ইভিএম ভোটে সমস্যা, মিলছে না ফিঙ্গারপ্রিন্ট!
সকাল থেকে চলছে আলোচিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১৯২টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে; বিরতিহীনভাবে এ ভোটগ্রহণ চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট দেওয়া নিয়ে ভোটারদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। একাধিক ভোট কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট দিতে সমস্যায় পড়েছেন কয়েকজন ভোটার।
২৬ নং ওয়ার্ডের ২২ নং রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৮টি বুথের প্রতিটিতেই ৪-৫ জন ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) মেলেনি। এদের সবাইকে দুপুরের পরে আবার আসতে বলা হয়েছে।
একই ওয়ার্ডের ১২৭ নং কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার বিশ্বনাথ শুত্রধর বলেন, "যাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলছেনা তাদের জন্য সময় নিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি একেবারেই মেলানো সম্ভব না হয় তবে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের ফিঙ্গারের মাধ্যমে সে ভোট দিতে পারবেন।"
এভাবে কতজন ভোটার একটি বুথে ভোট দিতে পারবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আমার জানামতে ১ থেকে ২ শতাংশ ভোট এভাবে দিতে পারবেন।"
এদিকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দেওয়ার সমস্যাকে কেন্দ্র করে ভোটকেন্দ্রগুলোর বাইরে শত শত নারী ভোটারকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
চাষাড়া, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে দেখা গেছে, লাইনে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে ইভিএমের বোতাম চেপে ভোট দিতে নারী ভোটারদের ১০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার শান্তি চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, সকালে দীর্ঘ লাইন না থাকায় ভোট দিতে তার সময় লেগেছে ১০ মিনিট।
তিনি বলেন, "আমি প্রথমে কাউন্সিলর পদে ভোট দিয়েছি। তবে মেয়র পদে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য বোতাম টিপলে সেখানে সবুজ সংকেত আসেনি। কিন্তু সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, আমার ভোট দেওয়া হয়েছে।"
"বেশিরভাগই প্রথমবারের মতো ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দিতে এসেছেন। এটি নারীদের জন্য এক ধরনের ঝামেলা তৈরি করেছে", তিনি আরও বলেন।
১২ নম্বর ওয়ার্ডের এবিসি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রিসাইডিং অফিসার ফয়সাল কবির টিবিএসকে বলেছেন, নারীদের বুথে ভোট দিতে দেরি হচ্ছে। কারণ তারা ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দিয়ে অভ্যস্ত নন।
আরেক ভোটার শাহিদা বেগম জানিয়েছেন, তার ৭০ বছর বয়সী শাশুড়ির ভোট দিতে অনেক সময় লেগেছে। কারণ ভোট দেওয়ার নতুন এই ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।
কেন্দ্রগুলোতে নারী ভোটারের উপস্থিতি কম। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন কেন্দ্রে পুরুষ ভোটারদের উপস্থিতি বাড়লেও, নারী ভোটারের সংখ্যা কমই দেখা গেছে। তবে, দুপুরের পরে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বাড়বে বলে ধারণা করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।
এর মধ্যে এবিসি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ভোটকেন্দ্রে নারী ভোটারের উপস্থিতি এতই কম যে, বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে ভোট চলছে। ভেতরে গিয়ে কয়েকজন নারীকে পাওয়া যায়, যারা ভোট দিচ্ছিলেন।
ওই কেন্দ্রে মোট নারী ভোটারের সংখ্যা ৪ হাজার ১১৭ জন। এরমধ্যে সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ২০০টি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার ফয়সাল কবির বলেন, "নারীদের ঘরে অনেক কাজ থাকে। রান্নাবান্না আছে। আশা করছি দুপুরের পরে তাদের উপস্থিতি বাড়বে।"
এদিকে, বন্দর উপজেলার ২৭ নং ওয়ার্ডের ফুলহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ নং বুথে ৪১৮ জন ভোটারের মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ৭৮টি ভোট পড়েছে।
কেন্দ্রের পোলিং অফিসার রণজিৎ চন্দ্র টিবিএসকে বলেন, "ইভিএমে বয়স্ক ব্যক্তিদের ভোট দিতে একটু সমস্যা হচ্ছে। তাদের আঙ্গুলের ছাপ মাঝেমাঝে না মেলায় সমস্যা হচ্ছে। তবে তাদেরকে ভোট দেওয়ানোর জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে।"
ওই কেন্দ্রের ১ নং বুথে এ পর্যন্ত ৬ জনের আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় তারা ভোট দিতে পারেনি।
বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে এসে লাটিম মার্কার প্রার্থী সৈকত হাসেম শোকুও নারীদের উপস্থিতি কম বলে মন্তব্য করেন।
হাসেম শোকুর স্ত্রী দিপা হাসেম বলেন, "সকালের সময়টাতে নারীরা ঘরের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাই উপস্থিতি কিছুটা কম। বিগত দিনেও আমরা একই চিত্র দেখেছি। নারী ভোটারের উপস্থিতি দুপুরের পর বাড়বে।"
এদিকে, জরিনা বেগম তার প্রকৃত বয়স মনে করতে না পারলেও ভোট দিতে পেরে তিনি খুশি।
মাউরা পট্টি এলাকার বাসিন্দা জরিনা বলেন, "আমার বাড়িতে কেউ নেই; কোনো সন্তান নেই, আত্মীয় নেই। কিন্তু আমি ভোট দিতে এসেছি।"
ইভিএম নিয়ে অভিজ্ঞতা কেমন ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমাদের জন্য মেশিন সব সময়ই কঠিন, বিশেষ করে ৮০/৯০ বছর বয়সে। কিন্তু তারা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন এবং আমি সেভাবে ভোট দিয়েছি।"
জুই বালা (৯৩) পোদ্দারের ছেলে ভোলানাথ পোদ্দার ভোট দেওয়ার পর তার মাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
টিবিএসের সঙ্গে আলাপকালে ভোলানাথ বলেন, শহরের উন্নয়নের জন্য মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচন করা তাদের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, "বয়স কখনও ভোট কেন্দ্রে আসা বন্ধ করতে পারে না। আমার মা তার ভোট দিয়েছেন; আপনাদেরও ভোট দেওয়া কর্তব্য।"