ধারণার চেয়েও দ্বিগুণ খাদ্য অপচয় করছে বিশ্ব
অপরিমিত ব্যয়ের পরিণতি এক সময় দুর্ভোগ আর সংকট হয়ে ফিরে আসে আমাদের জীবনে। বাংলায় লোকগানের এমনই একটি কলি ছিল ‘এইতো ভবের খেলা রে ভাই, এইতো ভবের খেলা/ সকালবেলা আমির যে সে ফকির সন্ধ্যেবেলা।’
কিন্তু এমন আপ্তবাক্য থেকে আমরা ক’জনই বা শিক্ষা নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনিয়ম করাটাই যেন মানব সভ্যতার চূড়ান্ত পরিণতি। তবে আমিরদের বিলাসিতার রেশটা গরীবের ঘাড়েই এসে পড়ে। বিশ্বের মোট উৎপাদিত খাদ্য অপচয়েও তাই তাদের অবদানটাই মুখ্য।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা জার্নাল পিএলওসে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে আসে। ওই গবেষণায় ধনীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের খাদ্য অপচয়ের প্রবণতাও স্থান পায়।
গবেষণা সূত্রে জানা যায়, ধনী দেশগুলোর নাগরিকরা খাদ্য অপচয়ে তাদের পূর্ব অবস্থান ধরে রেখেছেন। আর পুরো বিশ্বে এখন পূর্ব ধারণার চাইতেও দ্বিগুণ বেশি খাদ্য অপচয় হচ্ছে। খবর সিএনএনের।
গবেষকরা জানান, বেশ কিছু দরিদ্র দেশে এখন ভোক্তাব্যয় সক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেসব দেশে খাদ্য অপচয়ের মাত্রাও বাড়ছে। এভাবে তারা খাদ্য দ্রব্যজাত বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং নাগরিক স্বাস্থ্যের মাঝে একটি সংযোগ সূত্রও আবিষ্কার করেন।
ভোক্তাব্যয় সক্ষমতা সূত্র অনুসারে দেখা যাচ্ছে ২০১১ সাল নাগাদ মাথাপিছু হারে দৈনিক ৭২৭ ক্যালোরি অপচয় হয়েছে। এটা মানুষের জন্য মোট খাদ্য সরবরাহের ২৫ শতাংশ। ২০০৩ সালে এই অপচয়ের পরিমাণ ছিল মাথাপিছু দৈনিক ৩৫১ ক্যালোরি। অর্থাৎ অতি-সাম্প্রতিক হিসাবের আওতায় অপচয় দ্বিগুণ বেড়েছে একথা স্পষ্ট।
এদিকে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের একটি বড় অংশই ফসল সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের নানা ধাপে বিনষ্ট হয়। তাই মানুষের হাতে নষ্ট হওয়া ২৫ শতাংশ আসলে প্রকৃত ৭৫ শতাংশ বাজার সরবরাহের এক-তৃতীয়াংশের সমান। জলবায়ু পরিবর্তনের এই বিনাশী যুগে খাদ্যের এই অপচয়কে তাই বিজ্ঞানীরা ‘অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পদধ্বনি’ হিসেবে উল্লেখ করছেন।
সেই সঙ্গে তারা আরও হুঁশিয়ার করেন, দরিদ্র এবং মধ্য আয়ের দেশগুলোয় খাদ্য নষ্ট করার প্রবণতা রোধে এখনই উদ্যোগী হতে হবে। নইলে এসব দেশও উন্নত দেশগুলোর মতো খাদ্য অপচয়ের সর্বনাশা চক্র থেকে বেড়িয়ে আসতে পারবে না।