৪ ধরনের বস: কার অধীনে কাজ করলে ক্যারিয়ারে সফল হবেন?
আপনার বস কেমন? তিনি কি আপনাকে কাজের ক্ষেত্রে গাইড করেন? লক্ষ্য অর্জনে উৎসাহ দেন? না কি ভবিষ্যতে আপনার কাজে আসবে এমন নেটওয়ার্ক তৈরিতে সাহায্য করেন? ভালো বসরা সাধারণত এই সবগুলো কাজই করে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে কাজের পরিবেশ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। কর্মীরা সকলেই এখন তাদের দক্ষতা বাড়াতে চান। ক্যারিয়ার উন্নয়নে কোন ধরনের বস সবচেয়ে সেরা হয়ে থাকেন তা বের করতে আন্তর্জাতিক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান গার্টনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিশ্বের পাঁচ হাজার ব্যবস্থাপকের ওপর এক জরিপ পরিচালনা করে। জরিপের ভিত্তিতে গবেষকরা এই ব্যবস্থাপকদের চার শ্রেণিতে ফেলেন।
চার ধরনের বস
১। শিক্ষক বস: এই বসরা নিজেদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অধীনস্ত কর্মীদের শেখানোর চেষ্টা করেন। তাদের কাজের মূলমন্ত্র হলো: "আমি এই কাজ এভাবে করতাম, আর তাই তোমাদেরও এভাবেই করা উচিত।" শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ ব্যবস্থাপকরা সাধারণত তাদের প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের কারণে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে থাকেন।
২। লেগে থাকা বস: এ ধরনের বসরা তাদের কর্মচারীদের সবসময় চোখে চোখে রাখেন। কর্মীদের নিয়মিত গাইড করার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত তাদের মূল্যায়ন করে থাকেন।
৩। চিয়ারলিডার বস: এই বসরা সাধারণত কর্মীদের নিজের মতো কাজ করার জন্য ছেড়ে দেন। কর্মীরা যেন নিজেরাই নিজেদের উন্নয়নে মনোযোগ দিতে পারে সেজন্য উৎসাহ দেন তারা। যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে সহজেই তাদের সহযোগিতা পাওয়া গেলেও কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে তারা অন্যদের মতো লেগে থাকেন না।
৪। যোগাযোগ স্থাপনে সাহায্যকারী বস: এই বসরা কর্মীদের স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রের নানাদিক সম্পর্কে অবহিত করেন। এই খাতে কাজ করলে কী ধরনের সুবিধা-অসুবিধা হতে পারে তার নানা দিক জানান। তারা দলের অন্যান্য সদস্য, এমনকি প্রতিষ্ঠানের অন্যদের সঙ্গেও কর্মীদের পরিচয় করিয়ে দেন। কোন ধরনের কাজে কার সাহায্য নিলে ভালো হবে, সেই বিষয়গুলোও বুঝিয়ে দেন।
যোগাযোগ স্থাপনকারী বসরাই সেরা
সব বসই কিন্তু কর্মীদের সেরাটা দিতে পারেন না। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষকের ভূমিকা নেওয়া বসরা সব কাজ নিজেদের পছন্দমতো করতে ভালোবাসেন। তারা নতুন ধারণা বা কৌশল নিয়ে কাজ করতে দ্বিধাবোধ করেন। কিন্তু বর্তমান যুগে যেখানে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন প্রযুক্তি ও কৌশলগত পরিবর্তন আসছে, সেখানে পুরোনো ধ্যানধারণা নিয়ে টিকে থাকা কঠিন।
যারা উৎসাহ পেয়ে এগিয়ে যান তাদের জন্য চিয়ারলিডার বস ভালো। কিন্তু এই বসরা "কাজ করে শিখুন" প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী। এধরনের কাজ অনেক ক্ষেত্রেই কর্মীদের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করে।
তবে সবসময় লেগে থাকা ব্যবস্থাপকরাও সেরা ব্যবস্থাপক নন। তারা সারক্ষণই কর্মীদের কাজ শিখিয়ে—পড়িয়ে দেন বটে কিন্তু সেটি সবসময় কার্যকর নয়। বস নিজে হয়তো সব বিষয়ে পারদর্শী নন। যেসব বিষয়ে তারা জানেন না, তা দেখিয়ে দিতে ব্যর্থ হলে কর্মীরাও পিছিয়ে পড়ে। অন্যদিকে, সবসময় যে তারা কাজ দেখিয়ে দিতে সাথে থাকবেন এমনটাও হয়ে ওঠে না।
সবদিক বিবেচনায় যোগাযোগ তৈরি করে দেয় এমন বসরাই সেরা। জরিপে অংশ নেওয়া ২৫ শতাংশ ব্যবস্থাপকই এই ধারার হয়ে থাকেন। কর্মীদের ক্যারিয়ার উন্নয়নে এই বসরাই সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখেন।
কানেক্টর বসরা কর্মীদের যে তিন ধরনের সম্পর্ক ও নেটওয়ার্ক স্থাপনে সাহায্য করেন তা হলো:
১। ব্যবস্থাপক-কর্মীর মধ্যকার সম্পর্ক: এই বসরা কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্ন করার মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য, আগ্রহ সম্পর্কে জেনে নেন। কোন কোন জায়গায় তাদের দক্ষতা বাড়ানোর প্রয়োজন সেগুলোও জানার চেষ্টা করেন, যা অন্য ব্যবস্থাপকরা করে না।
২। দলগত যোগাযোগ: বসরা জানেন যে তাদের একাই প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হবে না। দলের ভেতরেই তিনি এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেন যেন সবাই নিজেদের দক্ষতা অনুসারে একে অপরকে সাহায্য করার পাশাপাশি দিক-নির্দেশনা দিতে পারে।
৩। সাংগঠনিক যোগাযোগ: সবচেয়ে ভালো কাজ করা দলগুলো শুধু নিজেদের মধ্যেই নয় প্রতিষ্ঠানের অন্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে কাজ করে। কানেক্টর বসরা একই প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য দক্ষ নেতাদের সঙ্গে কর্মীদের পরিচয় করিয়ে দেন। ফলে নিজ দলের বাইরেও কর্মীরা নেটওয়ার্ক তৈরির পাশাপাশি নতুন সব বিষয় শিখতে পারে।
সূত্র: সিএনবিসি