ব্যবসায়ীদের ধূসর ভালোবাসা দিবস
এবারেও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুন একই দিনে অনুষ্ঠিত হলেও পুরোপুরি রং ছড়াতে পারেনি ব্যবসায়। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দিবসটি উদযাপনে যেমন মানুষের মনে সেভাবে রং ছড়ায়নি তেমনি রংহীন ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যেও।
দিবসটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন পোশাক ও ফ্যাশন হাউসের শোরুম, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বিপণিবিতানসহ ফুলের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় থাকার কথা থাকলেও এবছর মানুষের আনাগোনা ছিল কম। সাথে শোরুম, হোটেল, রেস্টুরেন্টগুলোতে ক্রেতাদের জন্য বিশেষ ছাড় থাকলেও বিক্রি এবং ক্রেতার উপস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় ব্যবসায়ীরা।
ভালোবাসা দিবস বা পয়লা ফাল্গুন উপলক্ষে এবছর পোশাক, খাবার, ফুল ব্যবসায়ীরা বিগত দুই বছরের থেকে বেশি বিক্রি করেছেন তবে তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী নয়। ওমিক্রনের প্রভাব পড়েছে তাদের বিক্রিতে।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
ফুলের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, ক্রেতা কম
পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বাজারে বেড়ে যায় ফুলের চাহিদা, তবে সেই চাহিদাকে পুঁজি করে পাইকারি বাজারে ফুলের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। খুচরা ক্রেতারা ফুল কিনতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খান দাম শুনে।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁও পাইকারি ও খুচরা ফুলের মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, অন্য বছরের তুলনায় ক্রেতাদের আনাগোনা অনেকটাই কম। আবার যারা ফুল কিনতে আসছেন, তারা ফুলের দাম শুনে থমকে যাচ্ছেন।
ফুল বাগান মালিক এবং পাইকারি বিক্রেতাদের বিক্রি ভালো হলেও খুচরা বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। অনেক ব্যবসায়ী বেশি দামে অল্প ফুল কিনেও আশানুরূপ বিক্রি করতে পারেনি।
আবুল খায়ের নামে এক ব্যক্তি ফুল কিনতে এসে ৮টি গোলাপ আর অন্য ফুল দিয়ে একটি বাকেট বানাতে বললে ফুলের দোকানি তার কাছে ২৫০০ টাকা দাম হাঁকে। দাম শুনে খায়ের যেন আকাশ থেকে পড়লেন!
তিনি টিবিএসকে বলেন, "গত বছরও এ সময়ে গোলাপ ৪০/৫০ টাকা করে কিনেছি কিন্তু এবছর দাম চাচ্ছে ১২০ টাকা করে। এখন ভাবছি ফুলের তোড়া না বানিয়ে কয়েকটি গোলাপ আর রজনীগন্ধা দিয়ে ছোট একটি তোড়া বানিয়ে প্রিয়জনকে উপহার দিবো।"
ফুল ক্রেতা লায়লা আক্তার টিবিএসকে বলেন, "অন্য বছরের থেকে দাম একটু বেশিই। এখনও বাজারে ফুল দেখছি, পছন্দ হলে কিনবো।"
ফ্লাওয়ার জোন দোকানের ফুল বিক্রেতা মো. আলাউদ্দিন টিবিএসকে বলেন, "অন্য বছরের থেকে এবছর দাম বেশি। অন্য বছর যেখানে গোলাপ প্রতি পিস ৩/৪ টাকা দরে কেনা হতো সেখানে এবছর ১২/১৫ টাকায় কিনতে হয়। লোকাল গোলাপ ৫০ টাকায় বিক্রি এবং বিদেশিটা ১০০/৮০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, বাগান থেকে দাম বাড়িয়ে দেয়। গত সপ্তাহে গোলাপ ১০-২০ টাকায় বিক্রি হতো। এ সপ্তাহে দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। গ্লাডিওলাস ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে, কিনতে হয় ৩০/৩৫ টাকায়।
ফুল বিক্রেতা মো. সায়েম বলেন, "অন্য বছর ১/১.৫ লাখ বিক্রি হয় এই দিনে। এবছর ফুলই কম কিনেছি। এবছর ৫০ হাজার টাকার ফুল কিনেছি। অন্য বছর এ টাকায় দ্বিগুণেরও বেশি ফুল কিনতে পারতাম। হোলসেলের বাজার ভালো কিন্তু রিটেইলে ভালো না।"
আগারগাঁও পাইকারি ফুলের বাজারের কোষাধ্যক্ষ শাহাদাত হোসেন টিবিএসকে বলেন, এখানে সব মিলে ১৫০টির মতো দোকান রয়েছে। পাইকারি বাজারে অন্যান্য বছরে ২/৩ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। এবছর টার্গেট ৫ কোটি টাকা। অন্য বছরের তুলনায় এবছর দাম দ্বিগুণেরও বেশি।
আগারগাঁও পাইকারি ফুলের বাজারে এ দিবসকে কেন্দ্র করে দুই দিনে প্রায় ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের যশোর প্রতিনিধি জানান, ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালীর ফুলচাষীরা প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছে। এবার গোলাপের পাইকারি দামে রেকর্ড ভেঙ্গেছে। প্রতিটি গোলাপ ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। একই সঙ্গে গ্লাডিওলাস, জারবেরা ও রজনীগন্ধা ফুলের দামও চড়া। অসময়ে বৃষ্টি ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দামে কিছুটা পুষিয়ে নিয়েছে এখানকার চাষীরা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আরো ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা এই অঞ্চলের ফুলচাষীদের।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির একাংশের সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, এবছর ভালবাসা দিবস ও বসন্তবরণ একইদিনে পড়েছে। দুটি দিবস ঘিরে যশোরে অঞ্চলের চাষীরা প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছে। এরমধ্যে গোলাপ রেকর্ড পরিমাণ দামে বিক্রি হয়েছে। ১৫ থেকে ১৮ টাকা দরে কৃষকরা কখনো গোলাপ বিক্রি করতে পারেনি। করোনাকালে গোলাপ গাছ নষ্ট হওয়ায় উৎপাদন কম হলেও দামে পুষিয়ে গেছে। জারবেরা, গ্লাডিওলাস ও রজনীগন্ধা ফুলের দামও ভাল পেয়েছে চাষীরা। এমন দাম থাকলে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে যে লাগাতার ক্ষতি হয়েছে, কৃষকরা সেটা কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারবে বলেই আশা এই নেতার।
বাসন্তী পোশাকের বিক্রি কম
পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে বিপণীবিতানগুলো সেজেছে ফাল্গুনের ছোঁয়ায়। তবে বিক্রি তাদের স্বাভাবিক সময়ের চেয় কম হয়েছে। বিক্রি কমার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, করোনার প্রভাব তো আছেই তার উপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, সীমিত আকারে হয়েছে বসন্ত উৎসব, বইমেলাও শুরু হয় নি।
এ দিবস উপলক্ষ্যে পোশাকে হলুদ, বাসন্তি, কমলা, লাল রঙের প্রাধান্য থাকে। উপহারের বাক্সও যায় প্রিয়জনদের কাছে। এ জন্য ফ্যাশন হাউসগুলো নতুন নতুন ফ্যাশনের পোশাক নিয়ে আসে। এবছরও হয়নি ব্যতিক্রম তবে বিক্রিতে সন্তুষ্ট নয় ব্যবসায়ীরা।
সোমবার রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং সেন্টার, আজিজ সুপার মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, ফাল্গুনি সাজে সেজেছে প্রতিটি ফ্যাশন হাউজ অথচ ক্রেতার সংখ্যা নগন্ন।
আজিজ সুপার মার্কেটের ফ্যাশন হাউজ কে-ক্রাফট, কাপড়-ই-বাংলা, শাল মহুয়া, বিসর্গ, নিউ ক্রাফট, অন্য রকম সহ বিভিন্ন হাউজ ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ফ্যাশন হাউজ ভর্তি ফাল্গুনের পোশাকে।
আজিজ সুপার মার্কেটের কে-ক্রাফট শোরুম ম্যানেজার শেখ লুতফুর রহমান টিবিএসকে বলেন, করোনার আগে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিক্রি হতো এ উৎসব উপলক্ষে। এখন তার চারভাগের একভাগও হয় না। তবে গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বিক্রি হয়েছে।
ফ্যাশন হাউজ কাপড়-ই-বাংলার ম্যানেজার জুয়েল বিশ্বাস টিবিএসকে বলেন, "ভেবেছিলাম ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে অনেকের। বসন্তের অনুষ্ঠান স্বাভাবিক হবে তাই অনেক পোশাক ডিজাইন করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের চারভাগের তিনভাগই অবিক্রিত রয়েছে। ১৪টি ডিজাইনের ৮০০ পণ্য তৈরী করেছি। বিক্রি হয়েছে ২০০ পণ্য। তবে গত বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি বিক্রি হয়েছে।"
জুয়েল বিশ্বাস বলেন, করোনার আগে পহেলা ফাল্গুনের দিনসহ আগের কয়েকটা দিন ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকতে দোকানে। তখন আপনার সঙ্গে কথা বলারও সময় পেতাম না। আর এখন একটা ক্রেতাও নেই। পহেলা ফাল্গুনের আগের দিন একলাখের বেশি বিক্রি হতো এবার ২০ হাজারও বিক্রি হয় নি।"
তিনি বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলে শিক্ষার্থীরা আসতো কেনাকাটা করতে। আর ফাল্গুনের অনুষ্ঠানও নেই। অনুষ্ঠান না থাকলে ঘুরতে লোকজন কোথায় বের হবে! আমাদের মার্কেটে 'টিশার্ট মেলা' হতো সেটাও করোনার কারণে আয়োজন করা হয়নি। ফলে বসন্ত উদযাপনের আমেজ কম। তাই উৎসব উপলক্ষে বিক্রিও কম।"
আজিজ কো-অপারেটিভ দোকান-মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নাজমুল আহসান নাজু বলেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বিক্রি ৭৫ শতাংশ কমে গেছে। করোনার কারণে ক্রেতারা কম আসছেন।
ফ্যাশন আন্ট্রাপ্রেনারস এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহিন আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "স্বাভাবিক সময়ে যে বিক্রি তার তুলনায় কম হয়েছে। কিন্তু গত বছরের তুলনায় ভাল বিক্রি হয়েছে। ২০২০ সালে করোনা ছিল না, তখন খুব ভাল বিক্রি হয়েছিল। এবার গতবারের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি বেচাকেনা হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, আমরা ভেবেছিলাম ২০২১ সালের তুলনায় এবার অনেক ভাল বিক্রি হবে, সেটা হয় নি। সেটাও হয়তো হতো কিন্তু অমিক্রন বেড়ে গিয়েছিল, আবার স্কুল-কলেজগুলো বন্ধ।"
"অনুষ্ঠান করার জন্য কিছু বিধিনিষেধও রয়েছে। আবার দেখা যায় ভ্যালেন্টাইনস ও বসন্তে বইমেলাও একটা বড় উপলক্ষ হয়ে থাকে। কিন্তু বইমেলা শুরু হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক অনুষ্ঠান হয়, সেগুলো বন্ধ থাকার কারণে যেরকম আশা করেছিলাম সেটা হয় নি।"
তবে উচ্চবিত্তদের ফ্যাশন হাউজগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
টুয়েলভ লাইফ স্টাইল-এর চিফ অপারেটিং অফিসার মো. মতিউর রহমান বলেন, "গত তিন বছরের মধ্যে আমরা ভাল বিক্রি করেছি। এবার আমাদের কালেকশনের স্টক শেষ। পাঞ্জাবি-কুর্তি খুব ভাল বিক্রি হয়েছে। পাঞ্জাবির দাম পড়েছে ১৬৯০ থেকে ২৪৯০ টাকা। আমরা মনে করি, ক্রেতারা প্যান্ডেমিকের যে ট্রমার মধ্যে ছিল সেটা থেকে বেড়িয়ে এসেছে আস্তে আস্তে। আমরা আশা করছি, আগামী ঈদে আরও ভাল বিক্রি হবে।"
হোটেল-রেস্টুরেন্টে গত বছরের চেয়ে ক্রেতা বেড়েছে ৫০ শতাংশ
নানা প্রতিষ্ঠান ও তারকা হোটেলগুলোর আয়োজনের বৈচিত্র আর বর্ণিলতায় প্রতিটি দিবস হয়ে ওঠে আরও বর্ণিল। রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুড, কফিশপগুলোতে দিবসটি উপলক্ষ্যে বাড়তি চাপ থাকার কথা থাকলেও এবছর তেমন আলো ছড়ায়নি তাদের ব্যবসায়। তবে গত বছরের চেয়ে ৫০ শতাংশ গ্রাহকের উপস্থিতি ছিল বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা, লা মেরিডিয়ান ঢাকা, আমারি ঢাকা, রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন, বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস মায়া সহ বিভিন্ন হোটেল আকর্ষণীয় রুম প্যাকেজ, ক্যান্ডেল লাইট ডিনার আর প্রিয়জনকে চমকে দেবার নানা আয়োজন করে।
সদ্য ঢাকায় যাত্রা শুরু করা শেরাটন ঢাকা তাদের সবচেয়ে বড় লাইভ কিচেন রেস্টুরেন্ট দ্য গার্ডেন কিচেনে ১৩-১৪ ফেব্রুয়ারি আল্টিমেট বুফে আয়োজনে ডিনারে জনপ্রতি ৭৯৯৯ এবং লাঞ্চে ৫৯৯৯ টাকার প্যাকেজ দেয়।
হোটেলটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শাহনুর আজাদ টিবিএসকে বলেন, "আমরা যে পরিমাণ আশা করেছিলাম, সে অনুযায়ী লোকজন আসে নি।"
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান টিবিএসকে বলেন, "রেস্টুরেন্টে এ সময়ে একটু বেশি হয় বিক্রি তবে করোনার প্রভাবে আশানুরূপ নয়। ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে বিক্রি গত বছরের চেয়ে বেশি ছিল।"
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এইচএম হাকিম আলী টিবিএসকে বলেন, "গত দুই বছর আমাদের এ সেক্টর বলা যায় একেবারে বন্ধই ছিল। এবছর আমাদের লক্ষ্য ছিল ভালোবাসা দিবসে করোনা পরিস্থিতি কেটে যাবে কিন্তু ওমিক্রনের প্রভাবে বিধিনিষেধ থাকায় আমাদেরও স্বল্প পরিসরে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে।"
গত বছরের তুলনায় এবছর প্রায় ৫০ শতাংশ ক্রেতা বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমাদের যতোটুকু লক্ষ্য ছিল সে অনুযায়ী সাড়া পাচ্ছি। তবে এ দিবসকে ঘিরে আমাদের আর্থিক হিসাব আলাদাভাবে করা হয় না।"