কপ-২৬ সম্মেলনের চূড়ান্ত অঙ্গীকারনামার বিরোধিতায় চীন ও ভারতসহ ২২ দেশ
কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনের খসড়া অঙ্গীকারনামা থেকে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের পুরো অংশটি সরিয়ে ফেলার আহবান জানিয়ে স্বাক্ষর করেছে চীন ও ভারতসহ উন্নয়নশীল দেশের জোট লাইক মাইন্ডেড ডেভলপিং কান্ট্রিজের (এলএমডিসি) ২২ সদস্য দেশ।
উন্নত দেশগুলো জলবায়ু সংকটের দায়ভার উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে বলে জানান এলএমডিসি জোটের প্রতিনিধি ও বলিভিয়ার প্রধান সমঝোতাকারী ডিয়েগো পাচেকো।
গ্লাসগোতে এক গণমাধ্যম সম্মেলনে পাচেকো বলেন, "প্রশমনের অধ্যায়টি পুরোপুরি সরিয়ে ফেলতে আমরা প্রেসিডেন্সিকে অনুরোধ জানিয়েছি।"
এলএমডিসির বক্তব্য অনুযায়ী, কার্বন নিঃসরণ কমাতে উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলোকে বেঁধে দেওয়া সময়সীমা এক হওয়া উচিত নয়।
জলবায়ু সংকটের পেছনে ঐতিহাসিকভাবে উন্নত দেশগুলোর দায় বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, একই সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ধনী দেশগুলো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের ওপর দায়ভার চাপাতে চাচ্ছে।
"ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার আলোচনায় ইতিহাস ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে," বলেন তিনি।
চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ নেট জিরো নিঃসরণ অর্জন স্বাক্ষরকারী অনেক দেশের জন্যই সম্ভব হবে না।
যেমন, ভারত ও চীনের মতো দেশগুলো মূলত কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানির মতো প্রচলিত জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ মুক্ত হতে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে। কিন্তু সেজন্য বিপুল বিনিয়োগের প্রয়োজন। দেশগুলোর পক্ষে এত স্বল্প সময়ে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়।
তবে চূড়ান্ত চুক্তিপত্র থেকে পুরো একটি অধ্যায় বাদ দেওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এই আহবানটি দেশগুলোর জন্য একটি সাহসী পদক্ষেপ, যা কপ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যকার দূরত্বকেই তা নির্দেশ করছে।
তবে, কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শও দিয়েছে তারা। সেখানে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ভিন্ন নীতি অবলম্বনের প্রতি জোর দেওয়া হয়।
চূড়ান্ত চুক্তির জন্য কপ-২৬ এর আলোচনায় অংশ নেওয়া ১৯৭ অংশীদার দেশকে একমত পোষণ করতে হবে।
প্রশমনের এই অধ্যায়ে উষ্ণতা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস না বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্যারিস চুক্তিতে এই তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত রাখা হয়েছিল।
বেশ কয়েকটি নাগরিক সংগঠন এলএমডিসির এই অবস্থানের নিন্দা জানিয়েছে। আলোচনায় গুরুত্ব লাভের আশায় দেশগুলো বাড়াবাড়ি করছে বলেও মন্তব্য করেছে তারা।
"প্রশমন অধ্যায়ের পুরোটাই মুছে ফেলার দাবি জলবায়ু সংকটে ভুক্তভোগী মানুষের জন্য এক চূড়ান্ত আঘাত," বলেন অ্যাকশন এইড ইন্টারন্যাশনালের জলবায়ু নীতি সমন্বয়কারী তেরেসা অ্যান্ডারসন।
- সূত্র: সিএনএন