ফাইভ-জি যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ
ফাইভ-জি যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। আজ রোববার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিকম অপারেটর টেলিটক পরীক্ষামূলকভাবে ছয়টি স্থানে এই পরিষেবা চালু করতে যাচ্ছে।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, সাভারে জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ, বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ধানমন্ডি-১৩ ও ঢাকার শেরেবাংলা নগরে আজ থেকে চালু হবে এই সেবা।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সন্ধ্যা ৭টায় ভার্চুয়ালি সেবাটির উদ্বোধন করবেন। রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনের অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারসহ অন্যরাও অংশ নেবেন।
ফাইভ-জি টেলিকম পরিষেবা নিশ্চিত করতে, টেলিটক ইতোমধ্যে চীনা আইসিটি সল্যুশন প্রোভাইডার হুয়াওয়ে ও ফিনল্যান্ড ভিত্তিক নকিয়ার সঙ্গে অংশীদারিত্ব করছে।
এই দুটি কোম্পানি পরীক্ষামূলকভাবে দেশের ছয়টি সাইটে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক স্থাপনে টেলিটককে পরিকাঠামো ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে।
ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালু হওয়ার পর, ব্যবহারকারীরা দ্রুততর ইন্টারনেট ও বিঘ্নহীন টেলিযোগাযোগ পরিষেবা উপভোগ করবেন।
টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শাহাব উদ্দিন বলেন, "হুয়াওয়ে চারটি সাইটের জন্য প্রযুক্তি সরবরাহ করবে এবং নকিয়া করবে দুটি সাইটের জন্য।"
এ লক্ষ্যে হুয়াওয়ে ও নকিয়ার সঙ্গে পৃথক চুক্তি করেছে টেলিটক।
বাণিজ্যিক ও সরকারি অফিসে ঢাকা মেট্রোপলিটন অঞ্চলে ক্লাস্টার ভিত্তিক স্থাপনার মাধ্যমে ২০২২ সালের মধ্যে ২০০টি সাইটে বাণিজ্যিক ট্রায়াল বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রযুক্তিটি ক্লাউড ভিত্তিক ওয়্যারলেস রোবট কন্ট্রোল, ওয়্যারলেস ই-হেলথ ও সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোতে প্যানোরামিক লাইভ সম্প্রচার করবে।
হুয়াওয়ে বাংলাদেশের প্রধান প্রযুক্তিগত কর্মকর্তা কেভিন জু এক বিবৃতিতে বলেন, ফোর-জি জীবন বদলে দিয়েছে, ফাইভ-জি সমাজকে বদলে দেবে। এবং আমরা সেই যাত্রার মূল উদ্যোগের অংশ হতে পেরে আনন্দিত। আমরা একটি উচ্চতর ফিইভ-জি নেটওয়ার্কের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করতে টেলিটকের সঙ্গে অংশীদার হবো।"
"প্রাথমিকভাবে, আমরা প্রাথমিক ফাইভ-জি সাইটগুলোর ৬৫ শতাংশের বেশি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হুয়াওয়ে ২১ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি বাংলাদেশে কাজ করছে এবং আমরা আগামীতেও দায়িত্বের সঙ্গে এই যাত্রা চালিয়ে যাব", তিনি আরও বলেন।
বলে রাখা ভালো, ২০০৯ সাল থেকে হুয়াওয়ে ফাইভ-জি আর অ্যান্ড ডি-তে বিনিয়োগ করছে। পরবর্তীকালে, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে কোম্পানিটি ফাইভ-জি পণ্য উন্নয়নে প্রায় ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন বিনিয়োগ করেছে।
২০২০ সালে হুয়াওয়ে প্রায় ১ হাজারটি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এছাড়া, মাইনিং (খনি), উৎপাদন ও সমুদ্রবন্দর সহ বিস্তৃত শিল্পে ৫ হাজারটিরও বেশি ক্ষেত্রে ফাইভ-জি পরীক্ষা করেছে।
এখন পর্যন্ত, ৭০০টি টেলিকম অপারেটর বিশ্বজুড়ে ফাইভ-জি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। হুয়াওয়ে ১৮৪টির মধ্যে ৮৩ টি অপারেটরকে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছে যারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে সফলভাবে ফাইভ-জি চালু করেছে।
তবে, নকিয়ার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বর্তমান সরকার ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের লক্ষ্য ও পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০২১-২০২৩ সালের মধ্যে সারা দেশে ফাইভ-জি চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
বাংলাদেশ ২০১২ সালের অক্টোবরে মোবাইল যোগাযোগ প্রযুক্তিতে থ্রি-জি ও ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফোর-জি প্রযুক্তি পরিষেবা চালু করেছিল।
বর্তমানে দেশে চারটি মোবাইল অপারেটরের অধীনে ১৭.৬৯ কোটি মোবাইল গ্রাহক ও ১২ কোটি মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন। তবে, দেশের ৪১ শতাংশ গ্রাহক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী হলেও, কেবল ২৮ শতাংশ গ্রাহক ফোর-জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন।