‘২৪ হাজার আসামি করে বিচার হবে না, ৫০০ জনকে চিহ্নিত করুন’
দেশের বিভিন্ন জেলায় পূজা মণ্ডপে হওয়া হামলার প্রেক্ষিতে হওয়া মামলাগুলোতে আসামির তালিকা দীর্ঘ হওয়ায় সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত।
তিনি বলেছেন, "সারাদেশে পুজামণ্ডপ ও মঠ-মন্দিরে হামলার ঘটনায় ২৪ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এতো জনকে আসামি করে বিচার হবে না। ৮৫টি মামলায় অন্তত ৫০০ জনকে চিহ্নিত করে তাদের বিচার করুন।"
রোবাবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা মোড়ে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মিলন কান্তি দত্ত বলেন, "স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে যত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তার একটিরও সুষ্ঠু বিচার হয়নি। কোনো ঘটনা ঘটার পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি দোষারোপের সংস্কৃতি পরিস্থিতি আরও নাজুক করে তুলছে। আমরা চাই এবার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে মূল কালপ্রিটদের বিচারের আওতায় আনা হোক।"
কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে সম্প্রতি দেশের ১৬ জেলায় হিন্দুদের বাড়িঘর, পূজামণ্ডপ, মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার ঘটনায় দায়ের করা ৮৫টি মামলায় ২৩ হাজার ৯১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এসব আসামির অনেকে জেলে বা দেশের বাইরে আছেন বলে ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। এছাড়াও আসামিদের বেশির ভাগই অজ্ঞাতনামা বলে মামলার এজাহার পর্যালোচনায় দেখা গেছে। আইনবিদরা বলছেন, মণ্ডপে হামলাার ঘটনায় গণহারে আসামি করায় মূল অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা দূরহ হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বলেন, "রামু থেকে নাসিরনগর সব ঘটনাই এক সূত্রে গাঁথা। কুমিল্লায় যে ইকবাল এ ঘটনা ঘটিয়েছে তার পেছনে কে কলকাঁঠি নেড়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনুন। ইকবালকে সামনে রেখে মূল অপরাধীদের আড়াল করা হচ্ছে।"
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নীল-নকশা হচ্ছে দাবি করে মিলন কান্তি দত্ত বলেন, "স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসেও মন্দিরে হামলা করেছিলো পাকিস্তানী প্রেতাত্মারা। সেই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করা হয়েছে। দুই বছর পর নির্বাচন, এ নির্বাচনকে সামনে রেখে নীলনকশা হচ্ছে। তাই পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে এখন থেকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। যার যে পরিচয় হোক না কেন, তাকে বিচারের আওতায় আনুন।"
এ সময় তিনি আগামী ৪ নভেম্বর শ্যামাপূজা ও দীপাবলি উৎসবে আলোকসজ্জা না করার আহ্বান জানান। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে 'সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাড়াও' শীর্ষক প্রতীকী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও জানান।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন, "৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতায় এসে বারবার হামলা করেছে। এবার চট্টগ্রামে হামলার পর সরকার দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রগতিশীল সংঘটন গুলো রুখে দাঁড়িয়েছিলো। কিন্তু নোয়াখালীতে আমরা তাদের পাইনি। নোয়াখালীর চৌমুহনীতে যখন হামলা শুরু হয়, তখন পুলিশ ও প্রশাসনের কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো পর্যায়ের দায়িত্ব পালনে গাফলতি আছে কিনা তা অবিলম্বে চিহ্নিত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।"
ইসকনের বিভাগীয় সম্পাদক শ্রীপাদ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, "সব ধরনের আশ্বাস দেওয়ার পরেও সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে ইতোমধ্যেই ১৫০ টি দেশে আন্দোলন হচ্ছে। এ আন্দোলন সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে।"
সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেত্রী অধ্যাপিকা বিজয় লক্ষি দেবী বলেন, "যুবকরা বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হও। আমরা রোহিঙ্গা হতে চাইনা। আমরা আমাদের দেশেই থাকবো, পাশের দেশের উদ্বাস্তু হব না। এ জন্য রাষ্ট্রধর্ম বিলোপ করতে হবে।"
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বলের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পূজা পরিষদের সহ-সভাপতি লায়ন দুলাল চন্দ্র দে, রত্নাকর দাশ টুনু, সাংবাদিক প্রদীপ শীল, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মিথুন মল্লিক, নিখিল কুমার নাথ, সজল দত্ত, বিপ্লব সেন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি শ্যামল কুমার পালিতসহ পরিষদের বিভিন্ন বিভিন্ন থানা ইউনিটের নেতারা।