আফ্রিকার তেল-গ্যাস কি রাশিয়ার বিকল্প হতে পারবে?
২০৩০ সালের মধ্যে রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরতা শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ইউরোপীয় নেতারা। ফলে নাইজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, লিবিয়া এবং আলজেরিয়ার জন্য তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের এই বিশাল বাজার ধরার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব কেপ টাউনের গবেষক কেনেডি চেগের মতে, "ইউরোপের দেশগুলোর জন্য এখন আফ্রিকাই সবচেয়ে বিশ্বস্ত বিকল্প উৎস। আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য বিষয়টি এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছে।"
আফ্রিকা জ্বালানি সমৃদ্ধ হলেও স্থানীয় উৎপাদনকারীদের দ্রুততম সময়ে এই জ্বালানি চাহিদা পূরণের মতো অবকাঠামো নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ডিএলও এনার্জি রিসোর্সেস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিন্ডা মাভেনা ওলাগুনজু বলেন, "সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি হলো অর্থায়ন।" নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নে মনোযোগী বিশ্ব। অন্যদিকে আফ্রিকার হাইড্রোকার্বন জ্বালানির অবকাঠামো নির্মাণে বৈদেশিক বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই বলে মনে করেন লিন্ডা।
এ অবস্থায় মহাদেশের বৃহত্তম তেল উৎপাদক নাইজেরিয়া আফ্রিকান এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের মতো স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিনিয়োগ লাভের চেষ্টা করছে। আফ্রিকার গ্যাসের বৃহত্তম মজুদ নাইজেরিয়ায়। দেশটির পেট্রোলিয়াম সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী টিমিপ্রে সিলভা বলেন, "আমরা আলজেরিয়া হয়ে আমাদের গ্যাস ইউরোপে পৌঁছে দিতে ট্রান্স-সাহারান পাইপলাইন চাই।"
২০০৯ সালে আড়াই হাজার মাইলের ট্রান্স-সাহারান পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে নাইজার ও আলজেরিয়ার মধ্য দিয়ে ইউরোপ জুড়ে পাইপলাইনটি নির্মিত হবে। তবে আলজিয়ার্স এবং নিয়ামির মধ্যকার বিরোধের কারণে মাত্র গত বছর অবকাঠামো নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু হয়।
ইউরোপীয় গ্যাসের ১১ শতাংশের যোগান দেয় আলজেরিয়া। সম্ভবত রপ্তানি বাড়ার সবচেয়ে ভালো সুযোগ আলজেরিয়ার সামনে। মরক্কোর সঙ্গে টানাপোড়েনের কারণে স্পেনের পাইপলাইন বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও গত বছর ইতালিতে আলজেরিয়ার গ্যাস রপ্তানি ৭৬ শতাংশ বেড়ে ২১ বিলিয়ন ঘন মিটারে পৌঁছে। এখনও দেশটি আরও ১০ বিলিয়ন ঘন মিটার গ্যাস রপ্তানি করতে পারে। গত মাসে ইতালি আলজেরিয়া থেকে আমদানি বাড়ানোর ইঙ্গিতও দেয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নও পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় পাইপলাইন স্থাপনে অর্থায়নের ঘোষণা দিয়েছিল, যার ফলে অঞ্চলটির সঙ্গে মিশরের গ্যাসক্ষেত্রের সংযোগ স্থাপিত হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক সমস্যার কারণে জানুয়ারিতে তারা পিছিয়ে যায়।
আফ্রিকার বৃহৎ কিছু জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্রে নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম গ্যাসের মজুদ রয়েছে মোজাম্বিকে। কিন্তু উত্তরের প্রদেশ কাবো ডেলগাডোতে চলমান সশস্ত্র সংঘাতের কারণে ৫০ বিলিয়ন ডলারের গ্যাস প্রকল্প পিছিয়েছে। লিবিয়ার গ্যাস ও তেল ক্ষেত্রগুলো পাইপলাইনে যুক্ত থাকলেও তারা ঘন ঘন অবরোধের শিকার।
আফ্রিকার গ্যাস রাতারাতি রাশিয়ার জ্বালানির জায়গা দখল করে নিবে এমন ভাবনা অবান্তর বলে ফরেন পলিসিকে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন চলতি মাসে রাশিয়ার ওপেক উৎপাদন কোটা চলতি এপ্রিল থেকে দৈনিক ১.৭৩ মিলিয়ন ব্যারেলে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এখনও নির্ধারিত কোটার জ্বালানি উৎপাদনেই দেশটি হিমশিম খাচ্ছে।
"আমাদের এই মুহুর্তে অতিরিক্ত প্রায় ৬০০,০০০ ব্যারেল সরবরাহের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এর জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন," বলেন সিলভা।
তবে আলজেরিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি সংস্থা সোনাট্রাচের প্রধান নির্বাহী তৌফিক হাক্কার মতে, এখন ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা এবং বর্তমান গ্রাহকদের ওপর নজর রেখেই জ্বালানি উৎপাদন হবে।
তবুও আশার কথা এই যে, দীর্ঘমেয়াদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ইউরোপীয় বাজারে আফ্রিকান গ্যাস সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে আফ্রিকান নেতাদের দ্রুত বিনিয়োগ লাভের সুযোগ এনে দিবে।
সূত্র: ফরেন পলিসি।