স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে নামিবিয়ার ইতিহাস
১৮ জন খেলোয়াড়, এর মধ্য থেকে বেছে নিতে হবে ১৫ জনকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াড গড়তে গিয়ে এমনই বিপদে পড়েছিল নামিবিয়া। ক্রিকেটারই ১৮ জন, সেরা খেলোয়াড় বাছাইয়ের তেমন সুযোগই ছিল না দেশটির। সেই নামিবিয়াই একের পর এক চমক দিয়ে যাচ্ছে। প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েই মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়া দেশটি সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে তুলে নিল ঐতিহাসিক জয়।
বুধবার সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আবি ধাবিতে স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের দেশ নামিবিয়া। প্রথমে বল হাতে শাসন করার পর ব্যাট হাতেও অসাধারণ ক্রিকেট খেলে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে নামিবিয়া। সোনার অক্ষরে লিখে রাখার মতো দিনে স্কটিশদের ৪ উইকেটে হারিয়েছে ২৫ লাখ ৪১ হাজার জনসংখ্যার দেশটি। প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, প্রথমবারই সুপার টুয়েলভে; আর সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচেই ঐতিহাসিক জয়। সব 'প্রথমেই' দারুণ সব গল্প লিখে চলেছে নামিবিয়া।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে বড় সংগ্রহ গড়া হয়নি স্কটল্যান্ডের। ম্যাচসেরা রুবেন ট্রাম্পেলম্যান ও জ্যান ফ্রাইলিঙ্কের দারুণ বোলিংয়ের মুখে ৮ উইকেটে ১০৯ রানে শেষ হয় স্কটিশদের ইনিংস। জবাবে গড়পরতা শুরুর পর দিক হারালেও জনাথন স্মিটের ব্যাটে ৬ উইকেটে ৫ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় নামিবিয়া।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ২৮ রান যোগ করেন নামিবিয়ার দুই ওপেনার ক্রেইগ উইলিয়ামস ও মাইকেল ভ্যান লিঙ্গেন। এই জুটি ভাঙার আগে ১৮ রান করেন লিঙ্গেন। এরপর উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জেন গ্রিন ও অধিনায়ক জেরহার্ড এরাসমুসের সঙ্গে ছোট ছোট জুটি গড়েন উইলিয়ামস।
গ্রিন ৯ ও এরাসমুস ৪ রান করেন। কিছুক্ষণ পর থামেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩ রান করা উইলিয়ামস। এরপর জুটি বাধেন ডেভিড ভিসা ও স্মিট। এই জুটি থেকে পাওয়া ৩৫ রানে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে যায় নামিবিয়া। ১৬ রান করে আউট হন দক্ষিণ আফ্রিকার পর নামিবিয়ার হয়ে খেলতে থাকা ভিসা।
ফ্রাইলিঙ্ক ২ রান করে আউট হলে পিক্কি ইয়া ফ্রান্সকে সঙ্গে নিয়ে জয় তুলে নেওয়ার কাজটি সারেন জনাথম স্মিট। ২৩ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। স্কটল্যান্ডের মাইকেল লিস্ক ২ এবং মার্ক ওয়াট, ক্রিস গ্রিভস, সাফায়ান শরিফী ও ব্র্যাড হোয়েল একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নামা স্কটল্যান্ডের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো। নামিবিয়ার ২৩ বছর বয়সী তরুণ পেসার রুবেন ট্রাম্পপেলমানের বোলিং তোপের মুখে দলীয় ২ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট হারায় স্কটিশরা। প্রথম ওভারেই তিনটি উইকেট তুলে নেন নামিবিয়ার বাঁহাতি এই পেসার। স্কটল্যান্ডের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে রানের খাতাই খুলতে দেননি ম্যাচসেরা রুবেন।
দলীয় ১৮ রানে ক্রেইগ ওয়ালেসক ফিরিয়ে স্কটল্যান্ডের চাপ আরও বাড়ান ডেভিড ভিসা। ১৮ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে স্কটল্যান্ড তখন মাঝ দরিয়ার। এমন ঝড়ের মাঝেও একপাশ আগলে রাখেন ওপেনার ম্যাতু ক্রস। পরে তার সঙ্গে যোগ দেন সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা মাইকেল লিস্ক।
এই জুটিতে ৫৭ রানে পৌঁছায় স্কটল্যান্ড। ১৯ রান করা ক্রসকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন নামিবিয়ার আরেক বাঁহাতি পেসার জ্যান ফ্রাইলিঙ্ক। এরপর লিস্ক ও ক্রিস গ্রিভসই স্কটশিদের হয়ে যা রান করেন। লিস্ক ২৭ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন। গ্রিভসের ব্যাট থেকে আসে ২৫ রান।
স্কটল্যান্ডের আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান তুলতে পারেননি। ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রানে ৩টি উইকেট নেন আগুনে বোলিং করা রুবেন। ফ্রাইলিঙ্ক ছিলেন অবিশ্বাস্য। ৪ ওভারে মাত্র ১০ রানে ২টি উইকেট নেন তিনি। এ ছাড়া ডেভিড ভিসা ও জনাথন স্মিট একটি করে উইকেট নেন।