বাণিজ্য ঘাটতি জুলাই-সেপ্টেম্বরে বাড়ল তিনগুণ
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশের বাণিজ্য ঘাটতি তিনগুণ বেড়েছে। ফলে অব্যাহত চাপের মুখে পড়েছে মুদ্রা বিনিময় বাজার।
জুলাই-সেপ্টেম্বর বা চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৬৫০ কোটি ডলার। যা আগের অর্থবছরের (২০২০-২১) একই সময়ে ছিল মাত্র ২.০৪ বিলিয়ন ডলার।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত তথ্যানুসারে, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর এক মাসে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৫৮ শতাংশ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রবাসী আয় প্রবাহ কমে আসাও এই বৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
বছরওয়ারি হিসাবে গত অক্টোবরে রেমিট্যান্স ২১.৬৫ শতাংশ কমে ১৬৪ কোটি ডলার হয়। সংক্রমণ কমে আসায় দেশে মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হয়ে ব্যবসাবাণিজ্যে চাঞ্চল্য ফিরলেও তা প্রবাসী আয় প্রবাহ বাড়ায়নি।
সে তুলনায় গেল বছরের অক্টোবরে প্রবাসীরা দেশে ২১০ কোটি ডলার সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত প্রবাসীরা ৭.০৫ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন। বছরওয়ারি হিসাবে যা ২০ শতাংশ কম। এর আগে গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য প্রকাশ করে।
তবে অক্টোবরে রপ্তানি আয়ে দেখা গেছে বড় মাত্রায় উল্লম্ফন, ফলে বৈদেশিক মুদ্রা বাজার ব্যবস্থাপনায় তৎপর বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুটা স্বস্তির সুযোগ পায়।
অক্টোবরে এক মাসে রপ্তানির সর্বোচ্চ রেকর্ড দেখেছে বাংলাদেশ। এ মাসে মোট ৪৭২ কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন নিয়ে রপ্তানিতে হয় রেকর্ড প্রবৃদ্ধি। বড়দিন উৎসবের আগে পশ্চিমা দেশগুলোয় পোশাক পণ্যের চাহিদা বেড়ে চলায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগী দেশগুলোর কোভিড সংক্রমণ সৃষ্ট সরবরাহ বিচ্ছিন্নতার ফলে এই সুবিধা পায় বাংলাদেশ।
ফলে গেল মাসে ৩৪৬ কোটি ডলারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়েছে রপ্তানি, বছরওয়ারি হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬০.৩৭ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রাথমিক তথ্যে এসব কথা জানানো হয়।
অক্টোবরে পোশাক পণ্য জাহাজিকরণ ৫৩.২৭ শতাংশ বেড়ে ৩৫৬ কোটি ডলারে পৌঁছায়, ফলে অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মোট রপ্তানি আয় এক হাজার ৫৭৪ কোটি ডলারে উন্নীত হয়।
তারপরও, অব্যাহত বাণিজ্য ঘাটতি দেশের চলতি হিসাবের ব্যালেন্সে চাপ সৃষ্টি করেছে।
গত আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর এক মাসে চলতি হিসাবের উদ্বৃত্ত কমেছে ৮২ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বৈদেশিক বাণিজ্যের চলতি হিসাবে ঘাটতি হয়েছে নেতিবাচক ২৩১ কোটি ডলার। অথচ গেল বছরের একই সময়ে এর উদ্বৃত্ত ছিল ৩৪৮ কোটি ডলার।
গত কয়েক মাস ধরেই দেশের মুদ্রা বিনিময় বাজার চড়া যাচ্ছে। শিডিউলড ব্যাংকগুলোর চাহিদা পূরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এপর্যন্ত ২০০ কোটি ডলার বিক্রি করলেও তা স্থানীয় মুদ্রাবাজারে বৈদেশিক মুদ্রার অব্যাহত চাহিদা ও মূল্য কমাতে পারেনি।