উচ্চ আমদানিতে বাড়ছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব
দেশের বৃহৎ শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গত ডিসেম্বরে ৩২ দশমিক ৪২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে; রাজস্ব আয় হয়েছে ৪ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা।
এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস, অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বরে গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ২৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
আমদানি বাণিজ্যের পরিমান বৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ায় গত অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায়ের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সুত্র।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয় ২৭ হাজার ২৮৪ দশমিক ০৮ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আদায় হয়েছিলো ২১ হাজার ৬৬৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরের তুলানায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৫ হাজার ৬১৯ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। ছয় মাসে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ২৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
করোনাকালীন সময়েও ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ৫১ হাজার ৫৭৬ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছিলো। অর্জন করেছিলো ২৩ দশমিক ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। অন্যদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে আদায় হয়েছিলো ৪১ হাজার ৮৫৩ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা।
এবার চলতি অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায় ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কাস্টমসের রাজস্ব আহরণ মুলত আমদানি নির্ভর। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি বাড়লে রাজস্ব আদায়ও বেশি হয়।
অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে যে গতিতে রাজস্ব আদায় হচ্ছে, সে হিসেবে অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ের পরিমান ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার শুল্কায়ন কাজে নিয়োজিত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। রপ্তানি পণ্যে কোন শুল্ক না থাকলেও তামাকজাত পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক আদায় করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া স্বর্ণ এবং অনান্য পণ্যের শুল্কায়নও হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে।
২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রেকর্ড পরিমান খোলা এবং কন্টেইনারবাহী পণ্য আমদানি হয়। রেকর্ড হয় কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়েও। চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ে ১৪ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডেলিংয়ে ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এর প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায়েও।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম টিবিএসকে বলেন, দেশে শিল্পকারখানায় উৎপাদন সচল থাকায় বেড়েছে বাণিজ্যিক পণ্যের আমদানি। করোনার মহামারি কাটিয়ে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে গতি ফিরে এসেছে। করোনার আগে স্বাভাবিক সময়গুলোতে যে হারে আমদানি হয়েছিলো বর্তমানে এর চেয়েও বেড়েছে আমদানি পরিমান। ফলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব বৃদ্ধির পরিমান বাড়ছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬৪ হাজার ৩০৩ দশমিক ৬০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছিলো ৫১ হাজার ৫৭৬ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা। যেটি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ছিলো সর্বোচ্চ। প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিলো ২৩ দশমিক ২৩ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারিত হয় ৬৪ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্রা ৩১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। এই লক্ষমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ২৮৪ দশমিক ০৮ কোটি টাকা।
মাস | রাজস্ব আদায়, ২০২০-২১ অর্থবছর (কোটি) | রাজস্ব আদায় ২০২১-২২ অর্থবছর (কোটি) | প্রবৃদ্ধি |
ডিসেম্বর | ৩৬৪৮.৬৬ | ৪৮৩১.৫২ | ৩২.৪২% |
নভেম্বর | ৩৭৭০.০৩ | ৪৮০০.৬৫ | ২৭.৩৪% |
অক্টোবর | ৩৮৭১.০৮ | ৪৭৩৩.৪৬ | ২২.২৮% |
সেপ্টেম্বর | ৩৮১৬.২৬ | ৫১১৩.৯৮ | ৩৪.০১% |
আগস্ট | ৩২৬৪.৮৬ | ৪৪১০.৪২ | ৩৫.০৯% |
জুলাই | ৩২৯৩.৫৩ | ৩৩৯৪.০৫ | ৩.০৫% |
মোট |
২১৬৬৪.৪২ | ২৭২৮৪.০৮ | ২৫.৯৪% |