মদের সিন্ডিকেট ভাঙতে চালু হচ্ছে ২ সরকারি বন্ডেড ওয়্যারহাউজ
দেশে মদ নিয়ে চলমান সংকটের মুখে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এবং হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকাকে ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউজগুলোর লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
গত ২ জুলাই থেকে এনবিআর একটি সফটওয়্যার ব্যবহারকে বাধ্যতামূলক ঘোষণার পর বেসরকারি ৬টি কূটনৈতিক বন্ডেড ওয়্যারহাউজ এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে একযোগে মদ বিক্রি বন্ধ রাখে। এর ফলে দেশের মদের বাজারে সংকট দেখা দেয়।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ওয়্যারহাউজগুলোর মদ বিক্রি বন্ধের ফলে তিন দশক পর রাজস্ব বোর্ড একটি নতুন লাইসেন্স ইস্যু করেছে এই শর্তে যে মদের বাজারে সফটওয়্যারটি ব্যবহারের মাধ্যমে অটোমেশন প্রক্রিয়া বহাল রাখতে হবে।
উভয় প্রতিষ্ঠানকেই মদ আমদানির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে একটি 'অনাপত্তি' সনদ সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।
নতুন লাইসেন্স ইস্যু করার বিষয়টি নিশ্চিত করে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার কাজী মুস্তাফিজুর রহমান জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কূটনৈতিক বন্ডেড ওয়্যারহাউজগুলোর দায়িত্ব নিক, এমন ইচ্ছা থেকেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
অটোমেশনের আওতায় আসবে বন্ডেড ওয়্যারহাউজের কার্যক্রম
বন্ডেড ওয়্যারহাউজ লাইসেন্সিং আইন ২০০৮-এর অধীনে বন্ডেড কার্যক্রমকে অটোমেশনের আওতায় আনার জন্য একটি নতুন বিধিমালা প্রবর্তন করতে যাচ্ছে সরকার।
শুল্ক আইন ১৯৬৯-এর ধারা ১১৯ক অনুযায়ী, বিশেষ কোনো কারণে নতুন নিয়ম যুক্ত করা বা পরিবর্তনের ক্ষমতা এনবিআরের রয়েছে।
এই ক্ষমতাবলে নতুন বিধিমালার মধ্যে ইলেক্ট্রনিক বন্ডেড কার্যক্রম সংযুক্ত করতে যাচ্ছে এনবিআর। এ থেকে বোঝা যায় যে, রাজস্ব বোর্ড দেশের মদের বাজারে সফটওয়্যার প্রযুক্তি চালু করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
- আরও পড়ুন: এক সফটওয়্যারে মদশূন্য দেশ!
এদিকে এনবিআর এর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বন্ডেড ওয়্যারহাউজগুলোর দায়ের করা রিট পিটিশনের জবাবে গত ৩০ নভেম্বর এনবিআর এর দেওয়া সিদ্ধান্ত বাতিল করে হাইকোর্ট।
তবে ইতোমধ্যেই আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছে এনবিআর।
কিন্তু হাইকোর্টের রায় পক্ষে যাওয়া সত্ত্বেও রাজস্ব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সবুজ সংকেত না পাওয়ায় এখনও মদ বিক্রি শুরু করেনি ওয়্যারহাউজগুলো।
অন্যদিকে, এ বিষয়ে এনবিআর এর একজন শীর্ষ কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউজগুলো যদি সফটওয়্যারের মাধ্যমে মদ বিক্রি করে তাহলে এনবিআর কর্তৃপক্ষের কোনো অসুবিধা নেই।
কূটনীতিকদের জন্য শুল্কমুক্ত যেসব মদ আমদানি করা হয়, সেগুলো যে প্রায়ই কূটনৈতিক পাসবুকের অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধ পথে চালান হয়, তা কারও অজানা নয়।
বন্ডেড ওয়্যারহাউজগুলো ছাড়াও আরও ৩৭টি ফার্মকে মদ আমদানির লাইসেন্স দেওয়া হলেও, আশ্চর্যজনকভাবে মাত্র ৬টি বন্ডেড ওয়্যারহাউজ মদ বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ার পর দেশের মদের বাজারে হাহাকার তৈরি হয়। এ থেকেই বোঝা যায় যে শুল্কমুক্ত মদ আমদানিকারকেরাই অবৈধ উপায়ে মদ সরবরাহের মূল হোতা।
তাই অবৈধ ব্যবসা ও শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধার অপব্যবহার ঠেকাতে এবং ওয়্যারহাউজগুলোর উপর নজরদারি জোরদার করতে একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে চাইছে এনবিআর।
- আরও পড়ুন: মদ কেন মাদকদ্রব্য? হাইকোর্টের প্রশ্ন
বর্তমানে, ওয়্যারহাউজগুলো পাসবুকের হার্ডকপি দেখে মদ বিক্রি করে থাকে। এর মধ্যে আবার প্রায়শই জাল পাসবুক কিংবা এমন পাসবুক দেখে মদ বিক্রি করা হয়। যেসব কূটনীতিকরা দেশ ছেড়ে চলে গেছেন কিন্তু তাদের পাসবুকগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত দেননি, সেসব ব্যবহার করা হয় এক্ষেত্রে।
ওয়্যারহাউজগুলো এসব পাসবুকের বিরুদ্ধে বিক্রি দেখিয়ে বড় অংকের মুনাফায় কালোবাজারে মদ বিক্রি করে। পরবর্তীতে, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে এই মুনাফার কিছু অংশ পৌঁছায়।
কিন্তু যখন সফটওয়্যারের মাধ্যমে এই বিক্রয় ট্র্যাক করা হবে, তখন ওয়্যারহাউজগুলোকে প্রয়োজনীয় তথ্য ইনপুট দিতে হবে সিস্টেমে। প্রতিটি কূটনৈতিক ওয়্যারহাউজকে বন্ড অটোমেশন সিস্টেমে আমদানি সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য যেমন - বিল অফ এন্ট্রি নম্বর, আমদানির তারিখ, অফিস কোড, চালান নম্বর ও তারিখ, ক্রয়কৃত পণ্যের নাম, ভলিউম ও মূল্য ইত্যাদি লিখতে হবে।
- আরও পড়ুন: মদ নিয়ে অদ্ভুত আইন যে দেশগুলোতে
পরবর্তীতে বিক্রয়ের সময় তাদের সিস্টেমে লগ ইন করতে হবে এবং সফ্টওয়্যারে পাসবুক বা ট্যাক্স এক্সেম্পশন সার্টিফিকেট (টিইসি) নম্বর, বিক্রি হওয়া পণ্যের নাম, ভলিউম, বিল অফ এন্ট্রি নম্বর ও মূল্য সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য ইনপুট দিতে হবে।
এতদিন ধরে এনবিআরকে ম্যানুয়ালি তথ্য সরবরাহ করতো বন্ডেড ওয়্যারহাউসগুলো। কিন্তু নতুন করে সফটওয়্যার ব্যবহার শুরু করায় আগের নিয়মে কাজ চালাতে পারছে না তারা।
সে কারণেই নিজেদের অনিয়ম বহাল রাখতে সফটওয়্যার পদ্ধতির বিরোধিতা করছে তারা।
- মূল প্রতিবেদনটি ইংরেজিতে পড়ুন: 2 govt bonded warehouses on cards to counter liquor syndicate
- ভাষান্তর: খুশনূর বাশার জয়া