লাইট, ক্যামেরা...আছে কেউ! ইউরোপে কর্মী খুঁজে পাচ্ছে না হলিউড!
করোনা মহামারির সময় প্রকাশ্যে লোকজমায়েত নিষিদ্ধ ছিল ইউরোপ-আমেরিকায়। তবে মধ্য-ইউরোপে সিনেমার শুটিং করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে মহামারিকালে। তাই গোটা হলিউড ভিড় জমাতে থাকে ওই অঞ্চলে। চমৎকার লোকেশন আর কর ছাড়ের কারণে অঞ্চলটি সিনেমা কোম্পানিগুলোর কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
তবে লকডাউনের কারণে এতগুলো প্রোডাকশন কোম্পানিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে মানসম্পন্ন কর্মচারী সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে মধ্য-ইউরোপ। ফলে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, অ্যাপলের মতো বড় কোম্পানিগুলোর সিনেমা ও টিভি শো নির্মাণ হোঁচট খাচ্ছে।
পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ স্টুডিও হাঙ্গেরির কোর্দা স্টুডিওস রয়টার্সকে জানিয়েছে, মান ধরে রাখার জন্য তারা টিভি শো ও সিনেমা নির্মাণের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। অল্প সংখ্যক কর্মী নিয়ে বেশি পরিমাণ কাজ করার নতুন নতুন উপায় বের করতে হচ্ছে তাদের।
স্টুডিওটির চিফ এক্সিকিউটিভ গিয়র্গি রাজনাই জানান, তারা এখন চার দেয়ালওয়ালা বাড়ি না বানিয়ে তিন দেয়ালওয়ালা বাড়ি বানাচ্ছেন।
এছাড়াও সঙ্কট সামাল দিতে স্লোভাকিয়া, রোমানিয়া, ক্রোয়েশিয়ার মতো দেশ থেকে ক্যামেরা ও সেট-নির্মাণ ক্রু নিয়ে আসছে কোর্দা।
অন্যান্য প্রোডাকশন কোম্পানি কম অভিজ্ঞ কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে। কখনও কখনও তো একেবারেই নতুনদের নিয়োগ দিতে হচ্ছে।
রাজনাই জানান, ক্রু না পেলে মাঝেমধ্যেই কোনো কোনো প্রকল্প থেকে তাদের সরে দাঁড়াতে হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে মধ্য-ইউরোপে নির্মাণ করা হয়েছে সায়েন্স ফিকশন সিনেমা 'ড্যুন' এবং ফ্যান্টাসি সিরিজ 'দ্য হুইল অভ টাইম'। এখন এই অঞ্চলের মূল সমস্যা হচ্ছে দক্ষ প্রোডাকশন কর্মীর ঘাটতি।
কর্মীর এই ঘাটতি বিশ্বজুড়েই চলছে, এবং আগামী কয়েক বছরও এ সমস্যা থাকবে লন্ডনভিত্তিক চলচ্চিত্র শিল্প পরামর্শক সংস্থা ওলসবার্গ এসপিআই-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান জনাথন ওলসবার্গ।
দক্ষ ক্রু, কম শ্রমিক মজুরি ও কর প্রণোদনার কারণে গত দশকে চেক প্রজাতন্ত্র ও হাঙ্গেরি ছিল চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য। এই অঞ্চল এখন ব্রিটেনের পরই সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র নির্মাণ কেন্দ্র। এ দুই দেশের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর প্রাচীন সব দুর্গ ঐতিহাসিক ও ফ্যান্টাসি সিনেমা ও সিরিজের শুটিংয়ের জন্য আদর্শ।
এ বছর চেক প্রজাতন্ত্র ও হাঙ্গেরিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রকল্পে বিনিয়োগ ৪০৫ মিলিয়ন ছাড়ানোর পথে, যা ২০১৯ সালের বিনিয়োগের চেয়ে বেশি হবে।
এ অঞ্চলের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে, 'গ্রে ম্যান'-এর মতো বড় প্রকল্পগুলো—যার শুটিং শেষ হয়েছে প্রাগে—প্রচুর স্থানীয় মেধাবী কর্মী নিয়ে নিচ্ছে। ফলে অন্যান্য প্রকল্পে দেখা দিচ্ছে দক্ষ কর্মী সংকট।
প্রাগভিত্তিক ফিল্ম স্টুডিও ড্যাজল পিকচারস রয়টার্সকে জানিয়েছে, প্রতিদিন তাদের সঙ্গে সারা বিশ্ব থেকে সম্ভাব্য গ্রাহকরা যোগাযোগ করছে সিনেমা ও টিভি শো শেষ করার জন্য সাহায্য পেতে।
এই সংকটের ফলে বেশি বেতনের লোভ দেখিয়ে এক কোম্পানির কর্মী অন্য কোম্পানি ভাগিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে।
তবে এই সংকট অনেকের জন্যই শাপে বর হয়ে এসেছে। ২০ বছর ধরে সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ভোজতা রুজিকা। 'মিশন ইমপসিবল ৪', 'ক্যাপ্টেন আমেরিকা: দ্য উইন্টার সোলজার'-এর মতো সিনেমায় কাজ করেছেন। তিনি মনে করেন, চলচ্চিত্র শিল্পে উন্নতি করার সুযোগ খুঁজছে যারা, তাদের জন্য এ এক সুবর্ণ সুযোগ।
রয়টার্সকে তিনি বলেন, 'লোকে যদি চোখকান খোলা রাখে এবং চলচ্চিত্র শিল্পে কাজ করতে চায়, এখনই তাদের জন্য সেরা সময়।'