৬০০ বছরের মধ্যে দীর্ঘতম চন্দ্রগ্রহণ, দেখা যাবে বাংলাদেশ থেকেও
এ শতাব্দীর দীর্ঘতম আংশিক চন্দ্রগ্রহণ আজ (১৯ নভেম্বর)। প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে চলবে এই চন্দ্রগ্রহণ। গত ৬০০ বছরেও এতো দীর্ঘ সময় ধরে চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা ঘটেনি। এতটা সময় ধরে আর ঘটবেনা এই শতাব্দীতেও।
চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের রঙ হবে প্রায় রক্তের মতো লাল। একে 'ব্লাড মুন' বা 'বিভার মুন' বলা হয়।
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দুপুর ১টা ১৯ মিনিট থেকে মূল চন্দ্রগ্রহণ হয়েছে। ৬ ঘণ্টা আংশিক চন্দ্রগ্রহণ চললেও প্রায় পূর্ণ-চন্দ্রগ্রহণ চলবে ৩ ঘণ্টা ২৮ মিনিট ২৩ সেকেন্ড।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আকাশ পরিষ্কার থাকলে বাংলাদেশ থেকেও দেখা যাবে এই বিরল ঘটনা। সেক্ষেত্রে ঢাকায় বিকেল ৫: ১৩ থেকে ৬: ০৫ পর্যন্ত দেখা যাবে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ।
এটি চলতি বছরের দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ চন্দ্রগ্রহণ। প্রথমটি হয় ২৬ মে। এছাড়া, এবছর সূর্যগ্রহণও হবে দুটি। প্রথমটি হয়েছিল জানুয়ারিতে, দ্বিতীয়টি হবে ডিসেম্বরে।
সূর্য, পৃথিবী এবং চাঁদ যখন একই সরলরেখায় চলে আসে তখনই চন্দ্রগ্রহণ ঘটে। চাঁদের নিজস্ব আলো না থাকায় সূর্যের আলোয় আলোকিত হয় সে। যখন পৃথিবী চাঁদ ও সূর্যের মাঝে চলে আসে, তখনই চন্দ্রগ্রহণ ঘটে। অর্থাৎ, চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবী চাঁদের আলোয় নিজের ছায়া দেখতে পায়।
৬০০ বছরে দীর্ঘতম আংশিক চন্দ্রগ্রহণ
আমেরিকার ইন্ডিয়ানায় বাটলার বিশ্ববিদ্যালয়ের হলকোম্ব অবজারভেটরি ও নাসা জানিয়েছে, ৬০০ বছরের মধ্যে দীর্ঘতম আংশিক চন্দ্রগ্রহণটি শুক্রবার চিন, জাপান, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং, মঙ্গোলিয়া, ম্যাকাও-সহ গোটা পূর্ব এশিয়ায় দেখা যাবে। এছাড়া, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, প্রশান্ত মহাসাগরের আশেপাশের দেশগুলোতেও দেখা যাবে এটি।
পূর্ণিমার চাঁদের আকারের চেয়ে কিছুটা ছোট হবে শুক্রবারের চাঁদ। পৃথিবীর ছায়ায় সেই চাঁদের ৯৭.৪ শতাংশই ঢাকা পড়ে যাবে বলে জানান তারা। ফলে, আক্ষরিক অর্থে আংশিক হলেও শুক্রবারের চন্দ্রগ্রহণ অনেকটা পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণই।
শুক্রবারের পূর্ণিমার চাঁদের রং অবশ্য পুরোপুরি লাল হবে না। চাঁদের মাত্র ৩ শতাংশ আলোকিত হবে সূর্যালোকে।
পৃথিবীকে চাঁদ যে কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে, তার আকারের উপর নির্ভর করে চন্দ্রগ্রহণের সময়। পৃথিবীকে একটি উপবৃত্তাকার পথে প্রদক্ষিণ করে চাঁদ। প্রদক্ষিণের সময় চাঁদ পৃথিবীর কাছে চলে এলে পূর্ণিমার চাঁদের আকার বড় হয়। দূরে গেলে হয়ে যায় ছোট। শুক্রবারের পূর্ণিমার চাঁদ পৃথিবী থেকে এ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করছে। ফলে শুক্রবারের পূর্ণিমার চাঁদ হবে এ বছরে সবচেয়ে ছোট আকারের।
পৃথিবী থেকে দূরে থাকায় চাঁদের উপর পৃথিবীর যে ছায়াটা পড়বে তার আকার অনেকটাই বড়। এই কারণেই দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হবে চন্দ্রগ্রহণ।
চাঁদের রং হবে রক্তের মতো লাল
সূর্যালোকের সাদা আলোর মধ্যেই রয়েছে লাল থেকে নীল সাতটি রঙের বর্ণালী। এদের মধ্যে তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম নীল আলোর। কিন্তু এই নীল আলোর মধ্যে রয়েছে আরও দুটি রঙ- বেগুনি ও আসমানী। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্য সম্পন্ন আলো লাল। এই রঙের মধ্যেও রয়েছে দুটি রঙ- লাল ও কমলা।
লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় তা বায়ুমণ্ডল ভেদ করে সহজেই পৃথিবীতে আসতে পারে। তাই আংশিক গ্রহণের সময় চাঁদকে লাল রঙেই বেশি দেখা যায়।