নিষেধাজ্ঞা থেকে বাঁচতে দুবাইয়ে পাড়ি জমাচ্ছে ধনী রাশিয়ানরা
ইউক্রেন যুদ্ধে আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব থেকে বাঁচতে ধনী রাশিয়ানদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে দুবাই।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাশিয়ার ধনকুবের ও উদ্যোক্তাদের ঢল নামার কথা বিবিসিকে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর আরব আমিরাত রাশিয়ার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। এমনকি রাশিয়ার সমালোচনাও করেনি তারা।
পশ্চিমা বহু দেশ রাশিয়ানদের চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা আরোপ করলেও দুবাই তাদের ভিসা প্রদান করছে।
২০২২ সালের প্রথম তিন মাসে দুবাইয়ে রাশিয়ানদের সম্পত্তি কেনার হার ৬৭ শতাংশ বেড়েছে।
সঠিক পরিসংখ্যান না মিললেও ধারণা অনুযায়ী গত দুই মাসে কয়েক হাজার মানুষ রাশিয়া ছেড়েছে।
রাশিয়ার একজন অর্থনীতিবিদ জানান, যুদ্ধ শুরুর প্রথম ১০ দিনে প্রায় দুই লাখ রাশিয়ান দেশ ছাড়ে।
দুবাইয়ে ব্যবসা স্থাপনে সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠান ভার্চুজোনও সাম্প্রতিক সময়ে প্রচুর রাশিয়ান গ্রাহক পায়।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী জর্জ হোজেইজ বলেন, "যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আমাদের কাছে আগের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি রাশিয়ান তথ্য জানতে আসছে।"
তিনি আরও বলেন, "তারা আসন্ন অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে চিন্তিত। আর তাই নিজেদের সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে তারা এখানে আসছেন।"
রাশিয়ার নাগরিকদের আগমনে দুবাইজুড়ে বিলাসবহুল ভিলা ও অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা বেড়েছে। দুবাইয়ে হঠাৎ রাশিয়ানদের বাড়ি কেনা বেড়ে যাওয়ার আবাসন ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার কথা জানান।
দুবাই-ভিত্তিক রিয়েল এস্টেট এজেন্সি বেটারহোমসের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালের প্রথম তিন মাসে দুবাইয়ে রাশিয়ানদের সম্পদ কেনার পরিমাণ দুই-তৃতীয়াংশ বেড়েছে।
আরেক রিয়েল এস্টেট সংস্থা মডার্ন লিভিং বিবিসিকে জানায়, ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে অনেক সংস্থাই রুশভাষী এজেন্ট নিয়োগ করছে। প্রধান নির্বাহী থিয়াগো ক্যালডাস জানান, অবিলম্বে দুবাইয়ে স্থানান্তরিত হতে ইচ্ছুক রাশিয়ানদের কাছ থেকে তারা প্রচুর কল পাচ্ছেন।
"যে রাশিয়ানরা আসছে তারা শুধু বিনিয়োগের জন্য প্রোপার্টি কিনছে না, একইসঙ্গে দুবাইকে দ্বিতীয় বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা করছে," বলেন তিনি।
মেধা পাচার
অসংখ্য বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও রাশিয়ান স্টার্ট-আপগুলো তাদের কর্মীদের সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থানান্তরিত করছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনে অফিস থাকা ব্লকচেইন টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান উইওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফুয়াদ ফাতুল্লেভ ও তার সহযোগীরা কয়েকশ কর্মীকে দুবাইয়ে স্থানান্তর করেন।
"যুদ্ধ আমাদের কর্মকাণ্ডে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। আমরা চালাতে পারছিলাম না বলেই কয়েকশ মানুষকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার বাইরে সরাতে হয়েছে," বলেছেন রাশিয়ান নাগরিক ফুয়াদ।
তিনি আরও বলেন, আরব আমিরাত নিরাপদ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের নিশ্চয়তা প্রদান করায় এখানে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
"নিষেধাজ্ঞার কারণে কাজ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাওয়ায় রাশিয়ানরা ব্যবসা বাইরে সরিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক গ্রাহক ও ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কেননা অধিকাংশ পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান রাশিয়া-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে," বলেন তিনি।
গোল্ডম্যান স্যাকস, জেপি মরগান ও গুগলের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও রাশিয়ার অফিস বন্ধ করে দিয়ে কিছু কর্মচারীকে দুবাইতে স্থানান্তরিত করছে।
"এখানে নিশ্চিতভাবেই মেধা পাচার হচ্ছে। রাশিয়ায় অনেক বেশি ব্যবসায়িক বিধিনিষেধ থাকায় বহুলোক দেশ ছাড়ছে," বলেন ফুয়াদ।
- সূত্র: বিবিসি