যুক্তরাষ্ট্রে ইথিওপিয়ার শুল্ক মুক্ত সুবিধা হারানোয় লাভবান হবে বাংলাদেশ
মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ইথিওপিয়ার শুল্ক মুক্ত সুবিধা স্থগিত করেছে করেছে বাইডেন প্রশাসন। কম খরচের কারণে বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতো আফ্রিকার দেশটি। তাই রপ্তানি বাজারে সম্ভাব্য প্রতিযোগী ইথিওপিয়া এ সুবিধা হারানোয় বাংলাদেশ লাভবান হবে।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এর ফলে বাংলাদেশি পোশাক পণ্যের আরও কার্যাদেশ পাওয়া যাবে।
বিশ্ব গণমাধ্যমের সংবাদে প্রকাশ, মহামারির অভিঘাত ও উত্তরাঞ্চলে সহিংসতার জেরে প্রচণ্ড সংকটের মধ্যে থাকা ইথিওপিয়া, আগামী বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে মার্কিন বাজারে শুল্ক মুক্ত প্রবেশাধিকার হারাবে। বাইডেন প্রশাসন 'আফ্রিকা গ্রোথ অ্যান্ড অপারচুনিটি অ্যাক্ট' (আগোয়া) এর আওতায় এটি কার্যকর করবে।
আফ্রিকা মহাদেশের প্রস্তুতকারকরা বর্তমানে এই স্কিমের আওতাতেই মার্কিন বাজারে শুল্ক মুক্ত প্রবেশাধিকারের সুবিধা পান।
ভৌগলিকভাবে 'আফ্রিকার শৃঙ্গ' বলে পরিচিত সোমালি ভুমিঘেঁষা ইথিওপিয়া গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে ২৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। যা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির মোট রপ্তানির প্রায় অর্ধেক।
এনিয়ে দেশের পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বেশকিছু বায়ারের কাছে সরবরাহক দেশ হিসেবে ইথিওপিয়াই ছিল পছন্দের গন্তব্য, তাই মার্কিন বাজারে দেশটির শুল্কমুক্ত সুবিধা হারানো বাংলাদেশের পক্ষেই কাজ করবে।'
এছাড়া, কম খরচের কারণে বাংলাদেশের অনেক পোশাক প্রস্তুতকারক ইথিওপিয়ায় বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছেন, তারাও এখন দেশটির এ সুবিধা হারানোয় সেখানে যাওয়ার উৎসাহ হারাবেন।
নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ইথিওপিয়া কোন বড় রপ্তানিকারক দেশ না হলেও, কেবল মার্কিন বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার থাকার কারণেই বেশকিছু ব্র্যান্ড সেখানে অর্ডার দিত।
মার্কিন সরকারের এ সুবিধা স্থগিতের ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ বয়ে আনবে, কারণ এখন বিদেশি বায়াররাও ইথিওপিয়ায় কার্যাদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত হবেন। অচিরেই শুল্ক মুক্ত সুবিধা বাতিল হতে চলায় বিনিয়োগকারীরাও দেশটিতে বিনিয়োগ করতে চাইবেন না।
আফ্রিকান সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ অ্যাট ব্রুকিংসের সহ-পরিচালক ভেন্ডা ফেলবাব ব্রাউনের বরাতে আফ্রিকান বিজনেস এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুল্ক মুক্ত সুবিধার কারণে বার্ষিক ১০ কোটি ডলারের বৈদেশিক নগদ অর্থ আয় করে ইথিওপিয়া এবং এতে সরাসরি এক লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। দক্ষিণ ইথিওপিয়ার পোশাক কারখানা শ্রমিকদের অধিকাংশই হলেন নারী, তাদের উৎপাদিত পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হচ্ছে।
তবে বিগত কয়েক মাস থেকে ইথিওপিয়ার তাইগ্রে অঞ্চলে যুদ্ধ পরিস্থিতির কঠোর সমালোচনা করেছে মার্কিন সরকার। ২০২০ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া এ সংঘাতে এ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর অনুমান করা হচ্ছে।
সরকারি বাহিনী তাইগ্রে অঞ্চলে ব্যাপক গণহত্যা চালানোর পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে অনাহারের মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো। এই অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাকামী গোষ্ঠী তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের যুদ্ধ চলছে।
এ বাস্তবতায় মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ কংগ্রেসে দেওয়া সাম্প্রতিক এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, 'আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘণের দায়ে' ইথিওপিয়াকে এ স্কিম পাওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে। আগোয়া কর্তৃপক্ষের এক বিবৃতি সূত্রে এসব কথা জানা যায়।
এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর তাইগ্রে অঞ্চলে সংঘাতে জড়ানোয় ইথিওপিয়াকে দেওয়া সুবিধা স্থগিতের নির্বাহী আদেশ দেন বাইডেন। তারপরই গত মঙ্গলবারের (২ নভেম্বর) ঘোষণাটি আসে।
বাইডেন বলেছেন, উত্তর ইথিওপিয়ার পরিস্থিতি 'ব্যাপক সহিংসতা, গণহত্যা ও মানবাধিকার হরণের সমার্থক হয়ে উঠেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতির পরিপন্থী।'