বুস্টার ডোজ ছাড়া ওমিক্রন প্রতিরোধ সম্ভব নয়: এমআইটি, হার্ভার্ডের গবেষণা
করোনাভাইরাসের (সার্স-কভ-২) নতুন ধরন ওমিক্রনের বিরুদ্ধে শরীরে ইমিউনিটি বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে মডার্না বা ফাইজারের এমআরএনএ ভিত্তিক বুস্টার ডোজ প্রয়োজন। ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের (এমজিএইচ) র্যাগন ইনস্টিটিউট, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সমীক্ষায় উঠে এসেছে এ তথ্য।
গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ এর প্রচলিত টিকার ডোজগুলো করোনার ওমিক্রন ধরনের বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারছে না।
গবেষণাপত্রের সিনিয়র লেখক আলেজান্দ্রো বালাজ বলেছেন, "বর্তমান টিকাগুলো ওমিক্রনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় কিনা তা জানতে সবাই মরিয়া হয়ে উঠেছিল।" কীভাবে সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা যেতে পারে তা নিয়ে র্যাগন ইনস্টিটিউটে নিজের ল্যাবোরেটারিতে গবেষণা করছেন বালাজ।
র্যাগন ইনসটিটিউটের সাবেক চিকিৎসা-বিজ্ঞানী, এমজিএইচ-এর ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি রেসিডেন্ট ও এই গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক উইলফ্রেডো এফ গার্সিয়া-বেল্ট্রানের সহযোগী হিসেবে গবেষণায় কাজ করছেন আলেকজান্দ্রো বালাজ।
গবেষণার প্রথম পদক্ষেপটি ছিল 'সিউডোভাইরাস' নামে পরিচিত ওমিক্রনের একটি নিরপেক্ষ বা ক্ষতিকারক নয় এমন সংস্করণ তৈরি করা। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত তিনটি কোভিড-১৯ টিকা মডার্না, ফাইজার ও জনসন অ্যান্ড জনসনের কার্যকারিতা মূল্যায়নে এটি পরীক্ষাগারে ব্যবহার করা হয়।
বালাজ ও তার সহকর্মীরা যে সিউডোভাইরাসটি তৈরি করেছিলেন, সেটি ওমিক্রনের মতই আচরণ করেছে গবেষনাগারে। এছাড়া, এর 'স্পাইক' প্রোটিনে রয়েছে ৩৪টি মিউটেশন, যা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া সার্স-কভ-২ এর মূল স্ট্রেইন বা ধরনে ছিলনা।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই মিউটেশন বা পরিবর্তনগুলো সারাবিশ্বে ওমিক্রনের দ্রুত বিস্তারের জন্য আংশিকভাবে দায়ী হতে পারে।
গার্সিয়া-বেল্টরানের সঙ্গে হেমাটোলজি-অনকোলজি বিশেষজ্ঞ বিবেক নারানভাইও সহকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন এই গবেষণাকর্মে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত তিনটি টিকার যে কোনোটি দিয়ে সম্পূর্ণভাবে ভ্যাকসিনেটেড এমন ২৩৯ জন ব্যক্তির রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন তারা। নমুনাগুলো ভিন্ন ভিন্ন জায়গা ও সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।
গার্সিয়া-বেল্ট্রান বলেন, "গবেষণায় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।"
মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সুপারিশ অনুসারে, এই গ্রুপে এমন ৭০ জন পুরুষ ও নারী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যারা ফাইজার বা মডার্না টিকার তৃতীয় বুস্টার ডোজটিও গ্রহণ করেছিলেন।
রক্তের নমুনাগুলো দিয়ে ওমিক্রন সিউডোভাইরাসের পাশাপাশি ডেল্টা ও অন্যান্য আক্রমণাত্বক ধরনগুলোর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি হিসেবে টিকাগুলো কতটা কার্যকরভাবে ইমিউনিটি তৈরি করতে পারে তা পরীক্ষা করা হয়েছিল। গবেষণার ফলাফল ছিল আকর্ষণীয়।
বালাজ বলেন, "যারা সম্প্রতি এমআরএনএ ভিত্তিক দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন বা জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের শরীরে আমরা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে খুব কম নিরপক্ষতা বা ইমিউনিটি শনাক্ত করতে পেরেছি।"
"কিন্তু যারা এমআরএনএ ভিত্তিক তিন ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের শরীরে আমরা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ইমিউনিটি পেয়েছি", বলেন তিনি।
তবে, একটি এমআরএনএ বুস্টার কেনো নাটকীয়ভাবে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। এক্ষেত্রে গার্সিয়া-বেল্ট্রানের ধারণা, অতিরিক্ত ডোজ অ্যান্টিবডি তৈরি করতে ও শরীরে এর কার্যকারিতা বাড়াতে পারে। এটি স্পাইক প্রোটিনের সঙ্গে আরও শক্তভাবে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে।
এছাড়া, বুস্টার ডোজের ফলে তৈরি অ্যান্টিবডি ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের অঞ্চলগুলোকেও টার্গেট করতে পারে। এই উভয় ধারণাই সত্য হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন গার্সিয়া-বেল্ট্রান।
বালাজ বলেন, তিন ডোজের এমআরএনএ টিকা পদ্ধতি অর্থাৎ, প্রচলিত দুটি ডোজ এবং ফাইজার বা মডার্নার একটি বুস্টার ডোজ কোভিড-১৯ এর অন্যান্য ধরন ও ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কম অ্যান্টিবডি নিরপেক্ষতা দেখায়।
তবে, এই গবেষণার ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি'র পরামর্শকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। এখানে ১৬ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সীদেরকে বুস্টার ডোজ গ্রহণের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এবং এক্ষেত্রে এমআরএনএ ভিত্তিক টিকাকে অগ্রাধিকার দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।