দিল্লি দাঙ্গা: মুসলিমদের সুরক্ষায় বিয়ে হিন্দু সাবিত্রীর
বুধবার ছিল সাবিত্রীর বিয়ে। হাতে মেহেদির লালিমা, মুখে হলুদ-চন্দনের দাগ। পরনে লাল টুকটুকে কাপড়। কেঁদে চলেছেন তিনি। কিন্তু বাপের বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার দুঃখে নয়, সাবিত্রী কাঁদছেন, কারণ বাইরে সমানে চলছে দাঙ্গা আর লুটপাট। এমন দিনেই দিল্লির সাবিত্রী প্রসাদ বসেছেন বিয়ের পিঁড়িতে।
গত মঙ্গলবার ভারতের উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে প্রচণ্ড সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ওলটপালট হয়ে গেছে মানুষের জীবন।
এর পরের দিনই বিয়ের দিন ঠিক করেন সাবিত্রীর বাবা। সাবিত্রীদের বাড়ি মুসলিম অধ্যুষিত চাঁদবাগ এলাকায়। আর এই মুসলিম প্রতিবেশীরাই শেষ পর্যন্ত রক্ষা করেছে সাবিত্রীদের।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি দল সেদিন বাড়িটি পরিদর্শন করে। তাদেরকে সাবিত্রী জানান, 'আমার মুসলিম ভাইরা আজ আমাকে রক্ষা করেছে।' বলতে বলতেই কেঁদে ফেলেন সাবিত্রী। সান্ত্বনা দেয় তার পরিবার আর প্রতিবেশীরা।
চাঁদবাগ এলাকার এক সরু গলিতে ছোট্ট এক ইটের বাড়ি। সেখানেই চুপিসারে বিয়ের আয়োজন হয় সাবিত্রী আর গুলশানের। অথচ গলির বাইরে মূল রাস্তায় রীতিমতো যুদ্ধক্ষেত্র। সমানে ভাঙচুর হচ্ছে দোকানপাট, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে এক মুসলিম মাজার। আর উভয় দলের ছোঁড়া পাথরে ভরে গেছে রাস্তা।
এই দাঙ্গায় চাঁদবাগ ও এর আশেপাশের এলাকায় নিহত হয়েছে ৩২ জন, আহত হয়েছেন হিন্দু আর মুসলিম সম্প্রদায়ের শত শত মানুষ।
সোমবার ও মঙ্গলবার ঘটে যাওয়া দাঙ্গার বিষয়ে সাবিত্রীর বাবা ভোদে প্রসাদ বলেন, 'আমরা ছাদে গিয়ে দেখি শুধু ধোঁয়া, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে সবখানে। এসব কী হচ্ছে? আমরা তো শুধুই শান্তি চাই।'
ভোদে প্রসাদ জানান, কোনো সমস্যা ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে মুসলমানদের পাশাপাশি তিনি এই অঞ্চলে বাস করছেন।
তিনি বলেন, 'কারা এসব দাঙ্গা করছে, সহিংসতা চালাচ্ছে তা আমরা জানি না; তবে তারা আমার প্রতিবেশী নয়। এখানে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে কোনো শত্রুতা নেই।'