আগারগাঁও-শিশুমেলা সড়ক ছয় লেনে উন্নীত হচ্ছে
রাজধানীর অফিসপাড়া হিসেবে পরিচিত আগারগাঁওয়ে আরও একটি ১৫০ ফুট রাস্তার কাজ এগিয়ে চলছে। যে এলাকায় কয়েক বছর আগেও চোখে পড়ত সরু রাস্তা, বস্তি, অবৈধ স্থাপনা সেখানকার পরিবেশ বদলে যাচ্ছে অল্পসময়ের মধ্যেই। নতুন রাস্তাটিতে রয়েছে প্রশস্ত ফুটপাত, সাইকেল লেন, মিডিয়ান, বাস বে, পার্কিং, যাত্রী ছাউনিসহ নানা সুবিধা।
শেরেবাংলা নগরের আগারগাঁও মোড় থেকে শিশুমেলা পর্যন্ত ১৪০০ মিটারের সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সড়কটি দুই লেন থেকে ছয় লেনে উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ এগিয়ে চলছে। বিগত কয়েক বছরে এ এলাকার কয়েকটি অত্যাধুনিক রাস্তা পুরো এলাকার চেহারা একেবারে পাল্টে দিয়েছে। যে রাস্তা ছিল ২৫ ফুট, সেটি করা হয়েছে ৬০ ফুট, আবার যেটি ছিল ৫০ ফুট, তা হয়েছে ১০০ ফুট।
আধুনিক বিশ্বের আধুনিক শহরের মতো ঢাকা মহানগরীতে প্রথম ১৫০ ফুট চওড়া রাস্তার নির্মাণ হয় এ এলাকাতেই। রাস্তার সাথে আছে প্রশস্ত ফুটপাত, সাইকেল লেন, রোডসাইড গাড়ি পার্কিংয়ের মতো সুবিধা। ফুটপাত ও মিডিয়ানে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের গাছ।
চলমান সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সড়কটির উন্নয়ন কাজে এসব সুবিধার বাইরেও চলছে কয়েকটি উন্নয়ন কাজ। রাস্তাটির দুই পাশে ৫টি বাস বে, যাত্রী ছাউনিও করা হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উন্নয়নমূলক এক কাজে সরকারি অর্থায়ন ব্যতীতও অর্থায়ন করছে আইডিয়া রেস। এ প্রকল্পের আওতায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের পাশ দিয়ে বেগম রোকেয়া সরনির মেট্রোরেল পর্যন্ত ৮২২ মিটারের ১৫০ ফুট চওড়া আরও একটি রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। ঐ রাস্তাটি তৈরীতে বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা।
শিশুমেলা মোড় থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সড়কের আশেপাশে রয়েছে অন্তত ১২টি সরকারি হাসপাতাল, ২৫টির মতো সরকারি অফিস, ৫টি জাদুঘরসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এ এলাকায় সবচেয়ে বেশি লোকজনের আনাগোনা ঢাকা শিশু হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল), জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালগুলোতে। প্রতিদিন এসব হাসপাতালে আসা হাজারো রোগী, রোগীর স্বজন ও সাধারণ পথচারীদের সড়কটি ব্যবহার করতে হয়।
এ রাস্তাটিতে বেশ কয়েকটি রুটের বাস চলাচলসহ লেগুনা, সিএনজি, ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা চলাচল করায় প্রায় সারাদিনই থেমে থেমে যানজট লেগেই থাকে। বিশেষ করে হাসপাতালগুলোতে আসা রোগীদের বেশি সমস্যা পোহাতে হয়।
দুই লেনের রাস্তা থেকে ছয় লেনের রাস্তার কাজ শেষ হলে এ এলাকায় চলাচল করা মানুষের ভোগান্তি অনেকটাই কমে যাবে। এছাড়া রাস্তার দুই পাশে ৫টি বাস বে হলে যাত্রীদের বাসে ওঠা-নামার ক্ষেত্রে আগের মতো সমস্যায় পড়তে হবে না।
এ রাস্তা দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী ইসমাইল হক টিবিএসকে বলেন, পঙ্গু হাসপাতালে চাকরি করার কারণে প্রতিদিনই তালতলা থেকে হাসপাতালে যেতে হয়। বেশি সমস্যা পোহাতে হয় রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে। কয়েকমুখী গাড়ির চাপ থাকায় রাস্তা পারাপারের সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যদি রাস্তাটি চওড়া হয়ে যায় এবং পারাপারের সুবিধা থাকে তবে ভোগান্তি অনেকটাই কমে যাবে।
মোহাম্মদপুর-মহাখালী রুটে নিয়মিত চলাচলকারী আলিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাসের ড্রাইভার সুজন টিবিএসকে বলেন, শিশুমেলা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রাস্তাটিতে সারাদিনই বলা যায় জ্যাম লেগে থাকে। বিশেষ করে রিকশা-সিএনজির চাপ বেশি থাকে। এ সরু রাস্তা দিয়ে হাসপাতাল, অফিসের লোকজন যাতায়াত করে, যদি রাস্তাটি চওড়া হয়ে যায় তবে বাসের লেনে বাস, রিকশার লেনে রিকশা চললে আর অসুবিধা হবে না।
রাস্তাটি নির্মাণের কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান ডেপকনের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মো. রুবেল বলেন, এ রাস্তার দুই পাশের ড্রেনের কাজ শেষ, মাঝে ডিভাইডার ও একটি কালভার্টের কাজ চলমান রয়েছে। শুধু রাস্তার মধ্যে বেতার ভবনের একটু সামনে ব্যক্তিমালিকানাধীন ৬ শতাংশ জমি এখনও অধিগ্রহণ করা হয়নি। এটির সমাধানও হয়তো দ্রুত হয়ে যাবে।
রাস্তাটির কাজ প্রায় ৫৫ শতাংশ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মোঃ শফিউল আলম টিবিএসকে বলেন, গত বছরের জুলাই মাসে রাস্তাটির কাজ শুরু হয়, আগামী মার্চ পর্যন্ত কাজের মেয়াদ রয়েছে। পঙ্গু হাসপাতালের সামনে একটি কালভার্ট হবে সেটির কাজ চলছে এখন। দ্রুত গতিতেই কাজ এগিয়ে চলছে, আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
তবে রাস্তার সীমানার মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন ৬ শতাংশ জমি উপর একটি টিনশেড ভবন এবং ডিএনসিসির একটি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। এই দুটি বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে সে বিষয়ে মো. শফিউল আলম বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিটি অধিগ্রহণের বিষয়ে কাজ এগিয়ে চলছে আর পাবলিক টয়লেটের বিষয়ে দুয়েকদিনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এই রাস্তা নির্মাণ ও আধুনিকায়ন কাজ বাস্তবায়নের প্রকল্প পরিচালক ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক হাসান মোঃ আল মাসুদ টিবিএসকে বলেন, আধুনিক শহরের আদলে আগারগাঁওকে গড়ে তুলতেই সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সড়কটিসহ বেশ কয়েকটি সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। রাস্তাটির কাজ শেষ হলে এ এলাকার চিত্র আরও পাল্টে যাবে। ঢাকার মধ্যে এতো প্রশস্ত রাস্তা শুধু আগারগাঁওয়েই রয়েছে।