৮০/২০ নীতি অনুসরণ করে হোন দীর্ঘজীবী
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করলে দেখা যাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু অনেক কম। প্রতিনিয়ত মার্কিনিদের মধ্যে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ রোগের হার বাড়ছে।
অন্যদিকে বিশ্বের পাঁচটি অঞ্চলের অধিবাসীদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু অধিক; এমনকি এখানকার কেউ কেউ শতবর্ষও বেঁচে থাকেন। গবেষকেরা তাই এসব অঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন প্রণালী, ফুড কালচার বা খাদ্য সংস্কৃতি ইত্যাদির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন।
এগুলোকে একত্রে ব্লু জোন হিসেবে অভিহিত করা হয়। ব্লু জোন অঞ্চলগুলোর একটি হলো জাপানের ওকিনাওয়া। তাদের স্বাস্থ্যকর খাদ্যচর্চার ভিত্তি হলো, খাওয়ার সময় ৮০/২০ নীতি মেনে চলা।
মনে পড়ে যাচ্ছে, প্রাচীন চীনের প্রখ্যাত দার্শনিক এবং চিন্তাবিদ কনফুসিয়াসের একটি পরিচিত উক্তি- 'হারা হাচি বু', যার অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, পেটের ৮০ শতাংশ পূরণ না হওয়া পর্যন্ত খাও।
আমেরিকান জার্নাল অফ লাইফস্টাইল মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণাও বলছে, ওকিনাওয়ার লোকজন প্রতিবেলায় ততোটুকুই খায়, যতক্ষণ না তাদের পেট ৮০ শতাংশ ভরে ওঠে।
খাবার গ্রহণের এই পদ্ধতিটি আমেরিকানরা যেভাবে খায় তার বিপরীত। হাতের কাছে গড়ে ওঠা ফাস্টফুডের দোকান, মেন্যুতে 'এক্সট্রা লার্জ'-এর অপশন কিংবা কফিশপগুলোর অল্প পয়সায় চিনিযুক্ত পানীয়ের অফার- উদরপূর্তির ব্যবস্থা ভাল মতোই করে রেখেছে মার্কিনীরা।
কিন্তু ওকিনাওয়ার লোকেদের খাবারের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি অনেক আলাদ। দ্য ব্লু জোনসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুসারে, ঐতিহ্যগতভাবে জাপানে খাবার পরিবেশনের সময় লক্ষ্য রাখা হয়, খাবার যেন অসুস্থতা এবং রোগ প্রতিরোধের দাওয়াই হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের কাছে খাবার শুধু পেট ভরানোর মাধ্যম নয়, রোগ উপশমেরও উপায়।
ওকিনাওয়ানরা ধীরে ধীরে খায় যাতে তাদের পাকস্থলী মস্তিষ্কের সাথে যোগাযোগ করার সময় পায়; মস্তিষ্ককে এই সংকেত পাঠাতে পারে যে, এটি পূর্ণ। এর ফলে ওভারইটিং বা অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার প্রবণতা হ্রাস পায়।
তাছাড়া আমেরিকান জার্নাল অফ লাইফস্টাইল মেডিসিনের মতে, ২০ শতাংশের এই ব্যবধান ব্যক্তির ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান গড়ে দিতে পারে।
তাদের খাবার গ্রহণের পরিমাণও দিনভর একই রকম থাকে না।
ব্লু জোনসের প্রতিষ্ঠাতা ড্যান বুয়েটনারের মতে, ওকিনাওয়ার অধিবাসীরা তাদের সবচেয়ে হালকা খাবারটা দুপুরে গ্রহণ করে। ডিনারটা সেরে নেয় আগেভাগেই; এরপর আর কিচ্ছু তাদের পেটে পড়ে না।
শুধু খাবারই নয়, জীবনদর্শনও দীর্ঘ জীবনের অধিকারী এসব মানুষের কাছে খুব গুরুত্ব বহন করে। তাদের কাছে নিজেদের সম্প্রদায়ের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে, জীবনের অর্থ ও উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট, চাপহীন জীবন তাদের পছন্দ এবং পাশাপাশি অন্যের প্রতি তারা যত্নশীল।
- সূত্র- ইট দিস ডট কম