মহামারিতে বার্ষিক মুনাফা বেড়েছে বেশিরভাগ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির
কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বিগত বছরের তুলনায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে উচ্চ মুনাফা নিবন্ধন করেছে বেশিরভাগ তালিকাভুক্ত ফার্মাসিউটিক্যাল এবং কেমিক্যাল কোম্পানি।
এর মধ্যে, আগের অর্থবছরের তুলনায় বেশি লভ্যাংশ দেবে আটটি কোম্পানি, একই পরিমাণ অর্থ বিতরণ করবে চারটি কোম্পানি এবং লভ্যাংশ কমাবে তিনটি ফার্ম। এ ফার্মগুলো তাদের মুনাফা কমিয়েছে।
মহামারি চলাকালীন সময়ে ফার্মাসিউটিক্যাল এবং কেমিক্যাল ফার্মগুলোর উৎপাদিত ওষুধ এবং স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক পণ্যগুলোর বিক্রি বেড়ে যায়। ফলে দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো আগের অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব এবং মুনাফা উভয় ক্ষেত্রেই ভাল প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সাহায্য করে।
৮ নভেম্বর পর্যন্ত, ফার্মাসিউটিক্যাল এবং কেমিক্যাল খাতে তালিকাভুক্ত দুটি বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিসহ ৩১ টির মধ্যে ২০টি কোম্পানি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য তাদের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এক বিশ্লেষণ অনুসারে, ১১ টি কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৯ টি কোম্পানির মুনাফা আগের অর্থবছরের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে।এই সেক্টরের বাকি কোম্পানিগুলো এখনও তাদের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। পাশাপাশি, শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণাও করেনি তারা।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ৩ টি কোম্পানি লোকসান করেছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে গত অর্থবছরেও লোকসান হয়েছে ২ টি কোম্পানির। তাছাড়া, অন্য দুটি কোম্পানি গত অর্থবছরে মুনাফায় ফিরেছে। এর আগের অর্থবছর সে দুটি কোম্পানির লোকসান হয়েছিল।
ওষুধ শিল্পের অভ্যন্তরীণ সূত্রের তথ্যমতে, ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের বার্ষিক মুনাফা এই দশকে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা গত পাঁচ বছর ধরে ১২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া, ২০২০-২১ অর্থবছরে এই শিল্পকে ১৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করেছে করোনা মহামারি।
দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৫০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফার ক্লাবে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং রেনাটা। গেল অর্থবছরে উচ্চ প্রবৃদ্ধির কথা জানিয়েছে কোম্পানিগুলো।
তাছাড়া, এই অর্থবছরে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মুনাফা ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্মিলিত আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৪৯ টাকা। গেল অর্থবছরে তা ছিল ৭ দশমিক ৮৮ টাকা। কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, ব্যবসার অরগানিক বৃদ্ধি থেকে তাদের লাভ বেড়েছে। ভ্যাকসিন বিতরণের মাধ্যমে আয় এবং রপ্তানি থেকে নগদ প্রণোদনা বৃদ্ধি থেকে লাভের একটি অংশ এসেছে।
ওষুধ শিল্পের শীর্ষস্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের মুনাফা বেড়েছে ১৯ শতাংশ। কোম্পানিটির ইপিএস গত বছরের ১৫ দশমিক ৭ টাকা থেকে বেড়ে ১৭ দশমিক ৯৯ টাকা হয়েছে। একটি বার্ষিক ঘোষণায় কোম্পানিটি জানায়, ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের বিক্রি ইপিএসে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অন্যদিকে রেনাটার মুনাফা বেড়েছে ২৬ শতাংশ। কোম্পানিটির ইপিএস আগের বছরের ৪১ দশমিক ১৪ টাকা থেকে বেড়ে ৫১ দশমিক ৯৪ টাকা হয়েছে।
এদিকে, নতুন অর্থবছরে ওরিয়ন ফার্মার মুনাফা বেড়েছে ৪১ শতাংশ। কোম্পানির ইপিএস ২ দশমিক ৮৪ টাকা থেকে বেড়ে ৪ দশমিক ১ টাকা হয়েছে।
ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের মুনাফা ২৬ বেড়েছে। এর ইপিএস আগের অর্থবছরে ১২ দশমিক ৫৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৫ দশমিক ৬৬ টাকা হয়েছে।
ইবনে সিনার সেক্রেটারি মোঃ কবির হোসেন সম্প্রতি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মহামারিতে ওষুধ বিক্রির ফলে আমাদের আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ফলস্বরূপ, আগের বছরের তুলনায় লাভের পরিমাণও বেড়েছে।"
এদিকে দেশের অন্যতম বৃহত্তম সংস্থা এবং ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (এসিআই) লিমিটেড গত অর্থবছরে লাভে ফিরে এসেছে৷ চলতি অর্থবছরে এসিআইয়ের ইপিএস ৫ দশমিক ৫ টাকায় পৌঁছেছে। আগের বছর এর শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১৬ দশমিক ৭৮ টাকা।
কৃষি রাসায়নিক প্রস্তুতকারক এবং সরবরাহকারী ফর্মুলেশনের লাভ গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ১৩০ শতাংশ। এর ইপিএস ২ দশমিক ৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ দশমিক ৭৪ টাকা।
এছাড়াও, অ্যাকমি ল্যাবরেটরিজ, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস, কোহিনুর কেমিক্যালস কোম্পানি (বাংলাদেশ), এবং সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালসের মুনাফাও গত অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে। অন্যদিকে, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পড়েছে লোকসানে। ফলে, নিজেদের শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ প্রদান করবে না তারা।
লোকসানকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে নতুন যুক্ত হয়েছে ফার কেমিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজ ফার্মা। তবে, লোকসান সত্ত্বেও কোম্পানিটি ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেবে।
- ইংরেজিতে মূল স্টোরি পড়ুন: Most pharma companies post higher annual profits