রাঙ্গুনিয়া মিছিলের তরুণ বক্তা ভাষাসৈনিক আবুল কালাম
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' স্লোগানে মিছিল বের হয় রাঙ্গুনিয়ার মরিয়ম নগর থেকে। এ মিছিলে নেতৃত্ব দেন ভাষাসৈনিক আবুল কালাম। মিছিলে অংশগ্রহণ করেন ৭০-৮০ জন লোক। মিছিলটি মরিয়ম নগরের বেয়ানবাজার থেকে বের হয়ে কাপ্তাই সড়কের চৌমুহনী পৌঁছলে তৎকালীন পাকিস্তানের অনুগতরা 'রাষ্ট্রভাষা উর্দু চাই' স্লোগান দিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। এতে গুরুতর আহত হন ভাষাসৈনিক আবুল কালাম। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার খবর পেয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে শতাধিক মানুষ মাইজপাড়া থেকে নূরজাহান বালিকা বিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সভা করেন। এ সভায় আহত সৈয়দ আবুল কালামের পিতা মাওলানা সৈয়দ আবদুল হক তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
ভাষাসৈনিক আবুল কালাম চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ভাষা আন্দোলনের চরম মুহূর্তে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জনসভা ও প্রতিবাদ সভায় তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। প্রতিবাদ সভায় বলিষ্ঠ বক্তব্যের কারণে সেসময় ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া নেতাদের নজরে আসেন তিনি।
১৯৫০ সালে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান চট্টগ্রাম কলেজে আসেন। সেদিন প্রথম প্রকাশ্যে ছাত্র বিক্ষোভ হয়। এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান 'আরবি হরফে বাংলা প্রচলন' সংক্রান্ত একটি প্রকল্প চালু করেন। এর প্রতিবাদে ছাত্ররা প্রকাশ্যে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
এরপর ইনডিপেন্ডেন্ট স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন নামে একটি ছাত্রজোট গড়ে তোলা হয়। পরবর্তী সময়ে এই সংগঠনের নাম পাল্টে ৫২'র ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে 'সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ' করা হয়। এসব কর্মকাণ্ডে আবুল কালামের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার কারণে পটিয়া, হাটহাজারী ও চট্টগ্রামের কমিটির সাথে যুক্ত হয়ে আন্দোলনকে বেগবান করে তুলেন। এরই ধারাবাহিকতায় নিজ গ্রাম মরিয়ম নগরেও ভাষা আন্দোলন কমিটি গঠন এবং সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবির আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
রাঙ্গুনিয়ার মরিয়ম নগর গ্রামে ১৯৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন ভাষাসৈনিক সৈয়দ আবুল কালাম। পিতা মাওলানা সৈয়দ আবদুল হক ছিলেন একজন আলেম। তার বাল্যশিক্ষা শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ায়। তিনি ১৯৫০ সালে রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক (এসএসসি) এবং ১৯৫২ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে আইএ (এইচএসসি) পাস করেন। ১৯৫৪ সালে বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়া কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অফিসে চাকরি নেন।
ভাষাসৈনিক আবুল কালাম ৫২'র ভাষা আন্দোলন সংগ্রাম থেকে শুরু করে ৬ দফা আন্দোলনসহ মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন।
১৯৮৫ সালে শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্বেচ্ছা অবসরে যান আবুল কালাম। ১৯৯২ সালের ১৯ জুন ব্রেইন স্ট্রোকে মারা যান এ ভাষাসৈনিক।
টিবিএস ও নগদ-এর যৌথ উদ্যোগ