আইসক্রিম বাজারের বড় অংশ ধরতে চায় মিল্ক ভিটা
বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের মালিকানাধীন দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা এবার তাদের আইসক্রিমের ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারিত করতে চায়।
এ লক্ষ্যে মাদারীপুরে নতুন কারখানা স্থাপনের জন্য ৫২ দশমিক ২ কোটি টাকা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটিতে সবুজ সংকেত দিলেও শুধুমাত্র গ্রীষ্মকালীন এই পণ্য তৈরি করে কতটা লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, তা যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশনা দিয়েছে মিল্ক ভিটাকে।
'বৃহত্তর ফরিদপুর চরাঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও দুগ্ধের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতকরণ কারখানা স্থাপন' প্রকল্পের আওতায় এই অর্থ চেয়েছে মিল্ক ভিটা।
২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়াতে চায় মিল্ক ভিটা। ৩২৯ কোটি টাকার প্রকল্প ৩৮৯ কোটি টাকায় নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সে আলোচনায় বলা হয়, দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্যের চাহিদা সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে বেশি থাকলেও আইসক্রিমের চাহিদা ততটা বেশি নয়। এ কারণে কারখানা স্থাপনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বলা হয় মিল্ক ভিটাকে।
আইসক্রিম কারখানা তৈরির আগে মিল্ক ভিটাকে আইসক্রিম খাতের গত ১০ বছরের আর্থিক বিশ্লেষণও সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) সংযুক্ত করতে বলেছে মূল্যায়ন কমিটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিল্ক ভিটার অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ও উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা আইসক্রিম খাতের ১০ বছরের আর্থিক বিশ্লেষণ তৈরি করছি। এরপর তা আরডিপিপিতে সংযুক্ত করে দ্রুত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পুনরায় উপস্থাপন করা হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'মিল্ক ভিটার চকোবার ও অন্যান্য আইক্রিমের ভালো চাহিদা রয়েছে বাজারে। এ কারণেই আমরা ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চাই।'
মিল্ক ভিটার ২০২১ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২০ লাখ টাকার আইসক্রিম বিক্রি করেছে। আর মিল্ক ভিটার পণ্য বিক্রি হয়েছে মোট ৩১৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকার।
এদিকে লঙ্কাবাংলা ইনভেষ্টমেন্ট লিমিটেড-এর এক গবেষণা ও আইসক্রিম ব্যবসায় জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে আইসক্রিমের বাজার ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি। প্রতি বছর ১২-১৫ শতাংশ হারে বাজার বাড়ছে।
তবে করোনার কারণে ২০২০ সালে আইসক্রিমের ব্যবসা ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে সময় বিক্রি ৫০ শতাংশেরও বেশি কমে যায়। যদিও এই ধাক্কা এখন কাটিয়ে উঠেছে এই শিল্প।
এর মধ্যে পাস্তুরিত তরল দুধের বিক্রি অর্ধেকেরও বেশি। এক বছরে ১৭৪ কোটি টাকার বেশি পাস্তুরিত তরল দুধ বিক্রি করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ১২ কোটি টাকার টক দই, আড়াই কোটি টাকার রসমালাই, ১০ কোটি টাকার গুড়োদুধ, অর্ধকোটি টাকার রসগোল্লা সহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
মিল্ক ভিটার প্রধান ব্যবসা পাস্তুরিত দুধ। এর পাশাপাশি নানা ধরনের মিষ্টান্ন পণ্য উৎপাদন করে। সেসবের মধ্যে আছে কাঁচা ছানা, রসগোল্লা, সন্দেশ, চিজ, কেক, মাঠা, রসমালাই, দই, গুঁড়ো দুধ, লাবাং, ফ্লেভারড মিল্ক ও আইসক্রিম।
এদিকে মিল্ক ভিটার এই প্রকল্পের মাধ্যমে আইসক্রিম কারখানাটি স্থাপন করার কথা ছিল ফরিদপুরে। সেটি এখন মাদারিপুরে মিল্ক ভিটার নিজস্ব জমিতে কারখানাটি স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তবে পিইসি সভায় আলোচনা করা হয়, জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ফরিদপুর সদরে কারখানাটি স্থাপন করা হলে অর্থ সাশ্রয় হবে।
এ বিষয়েও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে একটি প্রতিবেদন সংযুক্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে পিইসি সভায়।
সংশোধিত প্রস্তাবে মিল্ক ভিটা একটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন দুগ্ধ কারখানাও স্থাপন করতে চেয়েছে। মাদারীপুরে আগে থেকে থাকা দুগ্ধ কারখানার পাশে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন কারখানা স্থাপন করা হলে তাতে দুধের জোগানে সংকট তৈরি হবে কি না সে বিষয়গুলোও পর্যালোচনা করতে বলেছে পিইসি।
দুধের সংস্থানে কোনো সমস্যা হবে না জানিয়ে মিল্ক ভিটার প্রতিনিধি পিইসি সভায় জানান, গাভীর জন্য ঋণ প্রদান ও জাত উন্নয়নের মাধ্যমে প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
পিইসি সভার সভাপতি ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মো. মামুন-আল-রশীদ জানান, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। তবে বেশ কিছু জায়গায় সুবিধা-অসুবিধা পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে মিল্ক ভিটাকে।
এছাড়াও প্রকল্প কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের জন্য অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে আনা, অফিসার্স ও স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার উল্লেখ এবং কারখানা স্থাপনের ব্যয় পুনর্বিবেচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।