যেভাবে কক্সবাজারের অতি দরিদ্ররা ক্ষুদে উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন
কক্সবাজার টেকনাফ উপজেলার মাঝেরপাড়ার দিলদার বেগম তিন সন্তানের মা। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে সন্তানদের খাওয়া-পড়ানোর চাপ যখন তার উপর পড়ে তখন টের পেতে থাকেন অভাবের কষ্ট।
ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন এ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড, অস্ট্রেলিয়া এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন অস্ট্রেলিয়ার সহযোগীতায় পরিচালিত জেনশার-ইনক্লুসিভ পাথওয়েজ আউট অব পোভার্টি (জিপিওপি) প্রকল্পের আওতায় তার অবস্থার পরিবর্তন এসেছে।
এ প্রকল্পের আওতায় মুরগি ও ছাগল পালন শুরু করেন দিলদার, এসেছে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা।
শুরু করেছিলেন ৯টি মুরগি ও দুটি ছাগল পালনের মধ্য দিয়ে। তার ছোট্ট খামাড়ে এখন ৬০টি মুরগি ও ১১টি ছাগল রয়েছে। পাশাপাশি এলাকার যে কারও ছাগল বা মুরগিতে ভ্যাকসিন দেওয়ার দরকার হলেই ডাক পড়ে দিলদার বেগমের। নির্দিষ্ট ফি নিয়ে ভ্যাকসিন দিয়ে দেন তিনি। এখান থেকেও একটা ভালো আয় হয় তার।
"এখন আমাকে সন্তানের খাওয়া পড়া নিয়ে চিন্তা করতে হয় না", বলেন তিনি।
দিলদার বেগমের মত টেকনাফ ও উখিয়ার ২৮৮০ জন অতি দরিদ্র মানুষকে ছাগল-মুরগি পালন, বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষ বা ছোট ছোট দোকান করতে সাহায্য করেছে এ প্রকল্প। এই চারটির মধ্য থেকে প্রত্যেকে দুটি করে জিনিস নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী নিতে পারতো। যারা এর সুবিধাভোগী হয়েছিল তারা প্রত্যেকেই ছিল অতি দরিদ্র। যাদের মাসিক আয় ৫ হাজার টাকার নিচে।
এর মাধ্যমে নিয়মিত আয়ের পাশাপাশি তারা এখন দুর্যোগকালীন সময়ের মোকাবেলায় সঞ্চয়ও করছেন।
২০১৯ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্প মাধ্যমে অতি দরিদ্র মানুষদের আয় বৃদ্ধি, খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, দুর্যোগকালীন সময়ে টিকে থাকার জন্য টাকা জমানো এবং লিঙ্গ সমতা নিয়ে কাজ করছে।
২০১৭ সালে যখন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে কক্সবাজারে আশ্রয় নিতে থাকে তখন তারা স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন দৈনিক কায়িক পরিশ্রমের কাজগুলো শুরু করে। এতে করে স্থানীয় দরিদ্র মানুষদের কাজের সংকট দেখা যায়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে অতি দরিদ্র মানুষদের জন্য এই প্রকল্পটি হাতে নেয় ওয়ার্ল্ডভিশন।
জিপিওপি প্রকল্পের প্রজেক্টের মিডটার্ম ইভাল্যুয়েশনে ১৪৪০ জনের উপর পরিচালিত গ্রাজুয়েশন জরিপে দেখা গেছে, পরিবারগুলোর মধ্যে অতি দরিদ্র ক্যাটাগরি থেকে ১৩টি শর্ত পূরণ করে গ্রাজ্যুয়েট অর্থাৎ অতিদরিদ্র অবস্থা থেকে উত্তরণ হয়েছে শতকরা ৭২ ভাগের। তবে এর মধ্যে ১০ টি শর্ত পূরণ করতে পেরেছে শতভাগ পরিবার। প্রতিটি পরিবারের রয়েছে ব্যাংক একাউন্ট এবং সবাই নির্দিষ্ট পরিমাণে সঞ্চয় করছে।
এছাড়া শতভাগ পরিবারের রয়েছে দুটি করে আয়ের উৎস। ৯৮ শতাংশেরই রয়েছে আয় বর্ধনের প্রডাকটিভ অ্যাসেট। ৯৭ শতাংশ পরিবার এখন তিনবেলা খেতে পারে, শতভাগ মানুষ সেভিংস করছে, ৯৬ শতাংশ পরিবারে কোন প্রকার স্কুল ড্রপআউট শিশু নেই।
অনেকটা সমবায়ের ভিত্তিতে নারীরা এলাকাভিত্তিক ১৮-২৫ জন করে একেকটি গ্রুপ তৈরি করেছে। এই গ্রুপগুলো নিজেরা নিজেরা টাকা জমা করে। এর জন্য প্রতি সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে সবাই জমার টাকা প্রদান করে। এবং একটি গ্রুপ গিয়ে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে আসেন।
দুটি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।
জিইওপি প্রকল্পের পিডি ইউসুফ আলী টিবিএসকে বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধাভোগী পরিবারগুলো একটি স্থায়ী আয়ের পথ তৈরি করতে পেরেছে, যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহযোগীতা করছে।