কিয়েভের রাস্তায়-রাস্তায় চলছে লড়াই, জেলেনস্কির দেশ ছাড়তে অস্বীকৃতি
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার থেকে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর থেকেই দেশটিতে বিস্ফোরণ ঘটছে। গতকাল কিয়েভেও শুরু হয় বিস্ফোরণ।
এ অবস্থায় রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কি দেশের জনগণকে আক্রমণের বিরুদ্ধে 'দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর' আহ্বান জানান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে দেশ থেকে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানালে তাতে রাজি হননি তিনি।
এরইমধ্যে শত শত হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া, কিয়েভের একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এবং সেতু ও স্কুল ভেঙে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা এই আক্রমণের পেছনের মূল লক্ষ্য হিসেবে ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন সরকারকে উৎখাত করাকেই বিবেচনা করছেন।
রাশিয়ার এই আক্রমণে বিশ্বের মানচিত্র পুনরায় বদলাতে ভূমিকা রাখবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
শুক্রবার রাতে রাজধানী কিয়েভে ইউক্রেনের সশস্ত্রবাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াই হয়েছে রুশ বাহিনীর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিভেয়ের পশ্চিমে একটি মেট্রো স্টেশনের কাছে বিস্ফোরণ হতে দেখা গেছে; উত্তরের একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিতে দুই বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলছে; এছাড়া, একাধিক প্রতিবেদনের খবর অনুযায়ী, শহরের দক্ষিণে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণের জন্যও চলছে তুমুল লড়াই।
কিয়েভে চলমান এই লড়াইয়ের ভিডিও ফুটেজ শেয়ার হতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফুটেজে শহরের পশ্চিমে একটি চিড়িয়াখানার কাছাকাছি মেট্রো স্টেশন বেরেস্তিসকা পাশেই বোমা হামলা হতে দেখা গেছে।
দ্য কিয়েভ ইন্ডিপেনডেন্টের তথ্য অনুযায়ী, বেরেস্তিসকা মেট্রো এবং চিড়িয়াখানার কাছে শুল্যাভকা জেলায় ৫০ টিরও বেশি বিস্ফোরণ ও ভারী মেশিনগান দ্বারা গুলিবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে।
ওই এলাকার আতঙ্কিত বাসিন্দারা অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বিস্ফোরণের আলোর ঝলকানি এবং গোলাগুলির শব্দের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। সেখানে একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে হঠাৎ লাল আলো জ্বলে ওঠে। বোমারু বা স্নাইপারদের গাইড করার জন্য ওই ভবনের ওপর লাল আলো ফেলা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। অনেকে বলছেন, সামরিক বাহিনী যেনো ওই ভবনে বোমা হামলা না করে, সেই নির্দেশ দিতেই লাল আলো দিয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।
এদিকে, রাশিয়া ডিনিপার নদীর তীরে অবস্থিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় ট্রয়েশচিনার উত্তরের শহরতলীতেও হামলা হয়েছে। এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এ সময়ে কয়েক ডজন রাশিয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সেইসঙ্গে শুক্রবার রাতে ইউক্রেন সরকার দাবি করে, কিয়েভের উপকণ্ঠে প্যারাট্রুপার বহনকারী দুটি রাশিয়ান সামরিক বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী।
এছাড়া, স্থানীয় সময় ভোর ৩টায় ভাসিল্কিভ শহরে দুই বাহিনীর মধ্যে চলে তুমুল সংঘর্ষ।
স্থানীয় মিডিয়া নেটওয়ার্ক নেক্সটা জানিয়েছে, 'ইউক্রেনীয় পুলিশের ইউনিফর্ম পরে রাশিয়ানরা ভাসিল্কিভের কাছে একটি চেকপয়েন্টে আক্রমণ করে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের ওপর গুলি চালায়। এর পরপরই একটি ট্রাকে করে একদল রাশিয়ান সামরিক বাহিনী ওই এলাকায় ঢুকে পড়ে। তারপর থেকেই সেখানে চলছে প্রচণ্ড লড়াই চলছে।'
এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক করেছিলেন, রাশিয়ানরা রাতারাতিই কিয়েভ দখল করে নিতে চায়। এর পরপরই শহরের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক আক্রমণ চলতে থাকে।
- সূত্র: ডেইলি মেইল ও এপি