রাশিয়ার তেলের বড় ক্রেতা ভারতকে আকর্ষণীয় মূল্যছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে মস্কো
পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনে আগ্রাসনের শাস্তি দিতে রাশিয়ার জ্বালানি ক্রয় কমাতে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রেখেছে। পড়তি এ চাহিদার কারণে রাশিয়ার তেলের বড় ক্রেতা- ভারতকে সরাসরি তেল ক্রয়ে বড় মূল্যছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে মস্কো। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের একটি বড় ধরন- ইউরাল গ্রেডের ক্রুড। এই ক্রুডের প্রতিব্যারেলে ভারতকে সর্বোচ্চ ৩৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে নিষেধাজ্ঞা কবলিত মস্কো। যুদ্ধের আগে ইউরাল ক্রুডের দাম ছিল বর্তমানে চেয়ে অনেকটাই কম। আগের ওই দাম থেকেই দেওয়া হবে প্রস্তাবিত মূল্যছাড়। ভারত যাতে আরো বেশি চালান কিনতে আকৃষ্ট হয়, সে উদ্দেশ্যেই মস্কো এমন আকর্ষণীয় প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ইউরাল গ্রেড লাইট ও হেভি ক্রুডের মিশ্রণ। অপরদিকে বিশ্ববাজারে ইউক্রেন যুদ্ধের পর লাইট ক্রুডের বৈশ্বিক সূচক ব্রেন্টের শিরোনাম মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১০ ডলার। সে বিচারে দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির ভারতকে দেওয়া হয়েছে লোভনীয় এক অফার। এত কম দামে পেলে জ্বালানি আমদানিতে নয়াদিল্লির বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখাও সহজ হবে।
সূত্রগুলি জানিয়েছে, রাশিয়া চাইছে চলতি বছরের জন্য ভারত দেড় কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল কিনুক। এজন্য দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনাও চলমান রয়েছে।
এশিয়ার শীর্ষ জ্বালানি আমদানিকারক- ভারত। পশ্চিমা চাপ সত্ত্বেও হাতেগোনা যে কয়টি দেশ- রাশিয়া থেকে তেল আমদানি লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়িয়ে চলেছে ভারত তাদের অন্যতম। ইউরোপ ও আমেরিকা যখন রাশিয়ার তেল-গ্যাস যতোটা পারে বর্জন করছে; তখন এশিয়ায় বেড়েছে সরবরাহের প্রবাহ। চীন ও ভারত কিনছে সবচেয়ে বেশি।
নিজস্ব লেনদেন ব্যবস্থা এসপিএফএস- এর মাধ্যমে রুপি-রুবলে জ্বালানির মূল্য পরিশোধের প্রস্তাবও দিয়েছে রাশিয়া। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলারে মূল্য দিতে হবে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও থাকবে অটুট। একারণে, এই প্রস্তাবটি ভারতের কাছে দ্বিপাক্ষিক জ্বালানি বাণিজ্যকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তবে অজ্ঞাত ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারত সরকার এখনও এবিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) দুই দিনের ভারত সফরে আসছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। তার সঙ্গে বৈঠকে এবিষয়ে আলোচনা করবে ভারত সরকার।
সরাসরি এ ক্রয় প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকবে রাশিয়ার রসনেফট পিজেএসসি এবং ভারতের সবচেয়ে বড় জ্বালানি পরিশোধনাগার সংস্থা- ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন। ইন্ডিয়ান অয়েলের সাথে রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। চুক্তির একটি সুবিধার আওতায় একই মূল্যে অতিরিক্ত দেড় কোটি ব্যারেল তেল কেনার অধিকার সংরক্ষণ করে সংস্থাটি।
চুক্তির আরেকটি শর্তানুসারে, অতিরিক্ত ক্রয় যদি জনস্বার্থে লাভজনক হয়, তবেই করা যাবে। এজন্যই রাশিয়া এ পরিমাণ বিক্রয়ে বড় মূল্যছাড় ও অন্যান্য সুবিধার প্রস্তাব দিয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এতে জাহাজ ভাড়ার চড়া খরচ দিয়েও লাভবান হবে নয়াদিল্লি।
যদিও রাশিয়া যে গ্রেডের ক্রুড বিক্রির প্রস্তাব দিচ্ছে, তার চেয়ে ভালো মানের লাইট ক্রুড পায় মধ্যপ্রাচ্য থেকেই, যার পরিশোধনের প্রক্রিয়া তুলনামূলক সহজ।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক তেল বাজার বিশ্লেষক সংস্থা- ভান্দা ইনসাইটসের প্রতিষ্ঠাতা বন্দনা হরি। "অনেক বছর থেকেই রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনা ছিল সীমিত। দেশটির অনেক পরিশোধনাগারই বিপুল পরিমাণে রাশিয়ার তেল ক্রয়ের পরিকল্পনা মাথায় রেখে নির্মিত হয়নি।"
এবিষয়ে আরো জানতে ইন্ডিয়ান অয়েলের সাথে যোগাযোগ করে ব্লুমবার্গ। কিন্তু, সংস্থাটির প্রতিনিধিরা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
এদিকে রাশিয়া থেকে কম টাকায় বিপুল তেল কেনার সম্ভাবনার খবরে মুম্বাই পুঁজিবাজারে দর বেড়েছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত শোধনাগারগুলোর শেয়ারের। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা নাগাদ হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের বাজারমূল্য বাড়ে ২.৪ শতাংশ, যা এখাতের সার্বিক মূল্যসূচকের দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধির ঘটনা।
এদিকে রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যের ভ্লাদিভোস্তক বন্দরের মাধ্যমে তেল বাণিজ্যের পরিকল্পনাও রয়েছে মস্কো-দিল্লির। ওই বন্দর থেকে ভারতের পূর্ব উপকূলে তেলবাহী ট্যাংকার জাহাজ আসতে ২০ দিনের কম সময় লাগবে।
রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ঘাটতি রয়েছে ভারতের। এ ব্যবধান কমাতে রাশিয়ায় ওষুধ, প্রকৌশল পণ্য ও রাসায়নিক রপ্তানি বাড়াতেও আগ্রহী নয়াদিল্লি।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ