রণকৌশল বদলেছে রাশিয়া, ইউক্রেনের পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলে দখল বাড়ছে
রাশিয়া তাদের আক্রমণ জোরালো করায় পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ একটি জটিল পর্যায়ে প্রবেশ করছে বলে মনে হচ্ছে।
বুধবার, ইউক্রেনের দীর্ঘ ফ্রন্ট লাইনে থাকা সামরিক বাহিনী জানিয়েছে যে, ইতোমধ্যে তারা দুটি অঞ্চলে আধিপত্য হারিয়েছে। এটি মূলত নতুন করে রাশিয়ান বাহিনী মোতায়েনেরই লক্ষণ। এছাড়া, তারা নিজেদের রণকৌশলে পরিবর্তন এনেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী আরও জানিয়েছে, রাশিয়ান শহর বেলগোরোড থেকে ৭৬তম এয়ারবর্ন অ্যাসল্ট ডিভিশনের আরও দুটি ব্যাটালিয়ন ট্যাকটিকাল দলকে ইউক্রেনের ইজিয়াম এলাকায় স্থানান্তর করেছে রাশিয়া। সেইসাথে, যুক্ত করেছে নতুন ক্রুজ মিসাইল ইউনিট।
ক্রেমলিনের বর্তমান লক্ষ্য হচ্ছে, লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ক অঞ্চলের পুরোটা দখলে নেওয়া। এছাড়া, ইউক্রেনীয় উপকূল বরাবর ক্রিমিয়ার সাথে রাশিয়ার ভূখণ্ডকে যুক্ত করার জন্য একটি স্থায়ী স্থল করিডোরের দিকেও নজর রয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর।
দোনেৎস্ক অঞ্চলে রাশিয়ানরা প্রধানত স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামতোর্স্কের দখল নেওয়ার চেষ্টায় আছে। ২০১৪ সালে স্বল্প সময়ের জন্য এই দুটি শহরই রাশিয়ান-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে ছিল।
রাশিয়ানদের বর্তমান কৌশল বিবেচনায় দেখা গেছে, উল্লেখিত শহরগুলোতে তিন দিক থেকে আক্রমণ চালাচ্ছে তারা। ধারণা করা হচ্ছে অ্যাডভান্স ইউনিটগুলো সম্ভবত স্লোভিয়ানস্কের ১০ মাইলের মধ্যে রয়েছে।
এদিকে, সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইউক্রেনে আক্রমণ ত্বরান্বিত হওয়ার আভাস দেয়। বুধবার তারা আরও দাবি করে, গত ২৪ ঘণ্টায়, অর্থাৎ মঙ্গলবার ৫০টি ইউক্রেনীয় স্থাপনাতে আঘাত হেনেছে রাশিয়ান যুদ্ধ বিমান।
ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার (আইএসডব্লিউ) এর মতে, রাশিয়ার রণকৌশল আরও উন্নত হচ্ছে।
"রাশিয়ান সৈন্যরা একে অপরের নিকটবর্তী দূরত্বে থেকে মধ্যে একাধিক অংশে একযোগে আক্রমণ চালাচ্ছে। এতে করে পূর্ববর্তী রণকৌশলের চেয়ে বেশি শক্তিতে আক্রমণ করতে পারছে তারা," বলে আইএসডব্লিউ।
আইএসডব্লিউ-র গবেষণা থেকে আরও জানা গেছে, ডনবাস অঞ্চলের উত্তরে ইউক্রেনীয়দের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান না থাকা রাশিয়ানদের অগ্রগতির আরেকটি কারণ হতে পারে।
ইউক্রেনের দক্ষিণে রাশিয়ান সামরিক অভিযানের গতি বাড়ানোর প্রভাবে দেশটির জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের গ্রামে সম্প্রতি ভারী গোলাবর্ষণ হতে দেখা গেছে। এছাড়া, ইউক্রেনের ক্রাইভি রিহ শহরটি এখন রাশিয়ানদের রাডারে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সাউদার্ন কমান্ড বুধবার জানিয়েছে, রাশিয়ান ইউনিটগুলো তাদের কৌশলগত অবস্থানের উন্নতির সাথে সাথে পুনর্গঠিত হচ্ছে; সেইসাথে বিমান অনুসন্ধানও চালাচ্ছে তারা। এছাড়া, মাইকোলাইভের উত্তরে একটি বিশাল এলাকায় প্রচণ্ড লড়াই চলছে বলে এক ভিডিওতে মন্তব্য করেন এক ইউক্রেনীয় সৈন্য।
গত দুই দিনে, ওডেসা এবং দেশটির বাকি অংশের সাথে সংযোগকারী একমাত্র সেতুতে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর, দক্ষিণ-পশ্চিম ইউক্রেনের পূর্বে একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চলও এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবেশী মলদোভার একটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চল ট্রান্সনিস্ট্রিয়াতে প্রায় দেড় হাজার রুশ সৈন্যের উপস্থিতির কারণে উল্লেখিত অঞ্চলটি বর্তমানে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
ট্রান্সনিস্ট্রিয়ায় দুটি অব্যক্ত নাশকতামূলক হামলার পর সেতুটি ধ্বংস করা হয়।
এদিকে গত সপ্তাহে একজন শীর্ষ রুশ জেনারেল বলেন, রাশিয়া তাদের আক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায়ে দক্ষিণ ইউক্রেনের উপর 'সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ' প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এর জন্য তারা নিজেদের বাহিনীকে ট্রান্সনিস্ট্রিয়াতে অ্যাক্সেস দিবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সামগ্রিক চিত্র দেখে মনে হচ্ছে, কিয়েভকে নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে এসে রাশিয়ান বাহিনী তাদের পূর্ব ইউক্রেন থেকে দক্ষিণে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে এগিয়ে যাচ্ছে।
একই সময়ে, তারা এই ফ্রন্ট লাইনের আশেপাশের অবকাঠামোতেও আঘাত হানছে। এরমধ্যে রয়েছে পশ্চিম ইউক্রেনের রেলওয়ে পাওয়ার নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে সারা দেশে জ্বালানি এবং অস্ত্রের মজুদ।
এদিকে, বুধবার সেন্ট পিটার্সবার্গে রাশিয়ান আইন প্রণেতাদের সাথে আলাপকালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনকে সাহায্যকারী দেশগুলোকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করেন।
পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কোনো দেশ যদি ইউক্রেন যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করে তাহলে তাদেরকে কঠোর জবাবের মুখোমুখি হতে হবে।
"আমাদের কাছে এমন সমস্ত সরঞ্জাম রয়েছে যা নিয়ে আদতে কেউ গর্ব করেনা। প্রয়োজনে আমরা সেগুলো ব্যবহার করব", তিনি বলেন।
"কেউ যদি বাইরে থেকে ইউক্রেনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে ও রাশিয়ার জন্য কৌশলগত হুমকি সৃষ্টি করে, তাহলে আমরা তড়িৎ গতিতে এর জবাব দিবো," বলছিলেন তিনি।
এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্রের কথাই বলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
- সূত্র- সিএনএন, বিবিসি