শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলা: অবশেষে সাস্টের ভিসির দুঃখ প্রকাশ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় অবশেষে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
হামলার ঘটনার ২৭ দিন পর শনিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে উপাচার্য দুঃখ প্রকাশ করে এক বিবৃতি দেন।
তবে দুঃখ প্রকাশ করলেও তা শিক্ষামন্ত্রীর পরামর্শে, শুক্রবার শাবিতে এসে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হামলাসহ চলমান ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করতে উপাচার্যকে পরামর্শ দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে গত ১৬ জানুয়ারি থেকে আন্দোলন করছেন শাবি শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে শুক্রবার ক্যাম্পাসে আসেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল।
এসময় উপাচার্যের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আপত্তির বিষয়টি আচার্যকে অবহিত করারা আশ্বাস দেন শিক্ষামন্ত্রী।
পরে শিক্ষকদের সাথে আলোচনায় বসেন মন্ত্রী। দীর্ঘ ২৬ দিন পর নিজ বাসভবন থেকে বেরিয়ে এসে এই আলোচনায় অংশ নেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এসময় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলাসহ চলমান ঘটনাগুলোর জন্য উপাচার্যকে দুঃখ প্রকাশ করার পরামর্শ দেন শিক্ষামন্ত্রী।
ওই বৈঠকের পর শাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে দুঃখ প্রকাশ করতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেছেন, আপনার জায়গায় আমি থাকলেও এতোদিনে দুঃখ প্রকাশ করতাম।
এরপরই আজ দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিলেন উপাচার্য।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা আহত হয়েছেন, তাদের সবার প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।
'বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। উক্ত ঘটনার ধারাবাহিকতায় সৃষ্ট অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক , শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।'
ফরিদ উদ্দিন আরও বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অবস্থা দ্রুত ফিরিয়ে আনতে শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে শিক্ষা উপমন্ত্রীসহ সরকারের সব স্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ সিলেটের সুশীল সমাজের সবাইকে এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি শাবি শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ' ছাত্রী।
১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
বাসভবনের সামনে অবস্থানের কারণে গত ১৭ জানুয়ারি থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ফরিদ উদ্দিন আহমদ।
১৯ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরদিনই বাড়ি চলে যান।
২৩ জানুয়ারি আরও চারজন ও ২৪ জানুয়ারি একজন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন। ২৩ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অবরুদ্ধ উপাচার্যের জন্য প্রক্টর, শিক্ষক সমিতির নেতা ও দুজন কাউন্সিলর খাবার নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের বাধায় তারা বাসভবনে ঢুকতে পারেননি।
২৮ ঘণ্টা পর ২৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করেন তারা।
২৬ জানুয়ারি অনশন ভাঙার পর জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হকের হাতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচটি দাবি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য তুলে দেন।
এরপর ৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক পদ থেকে অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদকে সরিয়ে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়, অসুস্থতার কারণে তাকে অপসারণ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে প্রক্টরের পদ থেকে গত বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রয়ারি) আলমগীর কবীরকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে জহির উদ্দিন আহমদ ও আলমগীর কবীরের অপসারণও ছিল।