প্রবাসীরাও পাবেন সর্বজনীন পেনশন সুবিধা
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় মাসিক ও ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দেওয়া যাবে এবং অগ্রিম ও কিস্তিতেও চাঁদা জমা দেওয়ার সুযোগ রেখে আইনের খসড়া তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে এতে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল বাংলাদেশি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। এমনকি বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরাও এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। সরকারি- বেসরকারি কিংবা আধা-সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানও সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।
পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তির পর চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিয়ে মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে এবং চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জিভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেওয়া হবে।
এসব বিধান রেখে 'জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২২'- এর খসড়া তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। খসড়াটি অর্থবিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে আগামী ১২ এপ্রিলের মধ্যে মতামত চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়েছে, একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্যের সমন্বয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠিত হবে। এই কর্তৃপক্ষ পেনশনের সর্বনিম্ন মাসিক চাঁদা নির্ধারণ করবে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশনারগন আজীবন, অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। তবে পেনশনে থাকাকালীন অবস্থায় বয়স ৭৫ বছর হওয়ার আগে মৃত্যুবরণ করলে পেনশনারের নমিনি বাকি সময়কালের (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন পাবেন।
এছাড়া, কেউ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করার আগেই মুত্যুবরণ করলে, জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
পেনশন তহবিলে জমা করা অর্থ কোন পর্যায়েই এককালীন উত্তোলনের সুযোগ থাকবে না। তবে চাঁদাদাতা তার জমা করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০% ঋণ হিসেবে উত্তোলন করতে পারবে, যা ধার্যকৃত ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। ফিসহ পরিশোধ করা পুরো অর্থ চাঁদাদাতার নিজ একাউন্টেই জমা হবে।
পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াত দেবে সরকার। মাসিক পেনশন হিসেবে পেনশনার যে টাকা পাবে, তাও আয়করমুক্ত থাকবে।
নিম্ন আয়সীমার নিচের নাগরিকদের অথবা দুঃস্থ চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে, পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারবে। এ বিষয়ে সরকার সময় সময় প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারবে।
'অন্য আইনে যাই থাকুক না কেন, সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত, সরকারি ও আধা-সরকারি বা স্বয়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার বাইরে থাকবে'- বলা হয়েছে এতে।
তবে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, প্রতিটি চাঁদাদাতার জন্য একটি পৃথক ও স্বতন্ত্র পেনশন হিসাব থাকবে। চাকরিরত চাঁদাদাতারা চাকরি পরিবর্তন করলেও, নতুন কর্মস্থলের বিপরীতে আগের হিসাব স্থানান্তর হবে। নতুন প্রতিষ্ঠানে যোগদান নতুন হিসাব খোলার দরকার হবে না।
মাসিক চাঁদা দিতে দেরি হলে, বিলম্ব ফিসহ বকেয়া চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে পেনশন হিসাব সচল রাখা যাবে। এক্ষেত্রে বিলম্ব ফি হিসেবে দেওয়া অর্থও চাঁদাদাতার নিজ হিসাবে জমা হবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ পেনশন স্কিম গ্রহণ, স্কিমে প্রবেশ যোগ্যতা, স্কিম পরিচালনা, তত্ত্বাবধান ও পেনশন তহবিলের পুঞ্জিভূত জমার বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা করবে এবং চাঁদাদাতাদের জমা দেওয়া অর্থের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
খসড়া আইনে অর্থমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে ১৫ সদস্যের একটি গভর্নিং বোর্ড গঠনের কথা বলা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের রাখার কথা বলা হয়েছে।
গভর্নিং বোর্ড পেনশন তহবিলের অর্থ সরকারি সিকিউরিটি, কম ঝূঁকিপূর্ণ অন্যান্য সিকিউরিটিজ, লাভজনক অবকাঠামোখাতে বিনিয়োগের জন্য নির্ধারিত গাইডলাইন অনুমোদন এবং কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা দেবে।