যেসব খাতে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি
ফোর্বস-এর ২০২২ সালের বিশ্বের বিলিয়নিয়ারদের তালিকায় প্রায় ২ হাজার ৬৬৮ জন বিলিয়নিয়ারের নাম এসেছে।
এদের সম্পদের উৎসে দেখা গেছে বৈচিত্র্য। কেউ পোষা প্রাণীর খাবারের ব্যবসায় করে যেমন শতকোটিপতি হয়েছেন, কেউ আবার রিয়াল এস্টেটের ব্যবসায় থেকে এ সম্পদ অর্জন করেছেন।
এদের অনেকেই একেবারে নতুন করে বিলিয়নিয়ার হয়েছেন। কারও আবার আগে থেকেই সম্পদ ছিল।
ফোর্বস নতুন একটি প্রতিবেদনে বিভিন্ন খাত অনুযায়ী এ বিলিয়নিয়ারদের ভাগ করেছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক তালিকাটি।
১. অর্থনীতি ও বিনিয়োগ
বিলিয়নিয়ার: ৩৯৩ জন
তালিকায় হার: ১৫ শতাংশ
ফোর্বস-এর তালিকা অনুযায়ী, অর্থনীতি ও বিনিয়োগ খাত থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ বিলিয়নিয়ার হয়েছেন।
এই খাত থেকে প্রায় ৩৯৩ জন বিলিয়নিয়ার পাওয়া গেছে যারা পুরো তালিকার মোট ১৫ শতাংশ।
২০২১ সালে উল্লেখিত খাতে বিলিয়নিয়ার ছিলেন ৩৭১ জন। অর্থাৎ এ বছর তাদের সংখ্যা বেড়েছে।
এ খাতের সবচেয়ে ধনী লোকটি হচ্ছেন ওয়ারেন বাফেট। বিনিয়োগ খাতের বড় প্রতিষ্ঠান বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তিনি। বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে-এর আরও ৬০টির বেশি কোম্পানিতে স্টেক রয়েছে।
বিশ্বের ৫ম এ ধনী ব্যক্তির বর্তমান সম্পদ ১১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা গত বছরের তুলনায় ২২ বিলিয়ন ডলার বেশি।
বিনিয়োগের এ খাতে আরেক বিলিয়নিয়ার শ্যাংপ্যাং জাও ওরফে সিজে। ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ বাইন্যান্স-এর প্রতিষ্ঠাতা এ ধনীর মোট সম্পদের পরিমাণ গত বছরের ১.৯ বিলিয়ন ডলার থেকে এ বছর ৬৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
২. ম্যানুফ্যাকচারিং
বিলিয়নিয়ার: ৩৩৭
তালিকায় হার: ১৩ শতাংশ
বিলিয়নিয়ারদের খাত হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে আছে ম্যানুফ্যাাচারিং। করোনাভাইরাসের পর সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ে। এছাড়া একাধিক বড় কার্গো জাহাজ ডুবে যায়।
তারপরও অর্থনীতি ও বিনিয়োগের পর উৎপাদন খাতেই সবচেয়ে বেশি বিলিয়নিয়ার রয়েছেন। এ খাতে মোট বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ৩৩৭ জন।
এ খাতের সবচেয়ে বেশি ধনী হি শিয়ানজিয়াং। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২৮.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি অ্যাপ্লায়েন্স প্রস্তুতকারী কোম্পানি মাইডিয়া গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা।
২০২২ সালের তালিকায় এ খাতে গতবছরের চেয়ে ৩৬ জন বেশি বিলিয়নিয়ার যুক্ত হয়েছেন।
এ খাতের বিলিয়নিয়ারদের শিল্পগুলোর মধ্যে আছে প্যাকেজিং ফার্ম, কাচ কারখানা ইত্যাদি।
৩. প্রযুক্তি
বিলিয়নিয়ার: ৩৩২
তালিকায় হার: ১২ শতাংশ
এ খাতে মোট ৩৩২ জন বিলিয়নিয়ার পাওয়া গেছে।
ইন্টারনেটের প্রাথমিক যুগে যেসব ব্যক্তি সম্পদ তৈরি করতে পেরেছিলেন, তারাই এখনো এ খাতটিতে শীর্ষধনী হিসেবে আছেন।
এ খাতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হচ্ছেন জেফ বেজোস। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজন-এর প্রতিষ্ঠাতা এ ধনকুবেরের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
জেফ বেজোস বিখ্যাত সংবাদপত্র দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ও রকেট কোম্পানি ব্লু অরিজিনাল-এর মালিক।
৪. ফ্যাশন ও রিটেইল
বিলিয়নিয়ার: ২৫০
তালিকায় হার: ৯ শতাংশ
এ খাতের বিলিয়নিয়ারদের সম্পদের উৎস বিলাসবহুল পণ্যের ব্র্যান্ড, খেলাধুলার সামগ্রী তৈরি প্রতিষ্ঠান, গ্রোসারি (মুদি) চেইন ইত্যাদি।
এ খাতের ধনীর তালিকায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন বার্নার্ড আর্নল্ট। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বার্নল্ট হেনেসি, লুইস ভুইটন, টিফানি অ্যান্ড কো., ও সেফোরা'র মতো বিখ্যাত কোম্পানিগুলোর মূল প্রতিষ্ঠান এলভিএমএইচ-এর প্রধান।
এ খাতে আরও আছেন ভারতীয় বিলিয়নিয়ার ফাল্গুনি নায়ার। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৫. স্বাস্থ্যখাত
বিলিয়নিয়ার: ২১৭
তালিকায় হার: ৮ শতাংশ
পঞ্চম স্থানে থাকা খাতটি স্বাস্থ্যখাত। এ খাতের নতুন ধনীদের মধ্যে প্রথমদিকে আছেন জোফ ট্যাংগনি। ডাক্তারদের সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ডক্সিমিটি'র প্রতিষ্ঠাতা এ ধনীর মোট সম্পদের পরিমাণ ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তবে এ খাতের শীর্ষধনী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট-এর প্রতিষ্ঠাতা সাইরাস পুনাওয়ালা। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২৪.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ভারতের দিলিপ ও আনন্দ সুরানা ভ্রাতৃদ্বয়ও এ খাতের বিলিয়নিয়ারদের তালিকায় আছেন। তাদের ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মাইক্রো ল্যাবস এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঔষধ সরবরাহ করে।
৬. খাদ্য ও পানীয়
বিলিয়নিয়ার: ২০৩
তালিকায় হার: ৮ শতাংশ
এ খাতের সবচেয়ে বেশি ধনী জং শ্যানশ্যান নংফু স্প্রিং নামের বোতলজাত পানি প্রস্তুতকারক কোম্পানির মালিক। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৬৫.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৭. রিয়েল এস্টেট
বিলিয়নিয়ার: ১৯৩
তালিকায় হার: ৭ শতাংশ
প্রোপার্টি ডেভেলপার কোম্পানি সান হাং-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা লি শাউ কি এ খাতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। মোট সম্পদের পরিমাণ ৩২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৮. বিবিধ খাত
বিলিয়নিয়ার: ১৮০
তালিকায় হার: ৭ শতাংশ
৯০.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে এ খাতের সবচেয়ে ধনী ভারতের রিলায়েন্স গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি।
৯. মিডিয়া ও বিনোদন
বিলিয়নিয়ার: ১০৯
তালিকায় হার: ৪ শতাংশ
ব্লুমবার্গ এলপি-এর প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ব্লুমবার্গ-এর মোট সম্পদের পরিমাণ ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
১০. এনার্জি
বিলিয়নিয়ার: ৯৫
তালিকায় হার: ৪ শতাংশ
পলিয়েস্টার ও টেক্সটাইল পণ্য তৈরি করা কোম্পানি হেঞ্জি পেট্রোকেমিক্যাল-এর প্রধান ফ্যান হংউই ১৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে এ খাতে শীর্ষ ধনী হয়েছেন।
- সূত্র: ফোর্বস