আল্লাহর ওয়াস্তে দেশের মানুষের কথা ভেবে তেলের দাম কমান: সংসদে চুন্নু
জাতীয় সংসদে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সমালোচনা করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু ও রুস্তম আলি ফরাজী। বিরোধী দলের এ দুই সাংসদ বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ানোর বিরূপ প্রভাব মানুষের জীবনযাত্রার সবক্ষেত্রে পড়েছে।
জনগণকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা। তবে দাম কমানো সম্ভব না হলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান দুই সাংসদ।
আজ রোববার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অভ অর্ডারে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ আজ ভালো নেই। গত দু-বছরের কোভিডে সর্বস্তরের মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
'যখন মানুষ সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠছিল, ঠিক সেই সময় বলা নেই, কওয়া নেই, কোনো প্রস্তুতি নেই, মানুষকে না জানিয়ে, পূর্ব নোটিশ না দিয়ে, হঠাৎ করে ডিজেলের মূল্য ২৩ শতাংশ বাড়ানো হলো। বিগত কয়েক বছরে কোনো তেলের দাম একবারে এত বেশি বাড়ানো হয়নি।'
শুক্র ও শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'গত বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) এই দাম বাড়ানো হয়। শুক্রবার ও শনিবার চাকরির পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষা হয়। তেলের দাম বাড়ানোর সাথে সাথে সকল পরিবহন ধর্মঘট শুরু করে। আমি নিজে গিয়েছিলাম। মানুষের চরম দুর্ভোগ। তারা কীভাবে পরীক্ষা দিবে? সমস্ত বাস বন্ধ, ট্রাক বন্ধ। তার তিন দিন পরে ট্রান্সপোর্ট মালিকদের সাথে সরকারের আলাপ হলো।'
পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ট্রান্সপোর্ট মালিকরা তো বৃদ্ধি করবে, যেহেতু তেলের দাম বেড়েছে। কিন্তু কতটুকু বৃদ্ধি করবেন? বাস ভাড়া প্রায় ২৭ শতাংশ, লঞ্চ ভাড়া প্রায় ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি করেছেন। তেলের দাম বাড়ার তুলনায় ভাড়া অনেক বেশি বাড়িয়েছেন।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পরিবহন ভাড়া বাড়ানোর কোনো সমন্বয় নেই কেন?
মুজিবুল হক চুন্নু আরও বলেন, তেলের দাম যখন আন্তর্জাতিক বাজারে কম ছিল, পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন তখন প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। এই সরকার যেহেতু জনগণের সরকার, তাই জনগণের কথা চিন্তা করে কোভিড-পরবর্তী সময়ে মূল্যবৃদ্ধি না করে কি বিকল্প কিছু করা যেত না? তেলের দামের সাথে শুধু পরিবহন ভাড়া নয়, অন্যান্য অনেক কিছু জড়িত। এমনিতেই বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আরও অন্যান্য পণ্যের মূল্য আরও বাড়ছে।
মানুষ খুব খারাপ অবস্থায় আছে মন্তব্য করে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, 'আল্লাহর ওয়াস্তে আপনি দেশের মানুষের কথা ভেবে তেলের দাম কমান। অথবা বিকল্প কোনো একটা ব্যবস্থা করেন। আমি যতদূর জানি আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে।'
জাতীয় পার্টির আরেক সাংসদ রুস্তম আলি ফরাজী বলেন, মানুষের এক কথা, হঠাৎ করে তেলের দাম কেন বেড়ে গেল? এতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে যাতায়াত খরছ আগের চেয়ে বেশি লাগছে। দ্রব্যমূল্যও বেড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, 'প্রতিবেশী দেশ স্পর্শকাতর এই জ্বালানির মূল্য না বাড়িয়ে ঠিক রেখেছে। আমাদের সরকারও ইচ্ছা করলে এটা ঠিক করতে পারে এবং করা উচিত ছিল। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম কমে যায়, তখন আমাদের দেশে কমায় না।'
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে গেছে মন্তব্য করে রুস্তম আলি বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদকে নতুন করে ভাবা উচিত। জনগনের কথা ও তাদের স্বার্থ প্রথমে বিবেচনা করে তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুর্বিবেচনার দাবি জানান তিনি। হয় ডিজেলের মূল্য কমানো, নয়তো ভর্তুকির ব্যবস্থা করার আহবান জানান তিনি।