'অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াত নিরাপদ'
অসংক্রামক রোগ যেমন- ডায়াবেটিকস, ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, শ্বাসযন্ত্রের রোগ, অ্যাজমা ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদী রোগ। এসব ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়, দেশের ৬৭% মানুষ এসব রোগে মারা যায়। যদি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াত করেন, তাহলে এসব রোগ খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে এ্যাস্ট্রাজেনেকা, কার ফ্রী সিটিস অ্যালায়েন্স এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট।
বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ''অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে করণীয়'' শীষর্ক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে বুয়েট শিক্ষার্থীদের একটি টিম বিষয়টি নিয়ে তাদের মাঠ জরিপ তুলে ধরেন। জরিপটি ছিল ঢাকার রায়েরবাগ ও খিলক্ষেত এলাকা সংলগ্ন কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপর।
রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা দূর করে নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ পরিবেশ তৈরির জন্য তিনটি নকশার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন সুপারিশ, যেমন- বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ, সড়কের পাশ থেকে পার্কিং, দোকানের মালামাল অপসারণ, বাসার সামনে সবুজায়ন বৃদ্ধি, সড়কের পাশে পকেট পার্ক তৈরি ইত্যাদি তুলে ধরেন।
জরিপের ফলাফল হিসেবে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকার ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে মাত্র ১৫ মিনিট দূরত্বে বসবাস করেন। ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী হেঁটে যাতায়াত করে এবং নিম্ন আয়ের এলাকার প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী হেঁটে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করেন।
৪ শতাংশ শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার করে, যা ঢাকা শহরে স্কুল চলাকালীন সময়ে ভয়াবহ যানজট সমস্যা সৃষ্টি করে। শিক্ষার্থীরা যদি হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে, তাহলে নগরের যানজট সমস্যা অনেকটা কমে যাবে। এছাড়াও ঢাকা শহরে দিনে যানজটে ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় বলেও জানায় জরিপ দলটি।
দলটি বলে, গবেষণায় প্রমাণিত যে মাত্র ২০ মিনিট হাঁটলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়, বিদ্যালয়ে হেঁটে গেলে মানসিক চাপও দূর হয়, পড়াশোনার মনোযোগও বেড়ে যায়। হেঁটে যাতায়াতে অর্থ ব্যয় হয় না এবং এক্ষেত্রে কোন ধরণের জ্বালানী ব্যয় না হওয়ায় কম কার্বন নির্গমন হয়, পরিবেশ কম দূষণ হয় এবং পাশাপাশি সড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কম হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, একটি শহর যদি ৮ বছর এবং ৮০ বছরের মানুষের জন্য নিরাপদ ও প্রবেশগম্য হয়, তাহলে শহরটি সবার জন্যই নিরাপদ ও প্রবেশগম্য। একইভাবে, শিক্ষার্থীদের জন্য হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হলে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকলেই উপকৃত হবেন।
বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের লেকচারার নিয়াজ মো জাফরী বলেন, অসংক্রামক রোগের জন্য মূলত পাঁচটি কারণ। এগুলো হলো-শারীরিক কার্যক্রমের অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, তামাক সেবন, এ্যালকোহল সেবন এবং বায়ুদূষণ। শিক্ষার্থীরা হেঁটে যাতায়াত করলে এসব রোগ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বাস, প্রাইভেট কার, মোটর সাইকেল ইত্যাদির ব্যবহার না করে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করলে করোনা ভাইরাসসহ সকল ধরণের সংক্রামক রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কম বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, অপর্যাপ্ত ফুটপাত, অসমান- ভাঙ্গাচোরা ফুটপাত এবং অপর্যাপ্ত সমতল পারাপার ব্যবস্থা ইত্যাদির কারণেও শিক্ষার্থীরা হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতে অনাগ্রহী। এসব সমস্যার সমাধানে একাডেমিক গবেষণার পাশাপাশি রাজনৈতিক এডভোকেসি করতে হবে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে এসব সমস্যার সমাধান হয় না।
অনুষ্ঠানের শেষে রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল এবং সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের ৩০ জন শিক্ষার্থীকে 'ইয়াং এডভোকেটস অন এনসিডি প্রিভেনশন' হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন মাদকবিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, এইড ফাউন্ডেশনের আবু নাসের অনিক, একুশে সংবাদের আল-আমিন তৌহিদ প্রমুখ।