ফেসবুকের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ১৫০ বিলিয়ন ডলারের মামলা
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য ছড়ানোর অনুমতি দেওয়ার অভিযোগে ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থী।
ফেসবুকের (বর্তমানে মেটা) প্ল্যাটফর্মগুলো নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রচার করায় এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে তারা ১৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি দাবি করছে। তবে, এই অভিযোগের কোনো তাৎক্ষণিক জবাব দেয়নি কোম্পানিটি।
কোম্পানির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই 'ঘৃণামূলক এবং বিপজ্জনক ভুল তথ্যের প্রচার বছরের পর বছর ধরে চলতে দেওয়ার' অভিযোগ তোলা হয়।
যুক্তরাজ্যে কিছু শরণার্থীর প্রতিনিধিত্বকারী একটি ব্রিটিশ আইন সংস্থা ফেসবুকে একটি অভিযোগপত্র পোস্ট করে। এতে লেখা ছিল, ফেসবুকের অ্যালগরিদম 'রোহিঙ্গা জনগণের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য' প্রচারে সহায়তা করেছে। এছাড়া, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দেয় এমন পোস্ট সরিয়ে ফেলতে বা অ্যাকাউন্ট অচল করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। এমনকি দাতব্য সংস্থা এবং মিডিয়ার সতর্কতা সত্ত্বেও কোম্পানিটি 'যথাযথ এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ' নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে তারা।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবীরা সান ফ্রান্সিসকোতে ফেসবুকের বিরুদ্ধে একটি আইনি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
রয়টার্স নিউজ এজেন্সির একটি তদন্তে প্রকাশিত ফেসবুক পোস্টগুলোকে উদ্ধৃত করেছেন তারা। এর মধ্যে ২০১৩ সালের একটি পোস্টে লেখা ছিল: "হিটলার ইহুদিদের সাথে যা করেছিল আমাদেরও তাদের সাথে তা করতে হবে।"
অন্য একটি পোস্টে লেখা: "তাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দাও যাতে তারা দ্রুত আল্লাহর সাথে দেখা করতে পারে।"
মিয়ানমারে ফেসবুকের দুই কোটিরও বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে। অনেকের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া সাইট খবর পাওয়া এবং শেয়ার করার প্রধান বা একমাত্র উপায়।
২০১৮ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং ঘৃণামূলক বক্তব্যের প্ররোচনা রোধে যথেষ্ট কাজ না করার বিষয়টি স্বীকার করে ফেসবুক।
রোহিঙ্গাদেরকে বরাবরই মিয়ানমারে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দেখা হয় এবং তারা কয়েক দশক ধরে সরকার ও জনসাধারণের বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
২০১৭ সালে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা পুলিশ পোস্টে মারাত্মক হামলা চালানোর পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে সহিংস ক্র্যাকডাউন শুরু করে।
সেবছর প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হন। এই অভিযানের কারণে ৭ লাখ এরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ ও জমি পুড়িয়ে ফেলাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে।
এরপরের বছর ফেসবুকের ওপর অনলাইনে ঘৃণা ছড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় 'ধীরগতি এবং অকার্যকারিতার' অভিযোগ আনে জাতিসংঘ।
মার্কিন আইনের অধীনে, ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের পোস্ট করা বক্তব্যের দায় থেকে মুক্ত। কিন্তু নতুন মামলায় মিয়ানমারের আইনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
- সূত্র: বিবিসি