"আমরা চাই খেলার মাঠ থাকুক, সবাই চায়"
'সবাই খেলার মাঠ চায়, থানা নয়', তেঁতুলতলা মাঠ সংলগ্ন এলাকার এক শিশুর কথা এটি।
কলাবাগান থানা ভবন নির্মাণের জন্য গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তেঁতুলতলা মাঠের পরিবর্তে অন্য কোনো স্থান বেছে নেওয়ার নির্দেশনা দিলেও আজ সকালেও সেখানে নির্মাণ কাজ চলতে দেখা যায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ডের অধীন তেঁতুলতলা মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের খেলার মাঠ হিসেবে এবং জানাজার মতো অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এরপর, ২০২০ সালে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে সেখানে থানার জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে কলাবাগান পুলিশ। বাসিন্দারা অবিলম্বে সেই পদক্ষেপের প্রতিবাদ করে, সাইনবোর্ড অপসারণ করে এবং আগের মতো জায়গাটি ব্যবহার করতে থাকে।
দীর্ঘদিনের চালিয়ে আসা প্রতিবাদের অংশ হিসেবে রোববার (২৪ এপ্রিল) সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটে ফেসবুকে এক মিনিট ৩২ সেকেন্ডের জন্য লাইভে তেঁতুলতলা মাঠের পরিস্থিতি সম্প্রচার করেন এলাকার বাসিন্দা সৈয়দা রত্না। রত্না 'তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা'র অন্যতম আন্দোলনকারী।
একপর্যায়ে সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে, ১৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ ঈসা আবদুল্লাহকে আটক করে পুলিশ। মা-ছেলেকে দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা জেলহাজতে আটকে রাখার পর মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বিশেষত ফেসবুকে এ দুজনের আটকের ঘটনা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক আব্দুল্লাহকে প্রাপ্তবয়স্কদের হাজতে আটক রাখা নিয়ে সর্বত্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠে।
ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে কলাবাগান থানা ভবনের জন্য তেঁতুলতলা মাঠের পরিবর্তে বিকল্প জায়গা খোঁজার নির্দেশনা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তবে এখনো মাঠটিতে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়নি।
লেকসার্কাস বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী আয়েশা সিদ্দিকী বলেন, "আমরা এখানে প্রতিদিন বিকেলে খেলাধুলা করি। এখানে থানা নির্মাণ করা হলে আমাদের রাস্তার মধ্যে খেলতে হবে। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। পুলিশ বলছে এখানে কেউ খেলার মাঠ চায় না কিন্তু ঘটনা উল্টো। আমরা চাই খেলার মাঠ থাকুক, সবাই চায়।"
"রত্না আন্টিও এখানে প্রতিবাদ করতে আসতে পারছেন না কারণ তিনি 'সরকারি কাজে বাধা না দেওয়ার' বন্ডে স্বাক্ষর করেছেন। তবে এখন ১২টি সংগঠন আমাদের মাঠ রক্ষায় প্রতিবাদ করছে", যোগ করেন আয়েশা।
এলাকার আরেক বাসিন্দা জারিফ হাসান বলেন, "আমি টিভিতে দেখেছি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অন্যত্র থানা নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং যদি আর কোনো স্থান পাওয়া না যায় তাহলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবু পুলিশ তাদের নির্মাণ কাজ বন্ধ করেনি।"
খেদের সুরে জারিফ বলেন, "রাতের আঁধারে ওরা [পুলিশ] আমার দাদার দোকানও ভাংচুর করেছে। এখন এই বুড়ো বয়সে আমার দাদা কী করবে?"
রায়হান নামে এক তরুণ বলে ওঠেন, "ছোটবেলা থেকেই আমরা এই মাঠে খেলছি। এখানে অনেক ফুটবল, ক্রিকেট এবং ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট হয়। এছাড়াও এখানে ঈদের জামাতের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে। তাই এখানে থানা স্থাপন করা হলে অনেক সমস্যা হবে।"
সৈয়দা রত্না বলেছেন, "গতকাল ছেলেসহ আমাকে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু আমার এ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। মাঠটি ফিরে পেলেই আমি সবকিছু ভুলে যাব।"
মঙ্গলবার রত্না জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনার ফলে তিনি এখনও মাঠটি ফিরে পাবার আশা করছেন।
সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, "আমরা মনে করি খেলার মাঠে বাচ্চারা খেলাধুলা করবে, এটিই স্বাভাবিক। খেলার মাঠ যেন থাকে, সে জন্য আমরা মনে করি খেলার মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। মেয়রকে বলেছি, সবাইকে বলেছি বিকল্প একটি খোঁজার জন্য। যদি না হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও এটা অতীব জরুরি। এটা আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিব, কী করা যায়।"
এলাকার আরেক বাসিন্দা পারুল বেগম বলেন, "আমরা এখনও আশা করছি খেলার মাঠটি রক্ষা পাবে এবং আমাদের শিশুরা আবারও এখানে খেলতে পারবে। আমরা অনেকেই এ মাঠে মর্নিং ওয়াক করতে যাই, তাই শেষ পর্যন্ত কী হবে তা নিয়ে আমরা চিন্তিত।"