বন উজাড় বন্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেশের তালিকায় থাকতে চায় বাংলাদেশ
২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছে এমন দেশগুলোর তালিকায় নাম লেখানোর আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে এই তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ পড়ায় ব্যাপক সমালোচনা হয়।
গত মঙ্গলবার ১২৪টি দেশের নেতারা ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেন, যা গ্লাসগোতে চলমান জলবায়ু সম্মেলনের প্রথম কোনো বড় অর্জন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বুধবার আমরা যুক্তরাজ্য সরকার ও ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জকে মেইল করে তাদের তালিকাটি হালনাগাদ করার আহ্বান জানিয়েছি।'
সম্মেলনে প্রতিশ্রুতি দেওয়া দেশগুলোয় বিশ্বের ৮৫ শতাংশের বেশি বনভূমি রয়েছে। ব্রাজিল, চীন, কলম্বিয়া, কঙ্গো, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে রয়েছে বিশাল বনাঞ্চল।
২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় বন্ধের লক্ষ্য পূরণে সরকারি ও বেসরকারি তহবিলে ১৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি তহবিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে গ্লাসগোয় চলমান কপ-২৬ সম্মেলনে।
বুধবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কপ-২৬-এ বিশ্বনেতাদের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, বন উজাড়ের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।
অঙ্গীকার করা দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম না থাকায় সুশীল সমাজও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ইউএন-ফাও) তথ্য উদ্ধৃত করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে বন উজাড়ের হার বিশ্বব্যাপী ২.৬ শতাংশের প্রায় দ্বিগুণ।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল টিবিএসকে বলেন, 'এখানে ভুল বোঝার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই এনডিসি (জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান) হালনাগাদ করেছে; বন উজাড় হ্রাস ও তা বাস্তবায়নের জন্য তহবিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের নাম সেখানে অন্তর্ভুক্ত ছিল না, তাই আমরা তাদেরকে বাংলাদেশের নাম যোগ করে তালিকা হালনাগাদ করার অনুরোধ করেছি।'
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পরিবেশবাদীদের উদ্বেগ সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ প্রকল্পসহ সংরক্ষিত বন এবং পরিবেশগতভাবে বিপন্ন এলাকায় অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসব প্রকল্প বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের প্রায় ২৭ কিলোমিটার মধ্য দিয়ে যাবে।
তারা বলেছেন, সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, কক্সবাজারের ঝিলংজা বনের ৭০০ একরে প্রশাসনিক একাডেমি স্থাপন ও লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠা বন উজাড় বন্ধ করার অঙ্গীকার থেকে সরকারের পিছিয়ে যাওয়ার উদাহরণ।
পরিবেশবাদী সংগঠন 'বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন' এর যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার টিবিএসকে বলেন, 'শুধু ভঙ্গ করার জন্য প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কোনো তাৎপর্য নেই। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ সরকার আন্তরিকভাবে তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে। বন উজাড়ের অবসান ঘটাবে। অঙ্গীকার বাস্তবায়নই প্রমাণ করার একমাত্র উপায় যে, সরকার তার প্রতিশ্রুতি পালন করেছে।'
বন উজাড় রোধে বাংলাদেশের এনডিসি:
চলতি বছরের ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ হালনাগাদ করেছে এনডিসি। সেখানে দেখা যায়, কৃষি, বনায়ন ও অন্যান্য ভূমি ব্যবহারের জন্য শর্তহীনভাবে ৭৭০ মিলিয়ন ডলার এবং শর্তসাপেক্ষ ২ হাজার ৫০৭ মিলিয়ন ডলার তহবিলের কথা উল্লেখ রয়েছে।
জাতীয় নির্গমন কমাতে প্রতিটি দেশের প্রচেষ্টা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার উদ্যোগের প্রতিনিধিত্ব করে এনডিসি। এখানে বাংলাদেশ বলছে, বন উজাড় কমাতে, বনায়ন ও বন পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে এবং গাছপালার পরিধি বাড়াতে কাজ করা হবে।
এনডিসিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ গাছপালার পরিধি ২২.৩৭ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশে উন্নীত করার পাশাপাশি দেড় লক্ষ হেক্টর উপকূলীয় অঞ্চলের সঙ্গে দ্বীপ এবং অবক্ষয়িত এলাকায় বনায়ন ও পুনর্বনায়ন করবে। এক লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ হেক্টর বনভূমি পুনরুদ্ধার এবং পাহাড় ও সমতল ভূমিতে ২ লাখ হেক্টর অবক্ষয়িত বন পুনরুদ্ধার করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে রাস্তার পাশে, বাঁধ এবং ব্যক্তিগত জমিতেও গাছ লাগানোর।
ধানের ক্ষেত, সার ব্যবহার এবং সার ব্যবস্থাপনা থেকে নির্গমন হ্রাসেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, এনডিসি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের ৩ হাজার ২৭৯ মিলিয়ন ডলার তহবিল প্রয়োজন।
তিনি বলেন, 'তাই আমরা প্রতিশ্রুতি দাতাদের কাছে ২ হাজার ৫০৭ মিলিয়ন ডলার চেয়েছি এবং বাকি ৭৭০ মিলিয়ন ডলার আমাদের নিজস্ব বাজেট থেকে যোগান দেওয়া হবে।'