সিএমএসএমই ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৮.৭৫ শতাংশ
কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব কমে আসায় দেশের সকল খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে তাই ঋণ বিতরণও বেড়েছে। চলতি বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এই খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ।
চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে সিএমএসএমই খাতে ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৭৬ জন গ্রহকের অনুকূলে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪২ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৭৫ শতাংশ বেশি। এর আগে, গত ২০২০ সালের একই সময়ে এ খাতের ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ৩৮ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, কেভিডকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এ ব্যবসায়ীরা যেনো ক্ষতি সামলিয়ে টিকে থাকতে পারেন, সেজন্য সরকার তাদেরকে কয়েক দফায় স্বল্প সুদে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ দিয়েছে। তারপরও অনেক ছোট ব্যবসায়ী কম বিনিয়োগ করেছেন। কেভিড-১৯ পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক, তাই নতুন বিনিয়োগের কারণে ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে আমদানি-রপ্তানিও।
ব্যাংকের হালনাগাদ করা পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৩ জন গ্রাহকের অনুকূলে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৪১ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২৮৬ কোটি টাকা।
তবে গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন, এ সময়ে কোভিড-১৯ এর প্রথম ঢেউয়ের প্রকোপে সিএমএসএমই ঋণ বিতরণ আরও কমেছিল। ওই তিন মাসের বেশির ভাগ সময়ই চলাচলে বিধিনিষেধ ছিল। যে কারণে সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছিল ২৮ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। সেই হিসেবে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে এ খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে প্রায় ৪৯ শতাংশ।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০২১ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এসএমই খাতের ৪১ হাজার ৭১২টি নতুন প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো। পল্লী এলাকার এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ১২৩ কোটি টাকার ঋণ। এরমধ্যে জামানতবিহীন ঋণ ছিল ৬ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা।
নিয়মিত এসএমই ঋণের পাশাপাশি কোভিড-১৯ এর প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্রশিল্প উদ্যোক্তাদের স্বল্পসুদে ঋণ দিতে গত বছরের এপ্রিল থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই প্যাকেজ থেকে গত জুন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয় সিএমএসএমই খাতে।
এরপর গত জুলাই থেকে নতুন করে দ্বিতীয় মেয়াদের প্রণোদনা ঋণ বিতরণ শুরু হয়। এ ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ। তবে এর মধ্যে ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার; বাকিটা গ্রাহক পরিশোধ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও চলতি অর্থবছরের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, যা থেকে ঋণদাতারা এ বছরের অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এটি চলতি বছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৭.৭৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শিল্প খাতে ব্যাংক ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১ লাখ ৬ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা, যেখানে গত বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৯৪ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা।
এদিকে, চলতি বছরের আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকিং খাতে ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। এ বছরের অক্টোবরে আগের মাসের তুলনায় ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। একইসঙ্গে এক বছরের ব্যবধানে, অর্থাৎ গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় এ বছর একই সময়ে ঋণ বেড়েছে ১১ শতাংশেরও বেশি।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আমদানি অর্থপ্রদান বেড়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। যার অর্থ হলো, দেশের অভ্যন্তরে ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ প্রধান রপ্তানি অঞ্চল্গুলোতে ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির ক্রমবর্ধমান আমদানি হচ্ছে দেশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে অক্টোবর মাসে রপ্তানির পেমেন্ট ছিল ২৩.৩৯ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫১.৩৩ শতাংশ বেশি।