চিড়িয়াখানা নয়, জেলখানা!
আমার এখনও মনে আছে, ১৪ বছর বয়সে ছোট ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছিলাম আমি। অন্য সবার মতো, আমরাও গিয়েছিলাম চিড়িয়াখানায় বেড়াতে। ওই বয়সে আমি যা দেখেছিলাম, তা খুবই বিনোদনদায়ক বলে মনে হয়েছিল আমার।
কিন্তু আজ আমার প্রাণীদের খাচাঁবন্দি বা বেঁধে রাখা অবস্থায় দেখতে খুব কষ্ট হয়। বিনোদনের উদ্দেশ্যে পশু-পাখিদের সঙ্গে এমন নির্দয় আচরণ একদমই অনুচিত।
চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যাওয়া শিশুদের বন্যজীবন সংরক্ষণ ও প্রাণী নৈতিকতা সম্পর্কে সঠিক বার্তা দেয় না। বেশিরভাগ শিশুই চিড়িয়াখানায় যায় বিনোদনের উদ্দেশ্যে। শিক্ষার্জনের প্রতি নজর থাকে খুব কম শিশুরই।
প্রাণীদেরকে দেখা উচিত তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে, যেখানে তারা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করে, এবং যেখানে তাদের জীবন কাটানোরই কথা।
আমরা যদি বনে-জঙ্গলে গিয়ে প্রাণীদের দেখতে না পারি, তাহলে আমরা এই অসাধারণ বন্যপ্রাণীদের সম্পর্কে জানতে পারি ওয়াইল্ডলাইফ ভিডিও বা টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখে, কিংবা তাদের সম্পর্কে ইন্টারনেটে, বইয়ে বা ম্যাগাজিনে পড়ে।
চিড়িয়াখানার বড় সমস্যা হলো, সেখানে প্রাণীদের রাখা হয় চারদিক পরিবেষ্টিত অবরুদ্ধ অবস্থায়। এমন পরিবেশ প্রাণীদের স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনের সুযোগ দেয় না।
কিছু কিছু চিড়িয়াখানা হয়তো প্রাণীদের আটকে রাখার জায়গাগুলোকে অনেক বড় করে তৈরি করে, সেখানে গাছগাছালির ব্যবস্থা করে, পেছনের দেওয়ালে চমৎকার সব চিত্রাঙ্কন করে। কিন্তু যত ধরনের চেষ্টাই করা হোক না কেন, প্রাণীদের প্রাকৃতিক পরিবেশের অভাব দূর করা সম্ভব না।
আমি আমার ছবির মাধ্যমে আমাদের সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে প্রাণীদেরও জীবন আছে। এবং দিনশেষে আমরা সকলেই, জীবন্ত প্রাণী। তাই চলুন আমরা সবাই ভালোবাসা ও সহমর্মিতায় বাঁচি।
এনামুল কবির ২০১৩ সালে তার ভালোবাসার জায়গা থেকে ফটোগ্রাফি শুরু করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তার কাজগুলো প্রদর্শিত ও প্রকাশিত হয়েছে। সনি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, স্যান ফ্রান্সিসকো স্ট্রিট ফটো অ্যাওয়ার্ড, ব্রাসেলস স্ট্রিট ফটো অ্যাওয়ার্ড, অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রিট ফটো অ্যাওয়ার্ড, আর্বান ফটো অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।