ইউক্রেনের দুই অঞ্চলকে স্বাধীন ঘোষণা করলেন পুতিন, জাতিসংঘে জরুরি সভার আহ্বান
পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী দুই রুশপন্থী অঞ্চলকে 'স্বাধীন' ঘোষণা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পশ্চিমা দেশগুলোর লাগাতার সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেই সোমবার দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে মস্কো। খবর আল জাজিরার।
স্থানীয় সময় সোমবার রাতে রাশিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলে এক দীর্ঘ ভাষণে পুতিন ইউক্রেনের ওই দুই অঞ্চলকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, "আমি বিশ্বাস করি, অবিলম্বে দোনেৎস্ক ও লুহানস্কর স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী সিদ্ধান্তের প্রয়োজন।"
অঞ্চল দুটিকে স্বাধীন ঘোষণার পর সেখানে 'শান্তি বজায়' রাখতে সৈন্য মোতায়েন করতে চায় রাশিয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি সভার আহ্বান জানানো হয়।
নিরাপত্তা পরিষদের এই জরুরি সভা ৯০ মিনিট পর শেষ হয়েছে সকাল সাড়ে ৯টায়।
সভায় আলবেনিয়া, ফ্রান্স, ভারত ও ব্রাজিলের প্রতিনিধিরা ইউক্রেনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পরিস্থিতি সামলে নিতে তারা কূটনৈতিক সংলাপের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
জাতিসংঘে চীনের প্রতিনিধি ঝাং জুন নিরাপত্তা পরিষদে অতি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। ঝাং জানিয়েছেন, ইউক্রেনে যা ঘটছে তা 'গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ' করছে বেইজিং। সেইসঙ্গে পরিস্থিতির উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে এমন যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে 'সব পক্ষকেই' বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তবে, ঝাং তার বক্তব্যে সভার অন্য প্রতিনিধিদের মতো ইউক্রেনের দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলকে মস্কোর স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের নিন্দা করেননি।
এদিকে, জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিক লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করবে যুক্তরাষ্ট্র। জরুরি সভা শেষে এক সংক্ষিপ্ত প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গিতে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক বিদ্রোহী অঞ্চলকে স্বীকৃতি দেওয়ার রুশ পদক্ষেপ মিনস্ক চুক্তিকে ভঙ্গ করেছে; আর এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মঙ্গলবার রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেবে।
অন্যদিকে, জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া জরুরি সভার বক্তব্যে দাবি করেছেন, পূর্ব ইউক্রেনে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর ওপর ইউক্রেনের 'কথিত অস্থিরতা' এবং দেশটির 'উস্কানিমূলক বক্তব্যের' কারণেই রাশিয়া এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
সেইসঙ্গে তিনি বলেন, "আমরা কূটনীতির জন্য উন্মুক্ত রয়েছি; ডনবাসে আমরা কোনো রক্তপাত চাই না।"
সভায় বক্তব্য রাখেন ইউক্রেনের প্রতিনিধি সের্গেই কিসলিৎসা। তিনি পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকা দুটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য পুতিনের 'অবৈধ' সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি রাশিয়াকে এমন একটি 'ভাইরাসের' সঙ্গে তুলনা করেছেন, যেটি পুরো বিশ্বের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে; এমনকি জাতিসংঘকেও সংক্রমিত করছে।
এর আগে সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে পুতিন সিদ্ধান্ত নেন দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হবে। রুশ সংবাদ সংস্থা জানায়, ওই বৈঠকে পুতিন বলেন, "আপনাদের সবার মতামত জানলাম। আজই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
একটি বিবৃতিতে ক্রেমলিন জানায়, পূর্ব ইউক্রেনের দুই রুশপন্থী অঞ্চলকে স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা করতে পারেন পুতিন। অদূর ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে লিখিত নির্দেশও দেবেন তিনি। এরপরই সংবাদ সংস্থা এএফপি জানায়, এই সিদ্ধান্তের কথা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো এবং জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসকে জানিয়েছেন পুতিন। কিন্তু টেলিফোন আলাপে দুই দেশের প্রধানই এ ব্যাপারে অসম্মতি প্রকাশ করেছেন। এরমধ্যেই দুই অঞ্চলকে স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা করে ডিক্রিতে সই করেন পুতিন। এবং পরবর্তীতে টেলিভিশন চ্যানেলে এ ভাষণ দেন।
এই স্বীকৃতির পর ইউক্রেন-রাশিয়ার দীর্ঘ টানাপোড়েনের অবসান ঘটাবে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক মহলের একাংশ। এর আগে, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অংশ দখল করে নেয় রাশিয়া। সেই দখলকে কেন্দ্র করে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে প্রায় ১৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাই পশ্চিমাবিশ্বের সতর্কবার্তা, আবারও এক রক্তক্ষয়ী সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে রাশিয়া।
সূত্র: আল জাজিরা