জেফরি টাউনসেন্ড এবং ইয়েল ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনে তার সহকর্মীরা। এসকল ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে সার্স, মার্স এবং সাধারণ সর্দির জন্য দায়ী ভাইরাস।
দ্য ল্যানসেট মাইক্রোবে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার সাথে সাথে পুনরায় সংক্রমণ ক্রমশ সাধারণ হয়ে উঠবে। বিশেষত সংক্রমণের সংখ্যা বেশি থাকলে এই অবস্থা হবে। "মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা বা ভ্যাকসিনের মাধ্যমে এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে তিন মাস থেকে পাঁচ বছর সময়কালে পুনরায় সংক্রমণ ঘটতে পারে। অর্থাৎ, গড়ে কোনো ব্যক্তি প্রতি তিন মাসে কিংবা ৫ বছর অন্তর কোভিডে আক্রান্ত হতে পারেন," বলেন টাউনসেন্ড।
যুক্তরাজ্যে গত সোমবার করোনা আক্রান্ত হন ৪৯ হাজার ১৫৬ জন। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে এ পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে বেশি। মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই হার অধিক (৮.১ শতাংশ)।
টাউনসেন্ড বলেন, "প্রথমত, আপনি যদি ভ্যাকসিন না নিয়ে থাকেন তাহলে সেটি আপনার নেওয়া উচিত। এবং যদি আপনি একবার সংক্রমিত হয়ে থাকেন, তাহলেও আপনার ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত। এটি আপনার সুরক্ষিত থাকার সময়কাল বাড়াবে।"
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান