প্রেমের টানে উত্তরপ্রদেশে বাংলাদেশি তরুণী, অবশেষে শ্রীঘরে!
বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের মেয়ে ফারজানা খাতুন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডানে কাজ করতেন ২৬ বছর বয়সী এই তরুণী। হঠাৎ একদিন ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয় ভারতের উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা গুলশান রাজভারের সঙ্গে। ফেসবুকের সেই বন্ধুত্ব একসময় প্রেমে গড়ায়, আস্তে আস্তে একে অপরের মনের খুব কাছাকাছি চলে আসেন তারা। কিন্তু মনের মিলন হলেও, সরাসরি প্রেমিকের সান্নিধ্য পাওয়ার উপায় ছিল না ফারজানার। কারণ দুজন যে থাকেন দুটি আলাদা দেশে!
তবে ফারজানাও বিরহ বুকে নিয়ে বসে থাকার পাত্রী নন! প্রেমের জন্য দিওয়ানা হয়ে যুগে যুগে কত মানুষ কত অসাধ্যই না সম্ভব করেছে। ফারজানাও তাই মনের মানুষকে আপন করে নিতে পা বাড়ান এক দুঃসাহসিক পথে। গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে নৌকায় করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছান তিনি। সেখান থেকে বাসে কলকাতায় যান। কলকাতায় আগে থেকেই তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন প্রেমিক গুলশান। এরপর দুজনে মিলে উত্তরপ্রদেশের মৌ কোপাগঞ্জ নামক জায়গায় চলে যান। কারণ সেখানেই গুলশানের বাড়ি।
এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে, ভারতে প্রবেশের বেলায় বৈধ পথ অবলম্বন করেননি ফারজানা। স্বামী-স্ত্রীর মতো জীবনযাপন করতে এবং বিয়েকে আইনি মর্যাদা দিতে প্রথমে জাল আধার কার্ড তৈরি করেন এই তরুণী। প্রেমিক গুলশানই তাকে এ কাজে সাহায্য করেন।
মৌ অঞ্চলে এসে ফারজানাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন গুলশান। সোনা রাজভার নাম দিয়ে ফারজানাকে একটি জাল আধার কার্ড তৈরি করে দেন তিনি। শুধু তাই নয়, জাল পদ্ধতিতে বিয়ের হলফনামাও পেয়ে যান তারা।
বিদেশে কোথাও চাকরি করার উদ্দেশ্যে ফারজানার ভুয়া পাসপোর্টও তৈরি করা হয়। এসবিআইতেও (স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া) একাউন্ট খোলেন তারা।
ফারজানা ও গুলশান হয়তো সুখে-শান্তিতেই দিন পার করতেন, যদি না এক বছর পর বিষয়টি পুলিশের কানে পৌঁছাত। বিষয়টি জানার পরই পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে ঘটনার তদন্তে নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু পুরো ঘটনা জানার পর এবং ভালোবাসার জন্যে দুজনের অদম্য প্রয়াস দেখে হতবাক হয়ে যান পুলিশেরাও। অবশেষে গত রবিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভারতীয় পুলিশ ফারজানা ও গুলশানকে আটক করে।
পুলিশ সুপার সুশীল ঘুলে জানান, তারা দুজনেই অন্য কোথাও পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ব্রহ্মস্থান এলাকার ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের কাছে থেকে তাদের দুজনকে আটক করে নগর কোতয়ালি থানার পুলিশ। তাদের কাছ থেকে দুটি জাল ভারতীয় পাসপোর্ট, একটি বাংলাদেশের পাসপোর্ট, জাল আধার কার্ড, ব্যাংকের পাসবুক এবং জাল বিয়ের হলফনামা উদ্ধার করা হয়।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস