‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ডেল্টার চাইতে ওমিক্রনে শনাক্তের সংখ্যা অনেক বেশি হবে’
করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রন ছড়িয়ে পড়ায় শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। ১০ শতাংশের ঊর্ধ্বে পজিটিভিটি রেট নিয়ে, নতুন করে দেশের ২৬টি জেলা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, তিন জেলায় ৫০ শতাংশের ঊর্ধ্বে, একটিতে ৪০% এর ঊর্ধ্বে, একটিতে ৩০% এর ঊর্ধ্বে, চার জেলায় ২০% এর ঊর্ধ্বে এবং দেশের ১৬ জেলায় ১০% এর ঊর্ধ্বে পজিটিভিটি রেট।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) মতে, ১০% বা ঊর্ধ্বে সংক্রমণ থাকলে সে জেলাকে সংক্রমণের 'উচ্চ ঝুঁকি'র তালিকায় ফেলা হবে। সংক্রমণ ৫%-৯% থাকলে সেটি 'মাঝারি ঝুঁকি'র তালিকায় বিবেচিত হবে।
উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর মধ্যে, হবিগঞ্জে সর্বাধিক ৫৮.৮% পজিটিভিটি রেট রয়েছে যেখানে কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালীতে বৃহস্পতিবার এ হার ছিল শূন্য।
রাজধানীসহ এই মুহূর্তে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ২৭ জেলা হলো- হবিগঞ্জ, গাইবান্ধা, পিরোজপুর, খাগড়াছড়ি, লক্ষ্মীপুর, সুনামগঞ্জ, বাগেরহাট, বান্দরবান, যশোর, রাঙ্গামাটি, পঞ্চগড়, রংপুর, ভোলা, মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, ঝিনাইদহ, ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, নাটোর, নরসিংদী, নড়াইল, কুষ্টিয়া, শেরপুর, লালমনিরহাট, ফেনী ও চট্টগ্রাম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকায় সংক্রমণ বাড়লেও অমিক্রন ছড়িয়ে পড়ায় এখন সারাদেশে সংক্রমণ বাড়ছে। অমিক্রন মোকাবেলায় চলমান বিধিনিষেধ কঠোরভাবে কার্যকর করা না হলে গত ওয়েভে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে ঢাকার বাইরে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়েছিল এবারও তেমন হবে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে করোনায় মারা গেছে ১২ জন এবং কোভিড শনাক্ত হয়েছে আরও ৩,৩৫৯ জনের দেহে।
দেশের অন্যতম শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট এবং কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, "দৈনিক শনাক্তের হার ইঙ্গিত করছে যে দেশে ভাইরাসের পরিস্থিতি বিপজ্জনক। কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ভারত থেকে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছিলো এবং সারাদেশে ছড়িয়ে যায়। এবারও অমিক্রনের প্রভাবে ভারতের পরিস্থিতি খারাপ, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ মোকাবেলায় আরো সতর্ক থাকতে হবে।
শুধু ঢাকায় সংক্রমণ বেশি এই ভুল ধারণা রাখা যাবে না। সারাদেশে সংক্রমণ রোধে কাজ করতে হবে। এখন শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। যতটা সম্ভব বিধিনিষেধ কার্যকর করতে হবে।"
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের কারণে গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভে দেশে টানা ৩০ দিন দৈনিক ২০০ এর বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিলো। সে সময় দিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়। হাসপাতালগুলো রোগীর চাপ সামলাতে না পেরে রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছিলো। অক্সিজেনের অভাবে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়। তাই এবারের ওয়েভে গত ওয়েভের তুলনায় বেশি রোগী শনাক্ত হবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. এম মুশতাক হোসেন টিবিএসকে বলেন, "অমিক্রনের প্রভাবে ডিভিশনাল টাউনগুলোতে সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। আগামী সপ্তাহে দৈনিক রোগী শনাক্তের গ্রাফ অনেক উপরে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকার বাইরে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে 'চাঁপাই মডেল' অনুসরণ করে ভ্রাম্যমাণ গাড়ি নিয়ে গিয়ে ফ্রি-তে অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে। পাশাপাশি পজিটিভ রোগীদের আইসোলেশনে রাখতে হবে, এতে স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি সবাইকে সহায়তা করতে হবে।"
এদিকে সংক্রমণ মোকাবেলায় বৃহস্পতিবার থেকে ১১ দফা বিধি-নিষেধ চালু করেছে সরকার। যদিও প্রথম দিন বিধিনিষেধ পালনে ঢিলেঢালা ভাব ছিলো। তবে এই ১১ দফা বিধিনিষেধ সঠিকভাবে পালন করা হলে লকডাউন ছাড়াই সংক্রমণের গ্রাফ নিচে নামানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন ডা. মুশতাক।
ফাইজারের পরিবর্তে বুস্টার হিসেবে দেওয়া হবে মডার্নার টিকা
ফাইজারের টিকার পরিবর্তে মডার্নার কোভিড-১৯ টিকা বুস্টার ডোজ হিসেবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দেশে বর্তমানে যে পরিমাণ টিকা রয়েছে তার সংখ্যা এবং দেশের সবার জন্য টিকা নিশ্চিতের বিষয় বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত ১২ জানুয়ারি স্বাস্থ্য পরিষেবার অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস) এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকারের ইনোকুলেশন কর্মসূচির সাথে যুক্ত দেশের সব সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশনা অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছে।
এখন পর্যন্ত যেসব স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী ফাইজারের প্রথম ডোজ পেয়েছেন, তাদের জন্য ফাইজারের টিকা সংরক্ষিত থাকবে।
৩০ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিক এবং টারশিয়ারি স্তরের প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার।
১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুল এবং কলেজের পরিচয়পত্র দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।