অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় বৃদ্ধির সাথে বেড়েছে সরকারের ব্যাংক ঋণ
কোভিড প্রভাব কমে আসায় অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সরকারের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।
২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ২১৯ কোটি টাকার বেশি। যা ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ২০ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। সে হিসেবে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২৪.৬৫ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির ক্ষত কাটিয়ে উঠছে দেশের অর্থনীতি। এখনও রাজস্ব আদায়ের হার সেভাবে বাড়েনি। সরকারের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ ও বার্ষিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে (এডিপি) অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে। বিশেষ করে মেগাপ্রকল্পগুলোর কার্যক্রম পুরোদমে চালু রয়েছে। এজন্য সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ বেড়েছে।
সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে শরিয়াভিত্তিক ইসলামি বন্ড 'সুকুক' ছেড়ে ৩৪ প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করেছে সরকার।
গত ২৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে নিলামে বন্ড বিক্রি করে প্রথম দফায় পাঁচ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। এই বন্ডের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের ৪.৬৫% বার্ষিক হারে ভাড়া (ইজারা) দিবে সরকার। এ বন্ডের মেয়াদ হবে ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে ৩০ ডিসেম্বর ২০২৬ সাল পর্যন্ত।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ট্রেজারি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, সরকারের বছরের শেষে বিভিন্ন ধরনের বিল পরিশোধ করতে হয় তাই ডিসেম্বরে এসে ঋণ বেড়েছে। তবে নতুন বছরে আবার কমে আসবে। কারণ জানুয়ারি মাসের অ্যাকশন ক্যালেন্ডারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে টাকা উত্তোলনের পরিমাণ খুবই কম দেয়া হয়েছে।
এদিকে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে কোভিডের প্রভাবে সারাদেশে লকডাউন ছিল। এ কারণে উন্নয়ন বাজেটের ব্যয় একেবারেই শ্লথগতিতে ছিল। সে কারণে সেই অর্থবছরে সরকার ব্যাংক ঋণ নিয়েছে মাত্র ২৬ হাজার কোটি। যদিও আগের অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণ ছিল ৭২ হাজার কোটি টাকার বেশি।
সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাসিক ভিত্তিক এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পাঁচ মাসে সরকার ব্যয় করেছে ৪৪ হাজার ৬১ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৮ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। শতাংশ হিসেবে বেড়েছে প্রায় ১৪.৫২%। একই সঙ্গে তার আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। যা গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। করোনার কারণে বেসরকারি ঋণের হার নেমে এসেছিল সর্বনিম্নে। তবে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে খাতটি।
এদিকে সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঋণ নির্ধারণ করেছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ছয় মাসে ঋণ নিয়েছে ৩৩ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে আগের ঋণের পরিশোধ ছিল ১৪ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে নীট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।
সরকারের চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে প্রধান ভরসাস্থল ব্যাংক খাত।
জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর টিবিএসকে বলেন, সরকার প্রতি অর্থবছরেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারে। চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব আদায় কম যা সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে বাধ্য করেছে।
তিনি বলেন, সরকারের অতিরিক্ত ঋণের ফলে বিদ্যমান তারল্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। এ পরিস্থিতি এড়াতে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।