এবার উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে ট্রায়াল রান সম্পন্ন করল মেট্রোরেল
উত্তরা-আগারগাঁও রুটে আজ পারফরম্যান্স টেস্ট সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল।
রোববার সকাল ৯টা ৩৯ মিনিটে রেলটি উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে যাত্রা শুরু করে এবং পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১১টার পর আগারগাঁও স্টেশনে পৌঁছায়।
ট্রেনটি মিরপুর-১০ পর্যন্ত ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে এসে আগারগাঁও অংশে ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার গতিতে পৌঁছে।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট উত্তরার দিয়াবাড়ি-পল্লবী রুটে মেট্রোরেলের প্রথম ট্রায়াল রান চালানো হয়।
বৃহস্পতিবার মেট্রো ট্রেনের মালিকানা, পরিচালনা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক কোম্পানীর নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের ডিসেম্বরে ১১.৭৩ কিলোমিটার লাইনে বাণিজ্যিকভাবে চলবে মেট্রো ট্রেন।
তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো রেলের ভৌত কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজ হয়েছে প্রায় ৭২ শতাংশ। আর ইলেক্ট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, সিস্টেম, রেল কোচ সংগ্রহ এবং ডিপো ইকুয়েপমেন্ট সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে ৬৯ ভাগ।
সব মিলে ২২০০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় ধরে নেয়া এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৭৩ শতাংশ। এ প্রকল্পের আওতায় ২০.১০ কিলোমিটার উড়াল মেট্রোরেল নির্মাণের কথা থাকলেও লাইনটি কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত হওয়ায় দৈর্ঘ্য বাড়বে ১.১৬ কিলোমিটার।
তিনি জানান, ইতোমধ্যেই জাপানের কোম্পানী থেকে ছয় বগির সাতটি মেট্রো ট্রেন সেট উত্তরা ডিপোতে এসেছে। এ সব ট্রেনের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে আরও এক সেট ট্রেন ডিপোতে আসবে। নবম এবং দশম সেট ট্রেনও দেশের পথে রয়েছে।
অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে আসায় ট্রেন পরিচালনায় জনশক্তি নিয়োগ, তাদের প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানান ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
তিনি জানান, করোনার কারণে নিয়োগ কার্যক্রমে কিছুটা বিলম্ব হয়েছেন। যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদেরকে রেলওয়ে, বাংলাদেশ বেতার এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। দেশের প্রশিক্ষণ শেষে ৩৪ কর্মী উন্নত প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশে অবস্থান করছেন বলেও তিনি জানান।
মেট্রো ট্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৩৫৭ জনবলের এমআরটি পুলিশ প্রতিষ্ঠানের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর প্রস্তাবটি এখন মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে রয়েছে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত রেল পরিচালনার লক্ষ্য রয়েছে জানিয়ে সিদ্দিক বলেন, ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও আগেই সম্পূর্ণ রুটে ট্রেন পরিচালনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।
পুরো রুটে ট্রেন পরিচালনা করা না হলে আগারগাঁও নেমে যাত্রীরা কীভাবে বিভিন্ন জায়গায় যাবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ বিষয়ে বিআরটিসির সঙ্গে কাজ করছে ডিএমটিসিএল।
তিনি বলেন, প্রতিটি ট্রেনে প্রায় ২০০ যাত্রী আগারগাঁও নামবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রেন আসার আগেই বিআরটিসির অন্তত চারটি বাস স্টেশনের পাশে অপেক্ষা করবে। যাত্রী নিয়ে এ বাসগুলো চলে গেলে দাঁড়াবে অন্য চারটি বাস। এ বিষয়ে শীঘ্রই বিআরটিসির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে বলেও তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে উত্তরা মতিঝিল মেট্রোরেল লাইন কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের বিভিন্ন সমীক্ষা শেষে ডিটেইল ডিজাইন ও ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নগরীর জনদুর্ভোগ এড়াতে বেশি অবকাঠামো রয়েছে এমন জায়গাগুলোতে আর উড়াল মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে না বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএল এমডি।
তিনি বলেছেন, রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ করা হবে ভূগর্ভে। এ লাইনের নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল সংযোগের যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে নির্মাণ করা হবে উড়াল লাইন।
তিনি আরও জানান, এমআরটি-লাইন ৫ এর হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে এলিভেটেড লাইন। তুরাগ নদীর শুরু থেকে নতুন বাজারের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনের পর ভাটারা পর্যন্ত স্থাপন করা হবে এলিভেটেড লাইন।
এমআরটি লাইন-১ এর সব ধরনের সমীক্ষা ও প্রাথমিক ডিজাইন শেষে ডিটেইল ডিজাইনের কাজও ৮৭ শতাংশ শেষ জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী বছরে ৩১.২৪ কিলোমিটার লাইন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।