স্কুল বন্ধ রেখে ২৪ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বনভোজন
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ২৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বনভোজনে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে ওই বিদ্যালয়গুলোতে রোববার ক্লাস হয়নি।
বনভোজনে অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষকের দাবি, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তাদেরকে পেশাগত সমস্যা সৃষ্টির ভয় দেখিয়ে বনভোজনে যেতে বাধ্য করা করেছেন।
একাধিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিরা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফয়সল জামিল ও সহকারী শিক্ষা অফিসার পলাশ সরদারের উদ্যোগে ওই বনভোজনের আয়োজন করা হয়। গৌরনদী সদর ক্লাস্টারের ২৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট ১১৫ জন শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রোববার সকালে তিনটি বাসে করে বনভোজনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
ফলে রোববার উপজেলা সদর ক্লাস্টারের ২৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ ছিল। এ ঘটনায় বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিরা আরো অভিযোগ করেন, বনভোজন সফল করার লক্ষ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফয়সল জামিল ও সহকারী শিক্ষা অফিসার পলাশ সরদারের উদ্যোগে গত ৯, ১১ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি গৌরনদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন দফা প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সভা থেকে বনভোজনের জন্য শিক্ষকদের জনপ্রতি এক হাজার ২০০ টাকা চাঁদা নির্ধারিত করা হয়। কোনো শিক্ষক বনভোজনে যেতে না চাইলে তাকেও চাঁদা দিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গৌরনদী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতিকুর রহমান শামীম জানান, কয়েকজন শিক্ষক তার কাছে অভিযোগ করেছেন বনভোজনে অংশ না নিলে শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সল জামিল ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পলাশ সরদার তাদেরকে পরবর্তী সময়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এ কারণে বাধ্য হয়েই তারা বনভোজনে অংশ নিয়েছেন।
গৌরনদী উপজেলার হরিসেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিলন খলিফা বলেন, তার বিদ্যালয়টি সেদিন বন্ধ ছিল। শিক্ষকদেরকে ঐচ্ছিক ছুটি নিতে বাধ্য করা হয়েছে।
‘‘একজন শিক্ষকের শিশু সন্তান অসুস্থ্য থাকায় তিনি পিকনিকে যেতে রাজি হননি। তাকেও চাঁদা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এমনকি তাকে ঐচ্ছিক ছুটি নিতেও বাধ্য করা হয়েছে।’’
অভিযোগ প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফয়সল জামিল বলেন, এটা বনভোজন নয়, এটা শিক্ষা সফর। এই বনভোজনের আয়োজন সম্পর্কে আমি কিছুই বলতে পারবোনা।
‘‘আমি আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে শিক্ষকদের শিক্ষা সফরে গিয়েছি। সফরের বিষয়ে সহকারী শিক্ষা অফিসার পলাশ সরদার ভাল বলতে পারবেন।’’
সহকারী শিক্ষা অফিসার পলাশ সরদার বলেন, যশোরের কোনো পার্কে নয়, তারা জাতীয় পদকপ্রাপ্ত মাগুরা জেলার আরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা সফরে গেছেন। উপজেলার ১৩১টির মধ্যে সদর ক্লাস্টারের ২৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯০ জনের মতো শিক্ষক এ সফরে গিয়েছিলেন।
যশোরে যাওয়ার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে তিনি বলেন, ‘‘মাগুরায় ভালো খাবার ব্যবস্থা না থাকায় যশোরের বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্কে খাওয়ার জন্য গিয়েছিলাম।’’
চাঁদা আদায়ের তিনি বলেন, ‘‘কাউকে চাঁদা দিতে বাধ্য করা হয়নি। শিক্ষকরা তাদের খুশিমত দিয়েছেন।’’
পলাশ সরদার বলেন, শিক্ষা সফরের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আগেই জানানো হয়েছিল। তাদের অনুমতি সাপেক্ষেই এই সফরের আয়োজন করা হয়েছে।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান জানান, ‘‘উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শিক্ষা সফরে যাবেন বলে আমাকে জানিয়েছিলেন। তবে তারা কর্মদিবসে স্কুল বন্ধ রেখে শিক্ষকদের নিয়ে সফরে যাবেন- এমনটা জানানো হয়নি। এটা তারা ঠিক করেননি।’’
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার লতিফ মজুমদার বলেন, ‘‘ঘটনাটি আমি আজকে জেনেছি। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।’’