মানুষের মতোই একনাগারে একই গান গায় না চড়ুইও!
চড়ুই পাখির সুরেলা কণ্ঠের গান আর কিচিরমিচির কিন্তু আমদের ধারণার চেয়েও বেশ জটিল। এমনকি মানুষের ভাষার সঙ্গেও এর সাদৃশ্য আছে। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ চড়ুই ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের গানের সুরে পরিবর্তন আনে, এক সুরের সঙ্গে অন্য সুরের মেলবন্ধন করে। আর এ সবই শুধু নারী চড়ুইয়ের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য।
ডিউক ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক ও ডিউক ইনস্টিটিউটের ফর ব্রেইন সায়েন্সের সদস্য স্টিফেন নোউইকি ও ইউনভার্সিটি অভ মিয়ামির তার সহকর্মীদের এ গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ চড়ুইরা সচেতনভাবে খেয়াল রাখে তারা কতোক্ষণ ধরে কোন সুরে গান গাইছে। সে অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর তারা নিজেদের সুরে পরিবর্তনও আনে!
উত্তর আমেরিকায় গান গাওয়া চড়ুই বেশ পরিচিত একটি পাখি। শুধু পুরুষ চড়ুই-ই গান গায়। নিজেদের বাসস্থান রক্ষায় আর সঙ্গীনী খুঁজে পেতে গান গায় তারা।
সঙ্গীনীকে আকর্ষণের জন্য ২ সেকেন্ডের ১২টি ভিন্ন ধরনের গান গাইতে পারে এ পাখিগুলো। এতে সময়য়য় লাগতে পারে ৩০ মিনিটের মতো। কারণ নতুন গান শুরুর আগে একটি গানই সুরে সুরে একাধিকবার গায়। শুধু তাই নয়, প্রতিবার গান গাওয়া শুরু করলে প্রতিটি গানের অর্ডারও বদলে ফেলে তারা।
কোনো গান কখনো শুরুর দিকে গাইলে সেটি এরপরে পরের দিকে থাকে- এরকম আরকি। তবে গানের এই অর্ডার বজায় রাখা আর প্লেলিস্ট সাজানোর বিষয়টি কি প্রাকৃতিকভাবেই হয় নাকি ইচ্ছাকৃত তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা আছে।
এসব চড়ুইয়ের গানের সুর শাফল করা এবং এবং এসব সুরের মিশ্রণে পরিবর্তন আনা ইচ্ছাকৃত কিনা এ বিষয়ে তথ্য যোগাড় করতে নোউইকি ও ইউনিভার্সিটি অব মিয়ামির অধ্যাপক উইলিয়াম সারসি রেকর্ড করার যন্ত্রপাতি যোগাড় করেন। পেনসিলভেনিয়ার উত্তর-পশ্চিমের বনভূমিতে যান তারা। বিভিন্ন গাছে মাইক সেট করে প্রতিদিন পাঁচ ঘণ্টা করে অপেক্ষা করতেন তারা।
৩০টির বেশি পাখির গান রেকর্ড করার পর গবেষক দল এসব গানের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে বসেন। কোন গানের পর কোন গান গাওয়া হয়েছে, কোনটি কোন অর্ডারে পরিবর্তিত হয়েছে এগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করেন। পুরুষ চড়ুইরা কোন গান গাইছে তা লক্ষ্য রাখে, এব্যাপারে প্রথম ক্লু মেলে যখন গবেষকরা দেখলেন চড়ুইগুলো সবগুলো গান গাওয়ার সময় আগে সবগুলো গান একবার গেয়ে নেয়, এরমধ্যে একই গান দু'বার গায় না। অনেকটা স্পটিফাইয়ের প্লে-লিস্টের মতো।
গবেষকরা আরও দেখতে পান কোনো চড়ুই অনেক সময় ধরে একটি গান গাইলে, পরে এই গানটি আবার গাইতে আরও বেশি সময় নেয়। ধরা যাক, কোনো চড়ুই 'ক' গানটি টানা ১০ বার গাইলো। এরপরে এই 'ক' গানটি গাইতে সে অনেক সময় বিরতি দেবে। আবার 'ক' গানটি যদি মাত্র তিনবার গাইতো, অল্প সময় পরই আবার গানটির সুর তুলতো।
একটি পাখি এখন কোন গানটি গাইবে তা নির্ভর করছে সে ৩০ মিনিট আগে কোন গানটি গেয়েছে তার ওপর।
পুরুষ চড়ুইদের গান শাফল করার দক্ষতাই সঙ্গীনী খুঁজে পেতে সুফল দেয় কিনা সেটাই দেখার বিষয়। হতে পারে, নারী পাখিটি গান শাফল ও মিক্স করায় দক্ষ পাখিটির প্রতিই বেশি আকর্ষিত হয়।